তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা

আন্দোলনের তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ড. ইউনূস

| বৃহস্পতিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজনকে বিশ্বমঞ্চে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারা হলেনমাহফুজ আলম, সুচিস্মিতা তিথি ও নাইম আলী। তাদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে গণঅভ্যুত্থানের পেছনের কারিগর বলেও এ সময় বিশেষভাবে পরিচয় করিয়ে দেন। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষ দিকে আন্দোলনের এই তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দেন ড. ইউনূস। খবর বাংলানিউজের।

ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস’ স্টেজে ড. ইউনূস বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের নানা বিষয়ে কথা বলেন। কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকার ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, ছাত্ররাও গুলির সামনে কীভাবে বুক পেতে দাঁড়িয়েছে, সে কথাও বলেন তিনি। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় ড. ইউনূস আগতদের জানান, এখানে ছাত্র আন্দোলনের তিনজন প্রতিনিধি রয়েছেন।

. ইউনূস বলেন, তারা যেভাবে কথা বলে, এরকম কথা আমি কখনো শুনিনি। তারা নতুন পৃথিবী, নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রস্তুত। প্লিজ আপনারা তাদের হেল্প করবেন। যেন তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। এ গুরুদায়িত্ব আমাদের সবার নিতে হবে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের হাত ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনি আমাদের সঙ্গে আছেন এ স্বপ্নপূরণে।

তিনি আরও বলেন, তাদের দেখতে অন্য তরুণদের মতো মনে হলেও আপনি যখন তাদের কাজ দেখবেন, বক্তব্য শুনবেন, আপনিও অবাক হবেন। তারা সারা দেশ নাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু তারা তাদের বক্তব্য, ত্যাগ কিংবা প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে যায়নি। তাদের বক্তব্য ছিল, আপনারা চাইলে আমাদের হত্যা করতে পারেন, কিন্তু আমরা পথ ছেড়ে যাব না। এ সময় মাহফুজকে সামনে এগিয়ে দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পেছনের কারিগর মাহফুজ। যদিও মাহফুজ সব সময় বলে, সে নয় আরও অনেকে আছেন। যদিও সে গণঅভ্যুত্থানের পেছনের কারিগর হিসেবে পরিচিত।

কোটা সংস্কারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে স্বৈরশাসকের পতনের আন্দোলন সম্পর্কে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটা হঠাৎ করে হয়েছে এমন কিছু নয়। খুবই গোছানো আন্দোলন। এ ছাড়া এত বড় আন্দোলন হয়েছে মানুষ জানতো না কে আন্দোলনের লিডার! ফলে একজনকে আটক করাও যেত না। বলাও যেত না, একজনকে আটক করলে আন্দোলন শেষ। এ সময় মাহফুজকে দেখিয়ে ড. ইউনূস বলেন, তার কথা শুনলে সারা পৃথিবীর যেকোনো তরুণ অনুপ্রাণিত হবে। তারা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবে। তাদের সফলতার জন্য আপনারা প্রার্থনা করবেন। তাদের জন্য হাততালি হোক। এ সময় বিল ক্লিনটনসহ সবাই হাততালি দিয়ে সম্মান জানান।

এদিকে নিউইয়র্ক সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা করেন। এসময় তিনি বলেন, যুবসমাজের জীবন উৎসর্গ এবং অদম্য নেতৃত্বের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে। একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা জীবন দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তরুণদের আত্মত্যাগ আমাদের সামনে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমরা এ সুযোগ হারাতে চাই না। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। এটি বাস্তবায়নে আপনাদের সবার সমর্থন প্রয়োজন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার ৫০তম বছর উদযাপন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে।

সংবর্ধনা আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আরও ছিলেনপররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা যে সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে, তা আমাদেরকে অভিভূত করেছে। বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে তারা পঙ্গুত্ব বরণ করতে পিছপা হয়নি। তিনি বলেন, তরুণদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়তে আমরা আপনাদের পাশে চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুরনো পাইপ লাইনে ওয়াসার পানি সরবরাহে বিপত্তি
পরবর্তী নিবন্ধভোটার তালিকা প্রস্তুত হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা