তরুণদের কাছে ‘ছি নামা’ নয়, সিনেমা চাই

লিবারেশন ডক ফেস্টের সমাপনীতে আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদী সম্পাদক একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংবাদ ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেছেন, জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা-দুর্ঘটনাগুলো আমরা বলতে পারি না, কিন্তু ফিল্ম সেই জিনিসটা পারে। আমাদের জীবনের গল্পগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এর চেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম আর হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামেই প্রথম প্রামাণ্য চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তিনদিনব্যাপী লিবারেশন ডকফেস্টে চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শনার্থীদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতির কারণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ আগামী বছরও চট্টগ্রামে লিবারেশন ডকফেস্ট আয়োজনের চিন্তাভাবনা করছে। এর মাধ্যমে আমাদের চট্টগ্রামের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাগণ উৎসাহী হবেন। খারাপ সিনেমাকে ‘ছি নামা’ উল্লেখ করে এম এ মালেক বলেন, তরুণদের কাছে আমরা ‘ছি নামা’ নয়, ‘সিনেমা’ চাই। গতকাল শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের যৌথ উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী মুক্তি ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ‘লিবারেশন ডকফেস্ট চট্টগ্রাম-২০২২’ নামে গত বৃহস্পতিবার এই উৎসবের উদ্বোধন হয়।
এম এ মালেক বলেন, বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ। সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। তিনি আমাদের একটি লাল সবুজ পতাকা দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, একুশ আমার অহংকার। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশের প্রথম কবিতা কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ছাপিয়েছিলেন আমার বাবা। তিনিই আমাকে মাথা নত না করতে শিখিয়েছেন। একুশে পদক প্রাপ্তি আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন, কারণ আমার মৃত্যুর পর লাল সবুজ পতাকাটি আমার কফিনের ওপর শোভা পাবে- এক জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? তিনি বলেন, প্রাপ্তির আশায় কখনো কোনো কিছু করিনি। সবসময় মনে করি যেটা করছি, সেটা ভালোভাবেই করবো। চেষ্টা করেছি সবসময় মানুষের পাশে থাকার। বাবা আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন আজাদী। শিশু কাগজটিকে দাঁড় করানো ছিল মূল চ্যালেঞ্জ। সাধারণের কাগজ আজাদীকে চট্টগ্রামের মুখপত্র করতে পেরেছি এটাই সার্থকতা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন থিয়েটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, উৎসব প্রোগ্রামার শরিফুল ইসলাম শাওন, উৎসব পরিচালক তারেক আহমেদ বুলবুল, লিবারেশন ডকফেস্ট চট্টগ্রামের কো-অর্ডিনেটর রফিকুল আনোয়ার রাসেল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। তারেক আহমেদ বুলবুল বলেন, সংস্কৃতি চর্চাটা আমরা শুধু ঢাকায় আবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিতে চাই। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে এ আয়োজন। আয়োজনের মূল প্রাপ্তিটাও তাই তারুণ্যের স্বতস্ফূর্ততা। তাদের এই স্বতস্ফূর্ততা বাঁচিয়ে রাখতে পারে আমাদের সংস্কৃতি চর্চাটাকে। আমরা প্রতিবছর নতুন নতুন মুখ দেখতে চাই। সমাপনী বক্তব্যে থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের পরিচালক আহমেদ ইকবাল হায়দার সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এর পাশাপাশি তিনদিনের ‘এক্সপোজিশন অফ ইয়াং ফিল্ম ট্যালেন্ট চট্টগ্রাম-২০২২’ ওয়ার্কশপের শেষ দিন ছিল গতকাল। অনুষ্ঠানে ওয়ার্কশপ থেকে বাছাইকৃত সেরা তিনটি প্রজেক্টকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রজেক্ট তিনটি হল সাখাওয়াত হোসেনের ‘আন্ডা স্টোরি’, ইরফানুল হকের ‘মনন থেকে বুনন’ এবং জান্নাতুল ফেরদৌস নীলার ‘দিব্যধাম’। তিনদিনের এই আয়োজনের সাথে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় আয়োজিত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় অনুষ্ঠানে।
তিনদিনের এই উৎসবে ১২টি দেশের মুক্তি ও মানবাধিকার বিষয়ক ২০টি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। সমাপনী দিনে দিলারা বেগম জলি পরিচালিত ‘জঠরলীনা’ এবং আসমা বীথি পরিচালিত ‘গিত্তাল মি আচ্ছিয়া’ প্রামাণ্যচিত্র দুটি প্রদর্শিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমধুভাত খেয়ে অসুস্থ ১০ হাসপাতালে ভর্তি
পরবর্তী নিবন্ধআজ বিশ্ব খাদ্য দিবস