তবু জনগণ সুখবরের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছে

| শুক্রবার , ৩ জুন, ২০২২ at ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে অস্থিরতা যেন কমছেই না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস শুরু হয়েছে ভোক্তাদের। তেল, ডাল, চিনিসহ অন্যান্য আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। এর কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রায় অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে এমন আগুন লাগলো, সে আগুনে ঘরও পুড়ছে। ঘরের মাসিক আয়ব্যয়ের কোনো হিসাব কাজে আসছে না। মাস ফুরোনোর আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে হাতে সঞ্চিত অর্থ।সব কিছুতেই টান পড়েছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। মাসের বাজেট কাটছাঁট করতে করতে প্রায় তলানিতে এসে পৌঁছেছে। করোনা শুরুর পর থেকেই জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য এমন ঊর্ধ্বমুখী, এর আগে কেউ দেখেনি। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ‘শুধু যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তা নয়; গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পরিবহন ব্যয়, চিকিৎসা ব্যয়, শিক্ষার উপকরণ ব্যয়, জীবন বাঁচানোর জন্য যে প্রয়োজনীয় ওষুধ, সে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিসহ এমন কোনো পণ্য বা সেবা নেই, যার মূল্যবৃদ্ধি পায়নি। সীমিত আর বাধা আয়ের মানুষের সংসার চলছে না কোনোভাবেই। আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও পাওয়া যাচ্ছে না।’

এ পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণ তাকিয়ে থাকেন সরকারের দিকে। তাঁরা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন কিনা, কিংবা কোনো সুখবর তাঁরা জনগণকে দিচ্ছেন কিনা! কিন্তু সুখবর দেওয়া দূরে থাক, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন সব বক্তব্য জনগণ পাচ্ছে, তাতে তারা হতাশ হচ্ছে।

বুধবার (১জুন) দুপুরে রংপুর পর্যটন মোটেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর মতো কোনো সুখবর আপাতত নেই। কারণ হিসেবে তিনি বিশ্ববাজারে অস্থিরতার কথা উল্লেখ করেন। মন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যের দাম কমার কোনো সুযোগ দেখছি না। তবে ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ হলে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হতে পারে।’ ভারতের সঙ্গে তুলনা করে টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশে তেলের লিটার ১৯৮ টাকা। আর কোলকাতায় এখন লিটার ২১৫ টাকা ছাড়িয়েছে। শুধু নিজের দেশের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সংবাদ না করে বাইরের দেশের অবস্থাও তুলে ধরতে হবে। শ্রীলংঙ্কা, ইংল্যান্ড, জার্মানি ও ভারতে তেলের দাম কত সেই চিত্রসহ বিশ্ববাজার পরিস্থিতি প্রচার করলে আমাদের জনগণ সঠিক তথ্য পাবে।’

সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যদি জনসমক্ষে এ ধরনের কথা বলেন, তাহলে জনগণ নিরাশ হতে বাধ্য। কোন্‌ দেশে কত দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, সেটা আমাদের ভাববার বিষয় নয়। আমরা কোনো সময় নেতিবাচক কথা শুনতে চাই না। আমরা কত দামে পণ্য পাচ্ছি, সেটাই মূল কথা। বলতে দ্বিধা নেই, পণ্যমূল্যের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে এবার। আমরা বুঝতে পারি, সরকার বর্তমানে পণ্যমূল্য নিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। এ কঠিন পরিস্থিতি সামলানো সত্যি কষ্টকর। তবু এমন কথা আমরা শুনতে চাই না, যা আমাদের হতাশ করে। প্রতিনিয়ত উদ্যোগের কথা জানাতে হবে জনগণকে।

যদিও একই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী সরকারের এমন এক কর্মসূচির কথাও বললেন, সেটি প্রশংসাযোগ্য। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে তেলের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা এক কোটি পরিবারের মাঝে সাশ্রয়ী মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম না কমা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।’ বাণীটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রাণিত করবে নিঃসন্দেহে।

সরকারের আরো একটি শুভ উদ্যোগ, সেটি হলোটিসিবির মাধ্যমে কিছুটা স্বল্পমূল্যে দ্রব্যাদি সরবরাহের চেষ্টা করছে সরকার। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় একবারেই অপ্রতুল। আমরা প্রত্যক্ষ করছি, দরিদ্রঅসহায় মানুষের সঙ্গে টিসিবির পণ্য ক্রয়ে এবারে যোগ দিয়েছে নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষও। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ যে কতটা কষ্টে, কতটা যন্ত্রণায় দিনাতিপাত করছে, তা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহ করার পাশাপাশি বাজারকে স্থিতিশীল রাখার প্রচেষ্টা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে