কমানো হয়েছে জাহাজ ভাড়া। কন্টেনারের ফ্রি টাইমও বাড়ানো হয়েছে। সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ কমিয়েও চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক হিসেবে পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনালে প্রত্যাশিত গতি আনা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যমান অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে পানগাঁওকে আরো বেশি কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কী ধরনের পদক্ষেপ নিলে বা সুবিধা দিলে পানগাঁওয়ে প্রত্যাশিত গতি আসবে তা নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গতকাল রোববার উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে যে পরিমাণ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশ ঢাকা ও সন্নিহিত অঞ্চলের। চট্টগ্রাম থেকে মাসে হাজার পাঁচেক কন্টেনার ঢাকা আইসিডির জন্য পরিবহন করতে পারে রেলওয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা এবং সন্নিহিত অঞ্চলের যে পরিমাণ পণ্য হ্যান্ডলিং হয় তার মাত্র ৮ থেকে ৯ শতাংশ পরিবহন করতে পারে রেলওয়ে। ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ কন্টেনার মুভারের মাধ্যমে। বাকি ৭০ শতাংশ ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে। কিছু পণ্য অভ্যন্তরীণ নৌ পথে কন্টেনার পরিবহনের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকা থেকে গড়ে তিন-চার দিনের মধ্যে একটি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। জাহাজ থেকে খালাসের পর তা ঢাকায় পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লাগে। কন্টেনার কমলাপুর আইসিডিতে নিতে হলে নানা প্রক্রিয়ায় ১০/১৫ দিনও সময় লাগে। কখনো কখনো এই সময় আরো বেশি লাগে।
এই অবস্থায় নদীপথকে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী হিসেবে আখ্যায়িত করে কয়েক বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে বিআইড্লিব্লউটিএর ৩২ একর জায়গায় ১৭৭ কোটি টাকা খরচ করে পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। নৌ পথে কম খরচে কন্টেনার পরিবহন ত্বরান্বিত করতে সরকার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও টার্মিনালে কন্টেনার পরিবহনের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৩২টি জাহাজ কেনার জন্য লাইসেন্স দেয়। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জাহাজের জন্য লাইসেন্স নিলেও জাহাজ না কেনায় পরবর্তীতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে তিনটি জাহাজ ক্রয় করে এই রুটে পণ্য পরিবহন শুরু করে।
বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষের জাহাজ বন্ধ থাকলেও নিপা পরিবহন এমভি হারবার-১, করিম গ্রুপের এমভি কেএসএল গ্লাডিয়েটর, ইনভেস্টা লিমিটেডের এমভি ইনভেস্টা-১, সামিট এ্যালায়েন্সের এসএপিএল-১ চলাচল করছে। এছাড়া আরো কয়েকটি সংস্থার জাহাজও এই রুটে কন্টেনার পরিবহন করছে। একটি জাহাজ প্রতি ট্রিপে গড়ে দুইশর মতো কন্টেনার পরিবহন করে। এতে করে একটি জাহাজ যে পরিমাণ কন্টেনার পরিবহন করতে পারে সেই পণ্য সড়ক পথে পরিবহন করতে হলে অনেকগুলো ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যান লাগবে। যার ধকল সামলাতে হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর এবং মহাসড়কের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি বিভিন্নমুখী সুবিধা নিশ্চিত করতে পানগাঁও টার্মিনালে গতি আনা জরুরি। এই লক্ষ্যে পানগাঁওয়ে বিভিন্ন আইটেমে ট্যারিফ ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা হয়েছে। আমদানি পণ্য বোঝাই এবং খালি কন্টেনারের জন্য দশ দিন ফ্রি টাইম, পানগাঁওগামী এবং পানগাঁও থেকে আসা কন্টেনারের ডিসচার্জিং চার্জ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা হয়। জাহাজ ভাড়াও কমানো হয় সমন্বিতভাবে। ঢাকা অঞ্চলের সুতা ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত সব সুতার চালান পানগাঁওয়ে খালাস করা হলে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত কিছুর পরও গতি না আসায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, আমদানিকারক ও শিল্পপতিদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় পানগাঁও টার্মিনালে গতি আসছে না। এই অবস্থার উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি তা খুঁজে বের করতে গতকাল মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ, সদস্য (প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিন) মোহাম্মদ জাফর আলমসহ মন্ত্রণালয়, বন্দর এবং বিআইডব্লিউটিএর শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে পানগাঁওকে আরো গতিশীল করতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট এক ব্যবসায়ী বলছেন, ট্যারিফ কমালেও তা তেমন কাজে লাগছে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁও টার্মিনাল দিয়ে পণ্য বোঝাই একটি কন্টেনার (২০ ফুটি) পানগাঁও নিয়ে যেতে ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। শুরুতে এই খরচ প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ছিল। বর্তমানে সড়কপথে এ ব্যয় ৩০ হাজার টাকার কিছুটা বেশি। রেলপথে খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। খরচ আরো কমানোসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলেই কেবল পানগাঁও টার্মিনালে প্রত্যাশিত গতি আসবে বলে মনে করেন তিনি।