তদন্ত প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর

চসিকের জ্বালানি তেল সংগ্রহ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২০ at ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জ্বালানি তেল সংগ্রহ ও বিতরণ যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক। গতকাল রোববার চসিক প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে এ দাবি করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে চসিকে প্রথমবার কোন প্রকৌশলী তদন্ত প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করল। এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি।
সুদীপ বসাক দাবি করেন, তদন্ত কমিটি তার কাছ থেকে কোনরকম বক্তব্য অথবা মতামত না নিয়ে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে এবং গঠিত তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইচ্ছাকৃত ভুলেভরা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই প্রতিবেদনকে প্রশাসকের মহৎ উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস বলেও দাবি করেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করে সুদীপ বসাক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে অনেক তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আলোকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিউজও ছাপা হচ্ছে। এতে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই প্রকৃত সত্য প্রশাসক মহোদয়ের কাছে তুলে ধরলাম।’
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ আগস্ট জ্বালানি তেল সংগ্রহ বিতরণ যাচাই-বাছাইয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী-৩ কামরুল ইসলামকে আহ্বায়ক, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (অডিট) আশুতোষ দে’কে সদস্য সচিব ও নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মির্জা ফজলুল কাদেরকে সদস্য করা হয়। কমিটি ১০ সেপ্টেম্বর জমা দেয়া তাদের প্রতিবেদনে, ৩৩ টি পর্যবেক্ষণসহ জ্বালানি সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনায় ৩১টি সুপারিশ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণগুলোতে চসিকের নিজস্ব পেট্রোলপাম্পে জ্বালানি বিতরণের ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার বিষয় তুলে ধরা হয়।
এদিকে গতকাল প্রশাসককে দেয়া পত্রে ব্যাখ্যা দিয়ে তত্ত্বাবাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ‘বেসরকারি পেট্রোল পাম্প থেকে সংগ্রহে চসিকের দৈনিক খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮১৮ টাকা। পক্ষান্তরে নিজস্ব পাম্প থেকে খরচ দেখানো হয় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫০ টাকা।’ প্রতিবেদনে টাকার যে হিসাব প্রদান করা হয়েছে তা সঠিক নয়। হাক্কানী পাম্প থেকে জ্বালানি (ডিজেল) ক্রয় করা হয়েছে প্রতি লিটার ৬৫ টাকা দরে, সে হিসেবে ৬৯ হাজার ৮০ দশমিক ৫৭ লিটার এর মোট মূল্য ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৭ টাকা। পক্ষান্তরে নিজস্ব পাম্পের জন্য মেঘনা পেট্রোলিয়াম হতে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ডিজেল ক্রয় করা হয় প্রতি লিটার ৬২ দশমিক ৫১ টাকা দরে। অযৌক্তিকভাবে হিসাব করা এক মাসের দৈনিক গড় ৭১৫০ লিটার ডিজেলের মোট মূল্য ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৬ টাকা। অর্থাৎ হাক্কানী পেট্রোল পাম্প হতে পরিমানে কম দরে বেশি, পক্ষান্তরে নিজস্ব পাম্প হতে পরিমানে বেশি দরে কম হিসেবেও নিজস্ব পাম্প হতে জ্বালানি ব্যবহার করলে চসিকের দৈনিক সাশ্রয় হবে ৬৭ হাজার ৮৯১ টাকা। যা বছরে ২ লাখ টাকারও বেশি।
উল্লেখ্য যে, সিটি কর্পোরেশনে পেট্রোল পাম্পে স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে ২০১৪ সাল থেকে সমস্ত জ্বালানি বিতরণ সফটওয়ারে এন্ট্রির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। নাম্বারবিহীন কোন যান/যন্ত্রপাতিতে জ্বালানি সরবরাহের কোন সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিবেদনে অন্যান্য খাতে তেল ইস্যু মর্মে যে প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে তা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। কারণ ফুয়েল পাম্পের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী (যাঃ) তদন্ত কমিটির সদস্য হওয়ায় বিষয়টি আরো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।
এতে আরো বলা হয়, তদন্ত প্রতিবেদনে এক মাসের গড়ের সাথে এক সপ্তাহের গড়ের হিসাব করেছেন সেখানে অসামাঞ্জস্য দুটি গড়ের মধ্যে তুলনা করে দৈনিক ১৭০ লিটার বেশি ব্যবহারের যে হিসাব দিয়েছেন তা বাস্তবতা বা গাণিতিক কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। এতে আরো বলা হয়, চসিকের এ্যাসফল্ট প্ল্যান্টটি ঠিকাদারের কাজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মেরামতি কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্ল্যান্টের ভাড়ার সাথে জেনারেটরের ভাড়াসহ যোগ করে প্ল্যান্টের ঘন্টা প্রতি রেইট নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে ব্যবহৃত জ্বালানির মূল্য ঠিকাদার পরিশোধ করেছে। লোডশেডিং এর সময় নির্ধারন করা না থাকলেও কত ঘন্টা চালু ছিল তা লগ বই-এ উল্লেখ আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে হোটেলকক্ষে ৬ বন্ধু মিলে যুবতীকে ধর্ষণ
পরবর্তী নিবন্ধ‘পাপিয়ারা দেশের জন্য বিপজ্জনক’