তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা

১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবি পরিবেশকর্মীদের

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১২ জুন, ২০২২ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

২০০৭ সালে পাহাড় ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ ও অধিকার কর্মীরা। অন্য দাবিগুলো হচ্ছে ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণা, টাস্কফোর্স গঠন করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ সুরক্ষা করে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা।

গতকাল সন্ধ্যায় নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে আয়োজিত মোমবাতি প্রজ্বলন ও নাগরিক সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। পরিবেশবাদী সংগঠন পিপল’স ভয়েস এ সমাবেশের আয়োজন করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি শরীফ চৌহান দাবিগুলো উত্থাপন করেন। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম মহানগর এবং ২০১৭ সালে রাঙামাটি ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ ও খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি শিল্পী রাশেদ হাসান প্রমুখ।

ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাহাড় তো শুধু চট্টগ্রামের নয় সারা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। এই প্রকৃতিকে ধ্বংস করার অধিকার কারো নেই। পাহাড় কেটে শেষ করা হয়েছে, আজ কর্ণফুলী ভরাট হওয়ার পথে। এ শুধু পাহাড় কাটা নয়, আমাদের প্রকৃতিকে ধ্বংস করার এ গভীর ষড়যন্ত্র। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মানুষের কাতারে নেমে এসে পাহাড়নদী রক্ষা না করলে সামনে সমূহ বিপদ। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত শত শত তদন্ত কমিটি আমরা দেখেছি। এতে আর মানুষের মন ভোলে না।

অধ্যাপক অশোক সাহা বলেন, এখন দেশে কে কোথায় কীভাবে কী খেয়ে লোপাট করে দেবে তাই চলছে। দখল, মৃত্যু ও লুটতরাজ বন্ধ হয় না। এমন এক পরিস্থিতিতে আছি, অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে দুঃসহ যন্ত্রণা চলছে।

প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, যারা পাহাড়ে বাসস্থান তৈরি করে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, দেশের মানুষকে দেশের মালিকানা অনুভবের সুযোগ দিন।

কামরুল হাসান বাদল বলেন, পাহাড় কাটলে বিচার হয় গরিবের। বড়লোকের কোনো বিচার হয় না। পাহাড়ের পাদদেশে যারা থাকে তারা গরিব মানুষ। পাহাড় ধসে মারাও যায় তারা। এই শহরে সরকারি সংস্থা সিডিএ যখন পাহাড় কেটে বায়েজিদ লিংক রোড বানায় তখন তো বাকিরা উৎসাহিত হয়। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে পাহাড় রক্ষায়।

রাশেদ হাসান বলেন, পাহাড় ধস নিছক দুর্ঘটনা নয়। আসল দোষীদের আমরা বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। নেপথ্যের দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয় না বলেই পাহাড় কাটা চলছে।

শরীফ চৌহান বলেন, পাহাড় রক্ষায়, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা পাহাড় দখল করেছেন তাদের তালিকা পাহাড় রক্ষা কমিটি করেছিল। কারো বিরুদ্ধে আজও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি এত বছরেও সফল হতে পারেনি। এত উচ্চপদস্থ কমিটি যদি সফল না হয় তাহলে সফল হচ্ছে কারা? অবিলম্বে সব সরকারি সংস্থাকে এক জায়গায় এনে বসাতে হবে।

পিপলস ভয়েসের সদস্য মিঠুন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কবি আশীষ সেন, মাহবুবুর রহমান মাহফুজ, ফজলুল কবির মিন্টু, শিপ্রা দাশ, স্বপন চন্দ্র সাহা, সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা ও এলিন চাকমা। সমাবেশে সংহতি জানায় পাহাড়ি শ্রমিক কল্যাণ পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, দৃষ্টি, ত্রিতরঙ্গ আবৃত্তি দল ও পার্ক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করায় ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা
পরবর্তী নিবন্ধঝগড়া থামাতে গিয়ে ছুরিকাহত হয়ে যুবকের মৃত্যু