তদন্ত কমিটিকে অবরুদ্ধ করে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীকে পদত্যাগে বাধ্য

শোলকাটা এস জে নিজাম উচ্চ বিদ্যালয়

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারায় হাজীগাঁও শোলকাটা এস জে নিজাম উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীর অনিয়মের তদন্তে যাওয়া কমিটিকে অবরুদ্ধ করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ ও অফিস সহকারী ফজলুল কবিরকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। গত বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিদ্যালয় অফিস ও গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সংগঠক জোবায়ের এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের সম্পর্ক নেই বলে জানান।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন আনোয়ারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌস হোসেন। উক্ত ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক এমপি সরোয়ার জামাল নিজাম। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী নানা অনিয়মের সাথে জড়িত। তাই তাদের পদত্যাগ করানো হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌস হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসতিয়াক ইমন বরাবরে হাজীগাঁও শোলকাটা এস জে নিজাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ ও অফিস সহকারী ফজলুল কবিরের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের লিখিত অভিযোগ দেন। তিনি বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে গত বুধবার সকালে তদন্ত করতে আমরা বিদ্যালয়ে যাই। সারাদিন অভিযোগকারীদের উপস্থিতিতে আমরা বিকালে তদন্ত শেষ করে আসার মুহূর্তে স্থানীয় কিছু অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিদ্যালয়ের অফিস গেটে তালা লাগিয়ে আমাদের অবরুদ্ধ করে তদন্ত বাদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীকে পদত্যাগ করার দাবি তোলেন। একপর্যায়ে তারা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠলে এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষক আর অফিস সহকারীকে পদত্যাগ করানোর পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা সদরে ফিরে আসি।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম করে গেছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষার্থীদের সনদপত্রে ভুল করে তা টাকার বিনিময়ে সংশোধন করতেন। দীর্ঘদিনের স্কুলের হিসাব তিনি কর্তৃপক্ষকে দেননি। এছাড়া আরও বিভিন্ন অভিযোগে ইউএনও এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ করা হয়। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় প্রধান শিক্ষক এবং অফিস সহকারী পদত্যাগ করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সংগঠক জোবায়ের ঘটনার বিষয়ে তার ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমন ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌস হোসেনের অনুরোধে বুধবার এস জে নিজাম উচ্চ বিদ্যালয় উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রমের সহযোগিতা করি। পরে উচ্ছৃশঙ্খল কিছু বহিরাগত অভিভাবক ও শিক্ষার্থী অনাকাঙ্খিত এ ঘটনা ঘটায়। এই ঘটনার সাথে চলমান ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।

পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেওয়া প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ অভিযোগ করে বলেন, ‘এস জে নিজাম বিদ্যালয়টি এস জে নিজাম শিক্ষা উন্নয়ন ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বিএনপির তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য সরোয়ার জামাল নিজাম। যার কারণে স্থানীয় আওয়ামী যুবলীগের চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়ে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। বিগত সরকারের পতনের পর ভুয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নাম দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচার করে বুধবার রাতে জোর করে আমার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে পদত্যাগপত্র লেখানো হয়। আমি এই ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সংসদ সদস্য সরোয়ার জামাল নিজাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বিদ্যালয়ে জোরপূর্বক প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষক আর অফিস সহকারীকে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করায়। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন বলেন, ‘আমি কোনো পদত্যাগপত্র পাইনি। এটি একটি ট্রাস্ট পরিচালিত বিদ্যালয়। শিক্ষকের পদত্যাগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আমরা দিতে পারি না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর ফাঁকি : বেসিক ব্যাংকের বাচ্চু ও স্ত্রী-পুত্রদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধলেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব বরখাস্ত ও সাইফুল বাধ্যতামূলক অবসরে