মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় আটক জঙ্গিদের কয়েকজনকে নিয়ে কর্মধার পাহাড়ি এলাকায় নতুন আস্তানার খোঁজে গিয়ে কাউকে পায়নি কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। তবে সেখান থেকে কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকালে কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজার এলাকায় স্থানীয়রা ১৭ জনকে জঙ্গি সন্দেহে আটকের পর রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে সিটিটিসি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আটক কয়েক জঙ্গিকে নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ের গভীরে অভিযানে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সেখান থেকে ফিরে বিকাল ৬টার দিকে মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, প্রায় চার ঘণ্টার এই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০টির বেশি পাহাড় ডিঙিয়ে ওই আস্তানায় পৌঁছায়। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। জায়গাটি দুর্গম হলেও তারা খুব সহজেই সেখানে যাতায়াত করতে পারত।
জঙ্গিরা এটাকে তাদের ভাষায় ‘আনসার হাউজ’ বলে উল্লেখ করে সিটিটিসির কর্মকর্তা বলেন, সেখান থেকে ৯৫টি ডেটোনেটর, ছয় কেজি বিস্ফোরক এবং ১৪টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার সকালে ‘পাহাড়ের আস্তানা’ থেকে নেমে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে ১৭ পুরুষকে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে তাদের ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে পুলিশ পাহারায় আটক রাখা হয়।
তার আগে শুক্রবার রাত থেকে কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিওয়ালি গ্রামের বাইশালী বাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জন নারী–পুরুষ ও তিন শিশুকে আটক করেছিল সিটিটিসি ইউনিট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছিল, তারা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে একাধিক সাংবাদিক সিটিটিসির কর্মকর্তার কাছে জানতে চান সেখানে দলনেতা ইমাম মাহমুদ আছেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যা তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বলা যাবে না। অপারেশনের স্বার্থে আমরা অনেক কিছুই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারব না।
তবে ব্রিফিংয়ের একপর্যায়ে আসাদুজ্জামান বলেন, সোমবার আমরা ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। তখন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার আমাকে কিছু ছবি পাঠান। এবং সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন করে বলেন, স্যার দেখেন তো এখানে ওই গ্রুপের কেউ আছেন কিনা? আমি সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেই। তিনি সেই ছবি দেখেই বলেন, স্যার আমাদের এখনি মুভ করতে হবে। এখানে যারা (আটক) ছিল, তারা তাদেরকে আইডেন্টিফাই করেছে। আমরা যাদের খুঁজছি, আমাদের ওই মামলার যারা আসামি, তাদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি এখানে আছেন। তারপর আধা ঘণ্টার মধ্যে গাড়িতে উঠি।
স্থানীয়রা যাদের আটক করেছে তাদেরকে সাংবাদিকদের সামনে আনেনি সিটিটিসি; এমনকি তাদের নামও জানানো হয়নি। জঙ্গিদের সঙ্গে অন্য কারও কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কিনা কিংবা এখান থেকে তারা কোনো অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল কিনা সে সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসির আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের কিছু সময় দেন। আমরা তো তাদের ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদই করতে পারলাম না। আমরা নতুন নতুন লিংক পাচ্ছি। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কাজ করব। আশা করি, তখন আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব। দুদিনের অভিযান এখানেই শেষ হয়েছে বলেও জানান আসাদুজ্জামান। পরে সবাইকে গাড়ি তুলে ঢাকার পথে রওনা দেয় সিটিটিসি টিম।
১৭ জনকে আটকের আগে ৭ আগস্ট ঢাকার মিরপুর থেকে একই সংগঠনের আরও ১০ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে ১১ আগস্ট ফরহাদ নামে ঢাকা থেকে আটক করা হয়েছিল আরও একজনকে। ফরহাদের দেওয়া তথ্য ধরেই শুক্রবার কুলাউড়ার পূর্ব টাট্টিওয়ালি এলাকায় অভিযানে নেমেছিল সিটিটিসি। সেদিন অভিযান পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি সাংবাদিকদের ধারণা দিয়েছিল, হয়ত সেই আস্তানা থেকে কিছু লোক পালিয়ে গেছে। তারা আশপাশেই কোথায় অন্য আস্তানায় আত্মগোপন করেছে।
 
        
