তথ্য গোপন করে জামিন নিতে গিয়ে ধরা স্বর্ণ চোরাচালানকারী আবু

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামের স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করতে নির্দেশ হাই কোর্টের

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:০৯ পূর্বাহ্ণ

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তথ্য গোপন করে বিচারিক আদালতে জামিন নিতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন চট্টগ্রাম তথা দেশের শীর্ষ স্বর্ণ চোরাচালানকারী আবু আহাম্মদ ওরফে আবু। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আবুকে চট্টগ্রামের স্পেশাল জজের আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। গতকাল রোববার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চের আদেশের পর আবুকে শাহবাগ থানা পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক আদালতের আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

২০২০ সালের ১৮ মার্চ সিআইডির উপপুলিশ পরিদর্শক মো. হারুন উর রশীদ ফটিকছড়ির জাফতনগর এলাকার ফয়েজ আহম্মদ ওরফে বালী সওদাগরের ছেলে আবু আহম্মদ ওরফে আবুসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা একে অপরের সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১২ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই এবং অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা ও হুন্ডির মাধ্যমে ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৭ টাকা জমা ও ২৪০ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ১৬০ টাকা উত্তোলন করে মানিলন্ডারিং অর্থাৎ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে নামেবেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। টাকা পাচারের অর্থ দিয়ে গাড়িবাড়ি, মার্কেটসহ বিভিন্ন সম্পত্তি অর্জন করেছেন। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, ফতেনগর, রাউজান, ফটিকছড়িতে জমি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন আবু। দুবাইতেও ২৩ টি দোকান রয়েছে তার। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা রয়েছে।

ওই মামলায় ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে আগাম জামিন চান আবু আহাম্মদ। হাই কোর্ট তিন সপ্তাহের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের পর ২২ ফেব্রুয়ারি আসামি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। এই আবেদনের পর চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ নথি তলব করে ওই বছরের ৫ মে জামিন শুনানির জন্য দিন রাখেন। কিন্তু চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। এরপর ১৩ জুলাই দিন রাখা হলেও নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। পরে ৩১ আগস্ট নথি উপস্থাপন করে ৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে আদালত। এভাবে আরও কয়েকবার শুনানির জন্য সময় চান আবু। সর্বশেষ গত বছরের ১৩ নভেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির দিন আবু আহম্মদ ফের সময় আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

বিশেষ আদালতের আদেশে বলা হয়, গত নয় মাস যাবত জামিন শুনানি না করে আসামি সময়ের দরখাস্ত করে আসছেন, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার শামিল। এরপর আসামি আবু আহম্মদ হাই কোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চান। গত ৫ ডিসেম্বর আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি শেষে আদালত ৬ ডিসেম্বর আদেশের জন্য রাখেন। ৬ ডিসেম্বর আসামি আদালত থেকে পালিয়ে যান। পরে হাই কোর্ট আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে হাজির হতে নির্দেশ দিলেও তিনি হাজির হননি। এমন সময় আদালত আবু আহম্মদকে গ্রেপ্তার ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এছাড়া তাকে অবিলম্বে যেকোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করে যথাযথ আদালতে হাজির করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। পরদিন এ মামলার তদবিরকারককে তলব করেন হাই কোর্ট। তলবে হাজিরের পর ১২ ডিসেম্বর তদবিরকারক নুর মোহাম্মদ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আসামিকে আদালতে হাজির করার জন্য তদবিরকারককে নির্দেশ দেন। আবু আহমেদ ওরফে আবুর বিরুদ্ধে হাই কোর্টের আদেশ অমান্য করায় রুল জারি করেন আদালত। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। পরবর্তী আদেশের জন্য ৮ জানুয়ারি দিন রাখেন। গতকাল আবু হাই কোর্টে হাজির হলে তাকে গ্রেপ্তার করে যেকোনো মূল্যে যথাযথ আদালতে হাজির করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন ও মো. হাবিবুর রহমান। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোনের মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিতে পারি : কাদের সিদ্দিকী
পরবর্তী নিবন্ধআমেরিকান হাসপাতালকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে রূপান্তরে বরাদ্দ দাবি