তক্ষক ধরে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে ছুটছে তারা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম জুড়ে রীতিমতো উন্মাদনা চলে আসছে। বন্য প্রাণী আইন ২০১২ এর ৩২ ধারা মতে তক্ষকজাতীয় প্রাণী ধরা ও পাচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবু তক্ষকের ব্যবসা ঘিরে বাড়ছে খুন, প্রতারণা, আত্মসাতের মতো নানা অপরাধ। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে চকরিয়া থানার পুকুরিয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আলম কমিশনারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ এমরানুল হক নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তিনি টেরিবাজার একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন বিশ্বস্ততার সাথে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তক্ষক বিক্রি করে কোটিপতি হওয়ার মোহে পড়ে, সেই দোকানের টাকা আত্মসাৎ করে ধরা পড়েন। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী মোক্তার আহমদ প্রকাশ রানা বৈদ্যকে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, টেরিবাজারের দোকান কর্মচারী এমরানুল হক। এক দশকেরও বেশি সময়ের এই কর্মচারী বিশ্বস্ত দোকান মালিকের কাছে। তাইতো ১০ বছর ধরে তার হাত ধরেই হয় দোকানের সমস্ত লেনদেন। তবে তক্ষক বিক্রি করে বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে সব তছনছ। অন্য একজনকে সঙ্গে করে ১১ লাখেরও বেশি টাকা নিয়ে চম্পট দেন তিনি। দু’দিন না যেতেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন দুজনেই।
সিএমপির কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, মূলত রাবেতা ক্লথ স্টোরের মালিকের নির্দেশেই এমরানুল হক টাকা ও চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সে দোকানে ফেরত না এসে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। মালিকপক্ষ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে থানায় অভিযোগ করে।
পুলিশ তদন্তে নেমে চকরিয়ায় এমরানুলের অবস্থান শনাক্ত করে সেখানে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি গ্রেপ্তার তার সহযোগী মোক্তার আহমদের বাড়িতে ছিলেন। সেই মোক্তারের আলমারি থেকে নগদ সাড়ে ৯ লাখ টাকা এবং ১ লাখ ৬২ হাজার টাকার দুটি চেক উদ্ধার করা হয়। বাকি ১৩ হাজার টাকা এমরানুল খরচ করেছেন বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এমরানুল জানিয়েছে, পূর্বপরিচিত মোক্তার তাকে আড়াই লাখ টাকায় একটি তক্ষক কিনে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেবে বলে জানিয়েছিল। দ্বিগুণ লাভের লোভে পড়ে সে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ও দু’টি চেক মোক্তারকে দিয়ে দেয়। শনিবার মোক্তার তাকে তক্ষক কিনে দেওয়ার জন্য খাগড়াছড়িতে নিয়ে যাবার কথা ছিল।
এবারই প্রথম নয়, তক্ষক কেনাবেচা করতে গিয়ে ২০১১ সালে দালালের খপ্পরে পড়ে নিহত হন রূপক নন্দী নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি ফটিকছড়ি নারায়ণহাট এলাকার নন্দীপাড়ায়। তক্ষক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মধ্য বেতছড়ির গোরস্থান পাড়ার যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেনকে (৩২) দুর্বৃত্তরা খুন করে। এই ঘটনার ছয় মাসের মাথায় ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর তক্ষক ব্যবসার সূত্র ধরে ফটিকছড়ি এনে খুন করা হয় ঢাকার এনজিও ‘সেতু বন্ধনের’ ম্যানেজার হেলাল উদ্দিনকে। কোটি টাকা দামের কথিত তক্ষক কম দামে বিক্রির লোভ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর তাকে কৌশলে ফটিকছড়ি আনা হয়। এরপর তাকে অপহরণ করে একটি চক্র। পরে তক্ষকের দাম নিয়ে ওই চক্রের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় একপর্যায়ে হত্যা করা হয়। ওই এনজিও কর্মকর্তার লাশ গুম করতে সেটি ফেলে দেওয়া হয় ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরের নির্জন পাহাড়ি এলাকার ৫০ ফুট গভীর এক গর্তে।