কালোবাজারে একটি পরিপূর্ণ তক্ষকের দাম কোটি টাকা বলে প্রচলিত। তবে সে তক্ষক স্বল্পমূল্যে বিক্রির লোভ দেখিয়ে একটি চক্র লোকজনকে ডেকে এনে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ে জড়িয়ে পড়েছে। যেহেতু তক্ষক নিয়ে লেনদেন সম্পূর্ণ অবৈধ তাই মুক্তিপণের শিকার ব্যক্তিরাও উদ্ধার হয়ে পরবর্তীতে আইনের আশ্রয় না নেয়ায় অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফটিকছড়ির ভূজপুর বাগান বাজার ইউনিয়নের নুরপুর এলাকায় দুর্গম পাহাড়ের ৫০ ফুট গভীরে একটি কুয়ার মাটি খুঁড়ে এনজিও ম্যানেজার হেলাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই। তক্ষক কিনতে ঢাকা থেকে ফটিকছড়িতে এসেছিলেন তিনি। পিবিআই জানায়, এনজিও ম্যানেজার হেলাল উদ্দিন তক্ষক নিয়ে প্রতারণা ও মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত একটি চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন। এ চক্রের হাতে তাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান গতকাল আজাদীকে বলেন, ২০১৯ সালে ২৩ নভেম্বর ভিকটিম হেলাল উদ্দিনকে তক্ষক দেখানোর নামে ফটিকছড়ি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ভিকটিমের সাথে তখন আরও একজন এসেছিলেন। চক্রের সদস্যরা তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে। এসময় যে লোকটি হেলালের সাথে এসেছিলেন তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও হেলাল পারেননি। পরে চক্রটি হেলালের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। তার পরিবারের লোকজন বিকাশের মাধ্যমে ৯ হাজার টাকা প্রেরণ করে। কিন্তু চক্রটি তিন লাখ টাকা দাবি করে। এই টাকা না দেয়ায় তাকে সারারাত ধরে মারধর করে। এক পর্যায়ে তিনি মারা যান। পরে দুর্গম পাহাড়ের ৫০ ফুট গভীর একটি কুয়ায় নিচে লাশটি ফেলে দেয়া হয়। এরপর সেটির উপর তারা মাটি চাপা দেয়।
নাজমুল হাসান আজাদীকে বলেন, আমরা থানাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এর আগেও বিভিন্নজনকে এই এলাকায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। এই ধরনের অপরাধ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা না হওয়ার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। পুলিশ বিভিন্ন সময় ভিকটিমকে উদ্ধার করলেও তারা মামলা করতে রাজি হন না। পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, তক্ষক নিয়ে লেনদেন অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে অপরাধের সাথে জড়িত। তাই ভিকটিম মামলা কিংবা অভিযোগের দিকে যেতে চান না। তিনি বলেন, তক্ষক নিয়ে ১০/১২ জনের একটি চক্রের খোঁজ পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।