অবশেষে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্ত হচ্ছে ঢাকার সাত সরকারি কলেজ। এর অংশ হিসেবে ২০২৪–২৫ সেশন, অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের আলোকে আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে ২০২৪–২০২৫ থেকে ঢাবির অধীনে আর ভর্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গে ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজের পথচলা মোটেও ‘নির্বিঘ্ন’ ছিল না। ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ’–এমন শিরোনাম গত আট বছরে বহুবার দেখেছে মানুষ। গতবছর অগাস্টে ক্ষমতায় পালাবদলের পর এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলে আসছিলেন, অধিভুক্তির কারণে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগতে হয় তাদের। নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে তারা নানা সমস্যায় পড়েন। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোতে আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। এর মধ্যে গত রোববার সন্ধ্যার যে কর্মসূচির সূত্র ধরে গতকাল সোমবারের ‘আলাদা হওয়ার’ সিদ্ধান্ত এল, সেই খবরের শিরোনামও ছিল ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ’। সেদিন সন্ধ্যায় নানা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও টেকিনিক্যাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তাদের এই অবস্থানের খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে লাঠি সোঁটা নিয়ে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে মধ্যরাতে শুরু হয় সংঘর্ষ; ধাওয়া পাল্টা–ধাওয়া। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। মোতায়েন করা হয় চার প্লাটুন বিজিবি। তারপরও রাতভর উত্তেজনা চলে দুই পক্ষের মধ্যে।
গতকাল সকালে ‘হামলাকারীদের’ বিচার দাবিতে নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর তাদের গতকালের সব চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও গতকালের ক্লাস–পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। রাজধানীতে বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ। এর মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টায় জরুরি সভায় বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাত কলেজের অধ্যক্ষরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদের কার্যালয় সংলগ্ন সভাকক্ষে এই সভা হয়। সভার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ‘আলাদা’ হওয়ার সিদ্ধান্ত জানান উপাচার্য।
অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ইতোমধ্যে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে ধৈর্যধারণ, সমপ্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।












