ঢাবি ছাত্রদলের কমিটিতে একাধিক ছাত্রলীগ নেতা

| শনিবার , ৯ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ১৮ হল কমিটিতে অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী স্থান পেয়েছেন। এরমধ্যে অনেকেই ৫ আগস্টের পর ছাত্রদলের রাজনীতি করে দলের কমিটির শীর্ষ পদ বাগিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ছাত্রদলের ১৮টি হলে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটিগুলোতে মোট ৫৯৩ জন শিক্ষার্থী স্থান পেয়েছেন। কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের শামসুন নাহার হলের উপগণযোগাযোগ সম্পাদক নিতু রাণী সাহা নতুন ঘোষিত ছাত্রদলের শামসুন নাহার হল কমিটির সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক পদ পেয়েছেন। ছাত্রলীগের জীববিজ্ঞান অনুষদের সহসভাপতি রাকিবুল হাসান সৌরভ ছাত্রদলের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক পদ পেয়েছেন। ছাত্রলীগের স্যার এ এফ রহমান হলের সহসম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন ছাত্রদলের হল কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক পদ পেয়েছেন। ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনে ছাত্রলীগের হয়ে ঝিনাইদহ৪ আসনের সমন্বয়ক টিমের শিবলী রহমান পাভেল হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ছাত্রদলের কমিটিতে যুগ্মআহ্বায়ক পদ পেয়েছেন। খবর বাংলানিউজের।

ছাত্রলীগের নাটোর২ আসনের সমন্বয়ক টিমের মো. আজিজুল হাকিম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্রদলের কমিটিতে যুগ্মআহ্বায়ক পদ পেয়েছেন। এমনকি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের দুদিন আগে গত বছরের ৩ আগস্ট রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ব্যঙ্গ করে পোস্ট করা ও নিয়মিত ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া রাজু শেখ নতুন ঘোষিত ছাত্রদলের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক পদ পেয়েছেন। এছাড়া গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বয়কট করা আহমেদ জাবির সিয়াম হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের নতুন ঘোষিত ছাত্রদলের কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন। তার গত বছরের আগস্ট মাসে বিভিন্ন পোস্টে ‘সারা বাংলায় খবর দে, এক দফার কবর দে’ কমেন্টের প্রমাণও মিলেছে।

. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হওয়া মোসাদ্দেক আল হক শান্ত অতীতে এলাকায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার বাবা নশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তিনি ছাত্রদলে যোগ দেন। শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে হল থেকে বের করে দেওয়া মাহমুদ ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক পদ পেয়েছেন। ছাত্রলীগের শেখ মুজিবুর রহমান হলের নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ বর্তমানে ছাত্রদলের একই হলের সদস্য পদ পেয়েছেন। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন বা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ছবি তুলেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের পক্ষে লিখেছেন, এমন অনেকেই এই কমিটিতে আছেন।

তারা হলেন অমর একুশে হলের সদস্য সচিব আব্দুল হামিদ, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবু জার গিফারী ইফতা, যুগ্মআহ্বায়ক মোয়াজ শাহরিয়ার অপু, যুগ্মআহ্বায়ক মো. জনি প্রামাণিক, যুগ্মআহ্বায়ক মহিবুল হাসান আকন্দ, যুগ্ম সদস্য সচিব রোমান মিয়া, বিজয় একাত্তর হলের যুগ্মআহ্বায়ক মুহাম্মদ আকরানুল ইসলাম, শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক এম এম মোমিতুর রহমান পিয়াল, যুগ্মআহ্বায়ক মোস্তফা হোসেন লিখন, যুগ্মআহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল নোমান, যুগ্মআহ্বায়ক সাদমান সাকিব শাওন, যুগ্মআহ্বায়ক রোমান সরকার, সদস্য ইমতিয়াজ আহমেদ, কুয়েত মৈত্রী হলের সদস্য সচিব জান্নাতুল ফেরদৌস পুতুল, ফজলুল হক মুসলিম হলের আহ্বায়ক মো. আবিদ হাসনাত, যুগ্মআহ্বায়ক মো. ইমরান হোসেন, যুগ্মআহ্বায়ক রাকিব হাসান, যুগ্মআহ্বায়ক মো. ইমরান হোসেন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সদস্য সচিব শাহরিয়ার লিওন, যুগ্মআহ্বায়ক হাসনাথ তারিক জীম, যুগ্মআহ্বায়ক জিন্নাহ আহমেদ, যুগ্মআহ্বায়ক মো. সজিব হোসেন, যুগ্মআহ্বায়ক মো. রাসেল হোসেন, রোকেয়া হলের সদস্য সচিব আনিকা বিনতে আশরাফ, স্যার এএফ রহমান হলের যুগ্মআহ্বায়ক মুনতাহা মিথ, সদস্য বাদশাহ বিন ফরহাদ আলভী, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের যুগ্মআহ্বায়ক আতিক মন্ডল, যুগ্মআহ্বায়ক মাহিদুল আলম ফাহিম, কবি সুফিয়া কামাল হলের সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক জাকিয়া সুলতানা আলো, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের যুগ্মআহ্বায়ক মাহিন আহমেদ, জগন্নাথ হলের সদস্য ধ্রুব রায়।

এদিকে দীর্ঘদিন ছাত্রদল করেও পদবঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিকজন। তাদের অভিযোগ, কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। স্যার এ এফ রহমান হলের পদবঞ্চিত নেতা মুহাম্মদ মাহাদী হাসান তার ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ২০২২ সাল থেকে জাতীয়তাবাদী আদর্শ বুকে লালন করে রাষ্ট্রযন্ত্রের বুটবুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। অথচ আজ আমার ত্যাগ ও বিশ্বস্ততার প্রতিদান দিলেন ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, স্বজনপ্রীতি করে তার আপন ছোট ভাইকে আমার জায়গায় বসিয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শামীম মিয়াও তার বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ২০১৯ সাল থেকে প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবেই ঢাবি ছাত্রদলের সঙ্গে প্রকাশ্যে মিটিংমিছিল করেছি। ক্লাসে না গিয়ে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের বিপরীতে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়েছি। সে বছরই মধুর ক্যান্টিনে একবার হামলার শিকার হই এবং আহত ভাইদের নিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২০ সালে হল কমিটির জন্য সিভি জমা দিয়েও জুনিয়র হওয়ায় পদবঞ্চিত হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগানের বিপরীতে যারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিত, তাদের অনেকের নামও এবারের কমিটিতে এসেছে। ২০২১ সাল থেকে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী আবু তালিব অভিযোগ করে বলেন, শেখ মুজিব হলের ৫৪ সদস্যের নতুন কমিটিতে আমার নাম নেই। অথচ ২০২২ সালে ক্যাম্পাসে আসা অনেক জুনিয়র নেতাও পদ পেয়েছেন।

তদন্ত কমিটি করল ছাত্রদল :তথ্য গোপন রেখে’ যুক্ত হওয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করেছে ছাত্রদল। ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. মাসুম বিল্লাহ, সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন শাওন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূর আলম ভূঁইয়াকে। আগামী ৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে লিখিত একটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে তালাবদ্ধ ঘরে কবিরাজের গলাকাটা লাশ
পরবর্তী নিবন্ধপুরো গাজা দখল করবে ইসরায়েল, ৫ দফা পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর