ঢাকা-দিল্লি ১০ সমঝোতা স্মারক সই, ৭টিই নতুন

দিল্লিতে হাসিনা-মোদি বৈঠক লাল গালিচা সংবর্ধনা

| রবিবার , ২৩ জুন, ২০২৪ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে ঢাকা ও নয়াদিল্লি। এসব স্মারকের মধ্যে ৭টিই নতুন। এছাড়া ৩টি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর এসব সমঝোতা স্মারক সই হয় বলে বাসস জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

দুই দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়। দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই নেতার বৈঠকের আলোচনায় মূলত দুই দেশের মধ্যে সংযোগ, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সমুদ্র সম্পদ, বাণিজ্য, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অংশীদারত্বের বিষয় স্থান পায়। পরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হয়। এই বৈঠকের পর দুই নেতার উপস্থিতিতে সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্র সহযোগিতা, রেল, সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহযোগিতা, মৎস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ ১০টি ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক সই হয়। নতুন ৭টির মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরভিত্তিক সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্র সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা চুক্তি হয় দুই দেশের সরকারের মধ্যে।

সমুদ্রবিজ্ঞান এবং এ ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে আরেকটি সমঝোতা চুক্তি হয় বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) এবং কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাসট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ইন্ডিয়ার মধ্যে। ভারতবাংলাদেশ রেলসংযোগ বিষয়ক নতুন আরেকটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দুই দেশের মধ্যে ডিজিটাল ও সবুজ অংশীদারত্ব বিষয়ক নতুন দুটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।

যৌথ কৃত্রিম উপগ্রহ প্রকল্পের জন্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার (ইনস্পেস), ডিপার্টমেন্ট অব স্পেস, ভারতের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। ডিএসসিসি, ওয়েলিংটন এবং ডিএসসিএসসি, মিরপুরের মধ্যে সামরিক শিক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য নতুন একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া মৎস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহযোগিতার তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন হয়েছে এবার।

দিল্লিতে হাসিনামোদী বৈঠক : দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এঙে বলেছেন, শনিবার হায়দ্রাবাদ হাউসে শেখ হাসিনা পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান মোদী। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বসার তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়েও বৈঠক হয়েছে সেখানে। প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি এমওইউ ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরে সফর নিয়ে দুই নেতা সংবাদ সম্মেলনে আসেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজন করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজেরও। খবর বিডিনিউজের।

প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে সবশেষ নির্বাচনে জয়ী দুই সরকারপ্রধানের আগ্রহের মধ্যে এই সফর হচ্ছে। শেখ হাসিনার এই সফরে দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান। দুদিনের দ্বিপক্ষীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে দিল্লিতে ব্যস্ত সময় কাটান শেখ হাসিনা।

বিকেলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তার সচিবালয়ে শেখ হাসিনা সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি যান রাষ্ট্রপতি ভবনে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

এর আগে সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে দেওয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা। রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের একটি অশ্বারোহী দল রাষ্ট্রপতি ভবনের গেট থেকে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরকে সংবর্ধনাস্থল পর্যন্ত নিয়ে যায়। পরে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেয়। গার্ড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতও বাজানো হয়।

এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও তার সফরসঙ্গীদের পরিচয় করিয়ে দেন মোদীর সঙ্গে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজাঘাটে গিয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর (মহাত্মা গান্ধী) সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। সেখানে কিছুক্ষণ তিনি নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এছাড়া সেখানকার পরিদর্শন বইয়েও স্বাক্ষর করেন তিনি।

সফরের প্রথম দিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শুক্রবার বিকাল ৩টা ২৯ মিনিটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান শেখ হাসিনা। অর্ভ্যথনা শেষে বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী তার সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল তাজ প্যালেসে যান। প্রথম দিন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পথে চ্যালেঞ্জগুলো সংলাপের মাধ্যমে দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

আর জয়শঙ্কর বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে, এই সম্পর্ককে এখন নতুন অধ্যায়ে নেওয়া যেতে পারে। একই দিনে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বৈঠক করে তাদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। দুদিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ৬টা ২০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দর ত্যাগ করে এবং ফ্লাইটটি রাত ৮ টা ২৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম থেকে বাস যাবে কলকাতায়
পরবর্তী নিবন্ধইউরো কাপে ড্র করলো জর্জিয়া ও চেক রিপাবলিক