সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড–মেরিন ড্রাইভ থেকে মীরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক চার লেইন ও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে (সীতাকুণ্ড অংশে বড় দারোগারহাট থেকে ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড পর্যন্ত) এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে বা ফ্লাইওভার নির্মাণের মতামত দিয়েছেন এলাকাবাসী।
বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন থেকে ছয় লেইনে উন্নীত করা সরকারের একটি আগ্রাধিকার প্রকৃয়াধীন প্রকল্প। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ ইতিপূর্বে একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা বিভিন্ন স্তরে সমীক্ষা চালাচ্ছেন। গতকাল বুধবার সীতাকুণ্ড সদর মুক্তিযোদ্ধা ভবন চত্বরে অনুষ্ঠিত স্থানীয়দের সাথে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের মত বিনিময় সভায় এলাকাবাসী একথা বলেন।
এলাকাবাসীর মতামত উপস্থাপনে জানান, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেইট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার দূরত্বের মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশ অর্থাৎ বড় দারগাহাট হতে ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড–মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার অত্যান্ত ঘন বসতি এলাকা। মহাসড়ক ছয় লেইনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হলে এলাকার বহু সরকারি স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প– কারখানা, হাট–বাজার, বাড়ি–ঘর, পেট্রোলপাম্প, সিএনজি স্টেশন, হাসপাতাল, মসজিদ–মন্দির, কবরস্থান, শ্বশানসহ শত শত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা উচ্ছেদ হয়ে যাবে। তাছাড়া মহাসড়কের দুই পাশে থাকা হাজার হাজার বিরল প্রজাতির বৃক্ষ এবং জীববৈচিত্র অধিগ্রহণের মধ্যে পড়বে। এরজন্য সরকারকে অনেক টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমতাব্যবস্থায় সীতাকুণ্ডবাসী ও দেশের স্বার্থে দুইটি বিকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে মতামত সভায়।
প্রথম প্রস্তাব হলো : সমুদ্র উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে নির্মিত বেড়ি বাঁধের উপর মেরিন ড্রাইভ সড়ক ফৌজদারহাট (ডিসি পার্ক) হতে মীরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক চার লেনে উন্নীত করা। উল্লেখ্য, টেকনাফ হতে কঙবাজার পর্যন্ত ৯৮ কি মি এবং আনোয়ারা হতে ট্যানেল হয়ে ফৌজদারহাট ডিসি পার্ক পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এতে ট্যানেল ব্যবহার শতভাগে উন্নীত হবে এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও মেরিন ড্রাইভ সড়ককে বেড়িবাঁধ হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে সীতাকুণ্ড–মীরসরাইবাসী ঘূর্ণিঝড়–জলোচ্ছ্বাস, সুনামী হতে রক্ষা পাবে। তাছাড়া উপকূলীয় বেড়ি বাঁধের উভয় পাশে পূর্বে অধিগ্রহণ করা সরকারী খাস জায়গা রয়েছে। ফলে তেমন বেশী কোন ক্ষতিপূরণ লাগবে না। মেরিন ড্রাইভের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তাছাড়া মাটির ও তেমন সমস্যা হবে না।
দ্বিতীয় প্রস্তার হলো : ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের (সীতাকুণ্ড অংশে বড় দারগাহাট হতে ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড পর্যন্ত) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা। এলাকাবাসীর ধারনা এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে পাশাপাশি আন্ডারপাস, ওভারপাস এবং সার্ভিস সড়ক করা হলে আগামী ২০/৩০ বছর ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের উল্লিখিত অংশে আর কোন কাজ করতে হবে না।
উপস্থিত এলাকাবাসী মতামতে জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের বারবার বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা পড়ে। তাছাড়া বর্তমানে চার লেইন পার হতেই অনেক কষ্ট, রাস্তা পার হতে অনেক জীবনহানি হচ্ছে। ছয় লেইন হলে যানজট কম হলেও গাড়ি দ্রুত চলাচল করবে তাতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। তাই সীতাকুন্ডবাসীর প্রাণের দাবি ছয় লেইন নয় এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে বা ফ্লাইওভার নির্মাণ করে জনসাধারণের ভোগান্তি বা জানমালের ক্ষতি থেকে রেহাই পেতে পারে, মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে ভারী যানগুলো পোর্ট থেকে মীরস্বরাই চলাচলে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা।
সভায় বক্তব্য রাখেন সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মাষ্টার আবুল কাসেম, সীতাকুণ্ড উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সৈয়দ আবুল মনছুর, সীতাকুণ্ড সমাজ কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দীন, সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম চৌধুরী, লিটন কুমার চৌধুরী, খায়রুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক মো. জাফর ছাদেক, দিদার হোসেন টুটুল, নাছির উদ্দিন অনিক, কামরুল ইসলাম দুলু, এস এম ইকবাল হোসাইন, সুনন্দা ভট্রাচার্য্য সাগর প্রমুখ।