অবশেষে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ‘লাইফলাইন’ খ্যাত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে কোথাও ছয় লেন, কোথাও আট লেন হবে। আর এ সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত নকশা ও সমীক্ষার কাজ আগামী মার্চে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেটের দূরত্ব ২৩২ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার জোগান দেবে।
২০২৪ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালে সড়ক প্রশস্তের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর ঢাকা অংশের তিনটি জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার; যা বাস্তবায়নে খরচ হবে ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আরেকটি প্রকল্প হবে বৃহত্তর কুমিল্লা অংশের দুটি জেলায় (কুমিল্লা ও ফেনী)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। আরেকটি বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর
চট্টগ্রাম অংশে; যেটি হবে মূলত ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) জাকির হোসেন বলেন, তিনটি প্রকল্প নেওয়ার কারণ, এত বড় প্রকল্প একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা কঠিন। তাছাড়া এত বিপুল পরিমাণ অর্থ একসঙ্গে কেউই দিতে রাজি হবে না। সে কারণে কাজ ভাগ করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকটে প্রকল্পের পুরো টাকা সরকারি কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। অর্থায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের অনুরোধ জানাতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তিনটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পরিকল্পনা কমিশন থেকে এখন তিনটি প্রকল্প অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হবে। কোন কোন দেশ ও সংস্থা এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করবে তা খোঁজ করবে ইআরডি। অবশ্য তিনটি প্রকল্প এখনও ইআরডিতে পাঠায়নি কমিশন।
এর আগে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ২০০৬ সালে একটি প্রকল্প নিয়েছিল সরকার। দুই দফায় বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পের খরচ ২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায় ঠেকে। নানা ঝক্কি–ঝামেলার পর কুল্লিার দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার চার লেন সড়কটি ২০১৬ সালে চালু হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক। চার লেন দিয়ে এখন চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। যানজটের কারণে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি আট লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছি। আট লেনে উন্নীত হলে যানজট কমবে, খরচও কমবে।