ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল নিয়ে ভিন্ন নিয়ম থাকা উচিত নয় : বাণিজ্যমন্ত্রী

সপ্তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রপ্তানি মেলা উদ্বোধন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক্সেল লোড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আপত্তি শুনছি। আসলে ওজন স্কেল নিয়ে সারাদেশের জন্য এক নিয়ম আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জন্য ভিন্ন নিয়ম, এটা আসলে থাকা উচিত নয়। কারণ আমাদের পরিশেষে ভোক্তাদের বিষয়টি দেখতে হবে।
ট্রাকে পণ্য পরিবহনে যদি এভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তাহলে পণ্যের দামের ওপর প্রভাব পড়বে। এতে জনিসপত্রের দাম বাড়বে। যা সাধারণ মানুষের জন্যে হবে কষ্টকর। আমি আবারো সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে কথাটা বলবো, এই সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে। সারাদেশে যেভাবে আছে, সেভাবেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে করা হোক। এখন অনেক বড় এক্সেলের গাড়ি হচ্ছে। এতে লোড ডিস্ট্রিবিউট হয়ে যাচ্ছে। সায়েন্টিফিকভাবে দেখে শুনে একটা চিন্তা করা উচিত বলে আমি মনে করি। গতকাল সকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়ামে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজিত সপ্তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রপ্তানি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আজকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের মেলাটিকে আন্তর্জাতিক নাম দেয়া হয়েছে। আমরা চাই আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ব বাজারে যাত্রা শুরু হোক। এসব মেলার পণ্য দেখে বিদেশি লোকজন আমাদের উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। এভাবে দেখা যাবে আমাদের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির সুযোগ বাড়বে। বর্তমানে আমাদের একমাত্র পোশাক শিল্প খাত থেকে ৮৩-৮৪ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে। অন্য যে সব আইটেম আছে সেগুলোর রপ্তানি বাড়ুক তা আমরা চাইছি। অন্তত বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাক। তবে সুখের বিষয় যে, গত দুই বছরে আমাদের চার-পাঁচটা আইটেম বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, লাইটিং মেশিনারিজ, আইটি প্রোডাক্ট, আইসিটি সেক্টরের পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট আন্তর্জাতিক বাজারে বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। আজকে ১৫১ দেশে আমাদের ওষুধ রপ্তানি হয়। সিরামিক পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা রয়েছে। আমাদের সামনের দিনগুলোতে একটা সম্ভাবনাময় সময় আসছে। একটা কথা আছে বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। অর্থাৎ ভাগ্য পরিবর্তন করতে হয় বাণিজ্য দিয়ে।
অনুষ্ঠানে বাজারে ৫ লিটার তেলের দাম হাজার টাকার ওপরে, এর মধ্যে আবার প্রতি বোতলে তেল তিনশ গ্রাম করে কম থাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বিষয়টি ভোক্তা অধিকার দেখবে। আমি বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা দেবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শোভা পাচ্ছে এটি অত্যন্ত আনন্দের। আমাদের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বেশি। বাকি পণ্যগুলোও রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। একটা বিষয় হচ্ছে-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আজকে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলের কথা বলা হচ্ছে, আমার মতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এই ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল প্রত্যাহার করতে হবে। এই স্কেল প্রত্যাহারের জন্য ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি আমি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, বাণিজ্য মেলা শুধুমাত্র পণ্যের কেনা বেচার মেলা নয়। এই বাণিজ্য মেলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ ও তার সাথে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করা। সেই দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় এই বাণিজ্য মেলা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নয়নে একটি সুদূরপ্রসারী মাইল ফলক হিসাবে কাজ করে থাকে। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রতি বছর এই বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে থাকে। ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের সকল প্রকল্পের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হোক, দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উন্নীত হোক, বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, এখানে একটা কথা উঠে আসছে, চট্টগ্রামের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। ১৩ টনের ওপরে কোনো ট্রাক চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারছে না। আসলে ১৩ হচ্ছে আনলাকি ১৩ নম্বর। সুতরাং এই ১৩টা উঠে যাওয়াই উচিত। চট্টগ্রামের জন্য আনলাকি হয়ে বসে আছে। আমাদের দেশে হাতে বানানো বিভিন্ন পণ্য বিদেশে যথেষ্ট চাহিদা আছে। হাতে বানানো জিনিসের দাম পশ্চিমা দেশে অনেক বেশি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এবং বাণিজ্যমেলার কো-আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ওজন স্কেল নিয়ে বৈষম্যের শিকার। আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি ও দৈনিক পূর্বকোণের প্রকাশক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, পরিচালক প্রফেসর জাহাঙ্গীর চৌধুরীসহ প্রমুখ। প্রায় ৮৫ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে শুরু হওয়া মেলায় ৬টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ২০০টি স্টল এবং শিশুদের জন্য কিডস জোন করা হয়েছে। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০ বছর ৯ মাস পর পলোগ্রাউন্ডে কাল বিএনপির গণসমাবেশ
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি সমাবেশের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালে দাঁতভাঙা জবাব