ঢাকা ও চট্টগ্রামের গ্যাস সংকট দুয়েকদিনের মধ্যে মিটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে গ্যাসের যে সংকট রয়েছে আমরা আশা করছি আগামী দুই–একদিনের মধ্যেই তা কমে অনেক ভালো অবস্থায় আসবে। এটা আমাদের জন্য একটি সুখবর। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে সবার জন্য মিটার লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গতকাল রোববার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। দেশে চলমান গ্যাস–বিদ্যুতের সমস্যা আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে কমে আসবে বলে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন। সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। দুদিন যাবত গ্যাসে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। শুক্র ও শনিবার মারাত্মক গ্যাস সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এখন সমস্যা কেটে যাচ্ছে। এফএসআরইউ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। আজকে লোডশেডিংও তেমন ছিল না। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে জটিলতার কারণে গত কয়েকদিন ধরে দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট চলছে। দেশে দৈনিক ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবারে সমস্যা শুরু হওয়ার আগে সর্বোচ্চ ৩২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছিল। আমাদের দুটি ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ)। একটির কাজ করাতে ড্রাই ডকিংয়ের জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। তারা ফিসে এসে পুনঃসংযোগ করার সময় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। দ্বিতীয় এফএসআরইউতেও কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে আপাতত আজকের দিনে আমাদের দুটিই চালু আছে।
রাজধানীর অনেক এলাকায় প্রতি শীতেই গ্যাসের চাপ কম থাকে। এবার পরিস্থিতি আরও করুণ হয়েছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঢাকার অনেক আবাসিক এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস থাকছে না। রাতে গ্যাস পাওয়া গেলেও তাতে চাপ থাকে না বললেই চলে। এর মধ্যে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে শুক্রবার দিনভর চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। গভীর রাতে এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ শুরু হলে শনিবার বিকালে শহরের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা গ্যাস পেতে শুরু করেন।
গ্যাস না থাকার কারণে বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ব্যাপক সমস্যার পাশাপাশি শিল্প কারখানাগুলোয় উৎপাদন ব্যাহত হয়। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় যানবাহনের চালকরা পড়েন ভোগান্তিতে। গ্যাসের এই সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকটের সমাধানে এলপিজির দিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে চাচ্ছি আমরা। এলপিজি এখন গাড়িতেও ব্যবহার হচ্ছে, বাসাবাড়িতেও হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন প্রায় ৭৫ শতাংশ আবাসিক গ্রাহক এলপিজি ব্যবহার করে। অল্পসংখ্যক গ্রাহক বাসাবাড়িতে চুলায় গ্যাস ব্যবহার করেন। আমরা এলপিজিকে ডায়নামিক প্রাইসে নিয়ে এসেছি।
আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাস না পেলেও তাদের নিয়মিত বিল পরিশোধের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হামিদ বলেন, শিল্পখাত বাদ দিলে সব মিলিয়ে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ লাখ হতে পারে। এই গ্রাহকদের আমরা আস্তে আস্তে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসছি। দুই থেকে তিন বছরের মাথায় সব বাড়িতে প্রিপেইড মিটার বসানো হবে। পাঁচ থেকে সাত বছর আগে জাইকার তহবিল পেয়েছিলাম, এটা চলমান প্রক্রিয়া। এখন আরও ২০ লাখ মিটার লাগাতে হবে। এই প্রকল্পের জন্য আমরা মোটামুটি অর্থের সম্ভাবনা পেয়েছি।
দেশে এরই মধ্যে সাড়ে চার লাখ গ্যাস মিটার বসানো হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী তিন বছরে সবার জন্য গ্যাস মিটার লাগানোই আমাদের লক্ষ্য। বহুদিন যাবৎ আমরা গ্যাস মিটার বসানো শুরু করার চেষ্টা করেছিলাম। এজন্য অর্থের প্রয়োজন, সেটাও আমরা পেয়ে গেছি। বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান অর্থায়ন করছে। আমরা অচিরেই টেন্ডার করে কাজ শুরু করব।