ঢাকা এয়ারপোর্টে হয়রানি

এমরান হোসাইন | মঙ্গলবার , ২১ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা এয়ারপোর্টে আড়াইঘণ্টা। শুক্রবার; ১০অক্টোবর সকাল ১০টা। কাতার এয়ারওয়েজঢাকার আকাশ ছুঁয়ে বিমান বন্দর রানওয়ে টাচ করলো। বড্ডক্লান্তি ভাব নিয়ে যথারীতি প্লেন থেকে এয়ারপোর্টে ঢুকলাম। সাথে আমার স্ত্রী।

দীর্ঘ ২৬ ঘণ্টা জার্নি করার পর বিমান বন্দরে নেমে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে চোখে পড়লো; বিদেশী পোসপোর্টধারীদেশী পোসপোর্টধারী যাত্রীদের দুটি লাইনে অসহায় ক্লান্তশ্রান্ত বাংলাদেশীরা দাঁড়িয়ে। দেশী পোসর্পোটধারীর লাইনটা নড়লেও বিদেশী পোসপোর্টধারী যাত্রীদের মূর্তির মত অনড়। নড়াচড়া নেই। আমার সামনে ২৫৩০জন পেছনে ৬০৭০ জন যাত্রী। সবার হাতে পৃথিবীর হরেক রংয়ের নানাদেশের পাসপোর্ট। সবার মধ্যে চোখেমুখে স্বজনদের সাথে দেখা করার একটা তাড়না। যাকে ‘এশিয়ান ইমোশন’ বলে অনেকে বলে থাকেন। এরপর পুলিশী সওয়ালজবাব। তারপর ধাপের পর ধাপ। আমার সামনে অতিশয় এক ভদ্রলোক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তাঁকেও প্রশ্নবানে জর্জরিত করা হলো। ফাঁকে উনার সাথে কথা হলোতিনি মৃদূ হেসে বললেন; ওৎড়হু ড়ভ ভধঃব। লাইন নড়াচড়া না দেখে; আমি সামনে গিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে জানতে চাইলাম লাইনে সমস্যা কী। উনি আমাকে উত্তরে বললেনআপনি কোথায় ৎবললাম মাঝামাঝি। চটজলদি উনি (পুলিশ) বললেনদেরী হবে। এক যাত্রীর হাতে একটা ফরম দেখে জানতে চাইলাম এটা কী। উনি বললেন এটা আপনাকে পূরণ করে লাইনে দাঁড়াতে হবে। ইতোমধ্যে আমার লাইনে দাঁড়ানোর টাইম পার হয়েছে ৩৯মিনিট। আমার স্ত্রীকে বললাম তুমি গিয়ে ফরম দুটি ফিলআউট করে নিয়ে আসআমি লাইনে আছি। সে গিয়ে ফরম নিল। নামঠিকানা, বয়স, আগমননির্গমন, পোসপোর্ট নাম্বার লিখে দ্রুত লাইনে আসলো। তারপরতো আরেক কাণ্ড। সামনে দুসাদা চামড়ার লোকজনকে লাইন থেকে সরিয়ে কোথায় জানি নিয়ে যাচ্ছেন একজন ইমিগ্রেশন পুলিশ। কাউন্টার থেকে একজন চলে যাওয়াতে বাকি একজন পুলিশ (আনইফিশিয়ান) লাইনটাকে আরও স্লো করে দিলেন। তখন ১১:২৫। বলে রাখা ভালো যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতার বিমান বন্দর ক্রস করতে সময় লেগেছিল ১ঘণ্টা। এরপর সামনের লোকজন ধীরেধীরে এগুতে থাকলো। বেশ কজনকে পুলিশ চৌদ্দগোষ্ঠির নাম ফরমের বাইরে হয়রানীমূলক প্রশ্ন করতে থাকে। আমি তা খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকি। এবার আমার পালা। কথার স্টাইল থেকে বুঝতে কষ্ট হয়নি উনি (পুলিশ ) আমাকে অযাথা প্রশ্ন করবেন। আমি খুব ক্লান্ত। এদিকে আমার লোকাল ঢাকাচট্টগ্রাম ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে। তারপরও অহেতুক তিনি দেশে কদিন থাকবো। কখনকোথায় থাকবো জানতে চাই। উনাকে বললামআমাকে এসি ইমিগ্রেশনের নাম্বার দিন। তখন হঠাৎ আকাশ ভেঙে পড়লেন। পাশে বসা অপরজন বললেনস্যার আপনি যান। এরপর আবার জামেলাঝটলা, সেখানে পাসপোর্ট চেক করা হচ্ছে। অসহ্য। এরপর ল্যাগেজ কালেকশন। কী এক নতুন বাংলাদেশে আসলাম। জুলাই বিপ্লবের পর অনেক আশা নিয়ে দেশে এসে আবারও আশাহত হলাম। আমার স্ত্রী বললামতুমি এখানে দাড়াঁও আমি ল্যাগেজের কী অবস্থা দেখি। দেখলাম আমার বেওয়ারিশ ল্যাগেজের পাশে একজন পাহাড়া দিচ্ছেন। উনি আমাকে অফার করলেনস্যার আপনার কী গাড়ি লাগবে? সবকিছু আমি আপনাকে হেলপ করবো। বাহ চমৎকার। উনাকে শরীরে হাতপা সবই আছে বলে বিদায় দিলাম। তারপর ভেতর দিয়ে আভ্যন্তরীন ফ্লাইট ধরতে যেতে দুজায়গায় স্ক্যান, তার আগে আরেক দফা স্ক্যান। মোট তিন দফা স্ক্যান। উনাদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন ছিল। আমার এ লাগেজ পৃথিবীর নিঁখুত স্ক্যান মেশিনে স্ক্যান শেষে এখানে এসেছে। দুইজায়গায় জুতা খোলা মহা বিরক্তকর। অতক্ষণে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। যাক স্রষ্টার বিশেষ অনুগ্রহেঅভ্যন্তরীন ফ্লাইটের অপেক্ষা করলাম। যে জায়গায় সেখানে উদ্ভট প্রশ্রাবের গন্ধ। এখন ঘড়িতে ১:৩০ । ১:৪৫ টায় প্লেন চট্টগ্রামের পথে উড়াল দিলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশব্দ দূষণ নয়, নীরবতাও বিপজ্জনক
পরবর্তী নিবন্ধসেই রক্তমাখা দুপুরে: এক কিশোরের চোখে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’