নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে ওঠার মধ্যে আজ বুধবার ঢাকায় সমাবেশ করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা যেন সংঘাতের দিকে না গড়ায়, সেই জন্য পুলিশ দুই দলকে কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে।
বিএনপি সমাবেশ করবে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। দুপুর ২টার সেই সমাবেশ থেকে সরকার পতনে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির ব্যানারে; সেই ‘শান্তি সমাবেশ’ হবে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকে। খবর বিডিনিউজের।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে মতপার্থক্য চলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা যখন ঢাকায়, তখন এই দুই সমাবেশ হচ্ছে। সমাবেশের আগের দিন গতকাল সন্ধ্যার পর দুই পক্ষকে অনুমতি দেওয়ার কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ, সেই সঙ্গে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজকে পুলিশ কমিশনারের পক্ষে কমিশনারের স্পেশাল অ্যাসিসট্যান্ট সৈয়দ মামুন মোস্তফা সমাবেশের অনুমতিপত্র পাঠান। তাতে দুই দলকে ব্যানারের আড়ালে লাঠি–রড বহন না করা, রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য না দেওয়াসহ ২৩টি শর্ত দেওয়ার কথা জানিয়েছে ডিএমপি। দুই দলকে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে নয়া পল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে (পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানে) এবং আওয়ামী লীগকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট সংলগ্ন স্থানে।
দুই দলকেই ২৩ শর্ত : এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
অনুমোদিত স্থানেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনার সমাবেশস্থলে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক–শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক–শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না। অনুমোদিত স্থানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না। আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক– শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না। সমাবেশের কার্যক্রম ব্যতিত মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে। অনুমোদিত (২টা থেকে ৫টা) সময়ের মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। আইন–শৃক্সখলা পরিপন্থি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। উস্কানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
কোনো ধরনের লাঠি–সোটা বা ব্যানার–ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না। আইন–শৃক্সখলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।