ঢাকায় মেট্রো লাইনের বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যু

তদন্ত কমিটি, ৭ ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চালু

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রো লাইনের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকের এ ঘটনার পর মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, ফার্মগেট মেট্রো স্টেশনের নিচে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনের ফুটপাত দিয়ে এক পথচারী হেঁটে যাচ্ছিলেন। এমন সময় উপর থেকে বিয়ারিং প্যাড তার উপরে পড়লে সে স্পট ডেড হয়। নিহত ব্যক্তির নাম আবুল কালাম, গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি নিহতের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় ৭ ঘণ্টা পর মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কোম্পানি ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ দুপুর সোয়া ১টার দিকে বলেন, মেট্রোরেলের লাইনের গার্ডারের জয়েন্টের একটা বিয়ারিং খুলে নিচে পড়ে গেছে। একজন নাকি মারা গেছে; স্পটেই মারা গেছেন বলে শুনেছি। কম্পন প্রতিরোধের জন্য সেতু বা উড়াল সেতুতে ইলাস্টোমোরিক বিয়ারিং প্যাড বসানো থাকে। এ প্যাড নিওপ্রেন বা প্রাকৃতিক রাবার দিয়ে তৈরি, যা পিয়ার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো হয়। কোনোটির ভেতরে কয়েক পরতে থাকে স্টিলের কাঠামো আর উপরে থাকে রাবার। এগুলো ওজনে অনেক ভারী হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এটি পড়ে একজন মারা যাওয়ার পাশাপাশি ফুটপাতে একটি চায়ের দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আতিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমরা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ছিলাম। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হয়। ওই শব্দে পুরো বিল্ডিং কেঁপে ওঠে। আমরা মনে করেছিলাম কোনো গাড়ির চাকা ফেটেছে। পরে দেখি একটা লোক রাস্তায় পড়ে আছে। কালো একটা ভারী বস্তু তার মাথায় পড়েছে। মাথার এক পাশ থেঁতলে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ফার্মগেট ও বিজয় সরণির একটি অংশে মেট্রো লাইনের ভায়াডাক্টের চারটি স্প্রিং থেকে একটি স্প্রিং সরে যায়।

তদন্ত কমিটি : প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি নিহতের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকালে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পাঁচ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফকে। কমিটিতে কারিগরি ও প্রকৌশলগত ত্রুটি পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং সামরিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (এমআইএসটি) বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম তৌফিক হাসান, এমআইএসটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদুল ইসলাম এবং ডিএমটিসিএলের (লাইন) প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব। উপসচিব আসফিয়া সুলতানা কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

মন্ত্রণালয় বলছে, নিহতের দাফনকাফনের সব খরচ সরকার বহন করবে। সেই সঙ্গে নিহতের পরিবারের কেউ কর্মক্ষম ও বেকার থাকলে যোগ্যতা অনুযায়ী তার চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

৭ ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চালু : বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন নিহত হওয়ায় ঘটনায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় সাত ঘণ্টা পর মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। এমআরটি ৬ লাইনের আগারগাঁও থেকে উত্তরা অংশে ট্রেন চলাচল বিকালেই শুরু হয়েছিল। তবে শাহবাগ থেকে আগারগাঁও অংশে এখনো ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ফেইসবুক পেইজে গতকাল সন্ধ্যায় এক বার্তায় বলা হয়, মেট্রোরেলের সম্মানিত যাত্রী সাধারণের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, অদ্য বিকাল ৩ ঘটিকা হতে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা চালু করা হয়েছে। মতিঝিল হতে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা ৭টা ১৫ মিনিটে চালু হয়েছে।

আজকে বিদায় দিতে চাইনি : মেট্রো লাইনের বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ে প্রাণ হারানো আবুল কালামের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়েছে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের পরিবেশ। ৩৬ বছর বয়সী কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া গতকাল বিকালে মর্গের সামনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এক ছেলেকে কোলে নিয়ে তিনি বারবার বলছিলেন, আজকে (কালামকে) আমি বিদায় দিতে চাইনি। দরজা লাগাতেও যাইনি। আমার বাচ্চাদের কী হবে?

নিহতের ভাগ্নে শাহাদাত মর্গের সামনে বলেন, নিহত আবুল কালাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। পরিবার নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জে। ব্যবসায়িক কাজে নিয়মিত ফার্মগেট এলাকায় যাতায়াত করতেন। তার ছেলে আব্দুল্লাহর বয়স পাঁচ বছর, মেয়ে সুরাইয়া আক্তারের বয়স তিন বছর।

এ সময় মর্গে সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, সেতু বিভাগের সচিব আব্দুর রউফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদের সান্ত্বনা দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিকআপ সিএনজি সংঘর্ষে প্রাণ গেল মা-ছেলের
পরবর্তী নিবন্ধদুদকের রিমান্ডে আরামিটের তিন কর্মকর্তা