চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বহুল আলোচিত সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম রাজধানীর অভিজাত এলাকা বসুন্ধরায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে আত্মগোপনে ছিলেন। গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং পাঁচলাইশ থানা পুলিশের টিম ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালায়। গোপন খবরে পুলিশ তাকে ধরতে অভিযান চালাতেই সটকে পড়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি পালাতে পারেননি। ধরা পড়েন নগর পুলিশের বিশেষ টিমের আভিযানিক দলের হাতে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনস্ মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন নগর পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ–কমিশনার আমিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা তার অবস্থান নিশ্চিত করি এবং যখন আমাদের উপস্থিতি তিনি টের পান, তখন পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আমাদের আভিযানিক দলের তৎপরতার কারণে তাকে পালানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে গুলিবর্ষণের ঘটনায় মামলাসহ নগরীর বিভিন্ন থানার তার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ড, দখল, চাঁদাবাজি, পাহাড় কাটাসহ আরও একাধিক গুরুতর অভিযোগ। বিশেষ করে, গত বছরের ১৬ জুলাই নগরের ষোলশহর ও মুরাদপুর এলাকায় ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে জসিমের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্র–জনতার ওপর হামলা চালিয়ে গুলিবর্ষণ করেছিল। এই ঘটনায় তিনজন মারা যান এবং ৪০–৫০ জন গুরুতর আহত হন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ২টি হত্যা মামলা, ৩টি পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মামলা, ২টি চাঁদাবাজির মামলা, ২টি বিস্ফোরক আইনে মামলাসহ ১৮টি মামলা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় রুজু করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে ‘পাহাড়খেকো’ হিসেবে চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জসিমের নাম দেশব্যাপী বেশ আলোচিত। আকবর শাহ থানাধীন সরকারি জমি দখল করে এবং পাহাড় কেটে আবাসিক প্লট তৈরি বিক্রি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব চালাতেন পুরো আকবর শাহ এলাকায়।
২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে একটি দল নগরীর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটা পরিদর্শনে যান। এরপর কালির ছড়া খাল ভরাটের এলাকায় গেলে তারা বাধার মুখে পড়েন। অভিযোগ আছে কাউন্সিলর জসিমের নেতৃত্বে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। তারা প্রতিনিধিদলের গাড়ি আটকে রাখে, গাড়িতে ঢিল ছোড়ে। এ ঘটনায় তখন কাউন্সিলর জসিমসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলায় জসিমকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
এর আগে, ১৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর জসিমকে গ্রেপ্তারে রাতভর আকবর শাহ এলাকার একটি ভবনে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে সেখানে তাকে তখন পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মধ্যরাত ১২টার দিকে একে খান এলাকার বাসা থেকে আকবরশাহ থানা পুলিশের একটি দল জসিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে ডবলমুরিং থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।