বন্ধুর জন্মদিন থেকে আর বাসায় ফেরা হলো না নূর নবীর (১৪)। খুঁজতে খুঁজতে তার লাশ পাওয়া গেল চট্টগ্রামের হিলভিউ আবাসিক এলাকায়। নূর নবীর বাবা গোলাম রসুল বুঝতে পারছেন না এ কী হলো। কেন হলো। কীভাবে হলো। পুলিশও এখন পর্যন্ত কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছে তথ্য পেয়ে হিলভিউ সড়কের পাশে বন্ধ গ্যারেজের সামনে পড়ে থাকা নূর নবীর লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ ও জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচলাইশ থানার এসআই আফতাব আহমেদ আজাদীকে বলেন, ঢাকায় বন্ধুর জন্মদিন পালনের জন্য বের হয়ে সে চট্টগ্রামে কেন এলো, তার সেই বন্ধু কোথায়, অপহরণকারীরা কারা, রেললাইন ধরে তার সাথে হেঁটে যাওয়া তরুণটা কে – এ চার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলে আমরা খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারবো। নূর নবীর বড় ভাই রমজান হোসেন আজাদীকে জানান, গত ২১ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তার ছোট ভাই বন্ধুর জন্মদিন পালন এবং খেলাধুলা করতে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরিবারের সবাই মিলে তাকে আত্মীয়–স্বজনের বাসাসহ আশেপাশের সম্ভাব্য সকল স্থানে অনেক খোঁজাখুজি করেও পায়নি। একপর্যায়ে তার কয়েকজন বন্ধু জানায়, নূর নবী তাদের কাছে বলেছিল যে, সে বন্ধু হোসেনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। ২২ আগস্ট ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানায় একটা নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। এদিকে জানা গেছে, বন্ধু হোসেনও নিখোঁজ রয়েছে। তার পরিবারও যাত্রাবাড়ী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছে।
২২ আগস্ট দুপুর দুইটা ৫৫মিনিটে নূর নবীর পিতার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে তার ছেলের সন্ধান পেতে হলে তার ইমো নম্বরে ফোন দিতে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মামলার বাদী রমজান বলেন, আমার পিতার ইমো আইডি থেকে এসএমএস পাঠালে তারা জানায় যে, আমার ছোট ভাই বর্তমানে ইন্ডিয়া বর্ডারে আছে এবং তারা আমার ছোট ভাইয়ের একটি ছবি পাঠায়।
রমজান আরও জানান, অজ্ঞাতনামা আসামিরা বিভিন্ন সময়ে তাদের মোবাইল নম্বর ০১৯৫২–৪৫৫৮৩০, ০১৫৮১–৫২৬০১৩, ০১৫৬৬–০০৯৬২১ থেকে আমার পিতার কাছে ফোন করে। গত ২৪ আগস্ট দুপুরে তারা ইমোতে এসএমএস এর মাধ্যমে জানায় যে, তাদেরকে বিকাশ একাউন্ট নম্বর ০১৮২৫–৬৬১৬১৬ তে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে আমার ছোট ভাইকে সকাল বেলা বাসায় পৌঁছে দেবে। পরে আমি ওই নম্বরে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাই। তখন তারা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে আমাকে আমার ছোট ভাইয়ের একটি ভিডিও পাঠায় এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দেয়।
উক্ত ভিডিও ফুটেজে আমার ছোট ভাইকে চট্টগ্রামে ষোলশহর রেল স্টেশনে দেখতে পাই। পরে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে আজ সকাল আটটায় ষোলশহর রেল স্টেশনে পৌঁছি। একজন রেল কর্মকর্তাকে উক্ত ভিডিও ফুটেজ দেখাই। তিনি আমার ছোট ভাইকে দেখেননি বলে জানান। পরে ফোন করে আমাকে তিনি পাঁচলাইশ থানায় যোগাযোগ করতে বলেন। থানায় গিয়ে জানতে পারি আমার ভাই আর নাই। তাকে মাথা ও পেটের বাম পাশে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।