নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর। চট্টগ্রামের মানবিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব এমএ মারুফ গত রোববার ঢাকায় গিয়ে বিনাদোষে পুলিশের হাতে আটক হয়ে ৮ দিন যাবৎ কেরানিগঞ্জের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। অথচ ঘটনার সময় তিনি গিয়েছিলেন ২১ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে থাকা সিটি ভবনের ইম্পীরিয়্যাল টেইলার্সে ছোট ছেলে রিদুয়ানুল আরেফিনের পোশাক ডেলিভারি নিতে।
প্রকৃতপক্ষে তিনি জানতেন না যে, নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে গত ১০ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দুপুরে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে সমাবেশের ডাক দিয়েছিলো তিন মাস আগে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ।
তাঁদের এই কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
এদিন যুবলীগের কর্মী সন্দেহে কিছু বুঝে উঠার আগেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার করোনাকালের সম্মুখযোদ্ধা এমএ মারুফকে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা মারধর করে পুলিশে হস্তান্তর করেন। পরে সেখান থেকে পল্টন থানায় পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অন্তত ৮ নারীসহ ৪২ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
যদিও এমএ মারুফ গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে ডাকা সমাবেশ কিংবা কোন আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন না। শুধুমাত্র নিজের ছোট সন্তান রিদুয়ানুল একটি বিশেষ বাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড (ISSB) একাডেমিতে পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এ জন্য ওই বাহিনীর নিয়ম মতে যে ড্রেস কোডের প্রয়োজন হয়, মূলত সেই পোশাক কিনতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ইম্পীরিয়্যাল টেইলার্সে যান।
এমন আকস্মিক ঘটনায় চট্টগ্রামের মানবিক আইনজীবী এডভোকেট হাসান তারেক, এডভোকেট আবু তৈয়ব, মানবাধিকার সংগঠক জিয়া হাবিব আহসান ও তার আত্মীয় স্বজনসহ পরিবারের লোকজন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেননা, বিনাদোষে একজন ব্যক্তি জেলে যাওয়া আর কারাগারে বাস করা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে বাঁধাগ্রস্ত বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
জানা গেছে, মানবিক ব্যক্তিত্ব খ্যাত এমএ মারুফ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের (৮ নম্বর ওয়ার্ড) মির্জা বাড়ির মৃত কবির আহমদের ছেলে। যিনি সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সংস্থা থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন শাখা থেকে একাধিক সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন।
তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্ণফুলী শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য সম্মাননা পদকে ভূষিত হন এমএ মারুফ। ২০১৯ সালে ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল ইতিহাস মঞ্চ ভারত শাখার সাংস্কৃতিক সম্মেলনে মানবাধিকার সংগঠক হিসেবে সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন।
এছাড়াও এমএ মারুফ চরপাথরঘাটার সামাজিক সংগঠন দুরন্ত দূর্বারের সাবেক সভপতি, আয়ুব বিবি সিটি কর্পোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাস্তবায়ন কমিটি সদস্য সচিব, আজিম হাকিম স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্টাতা সহ-সভাপতি, পটিয়া সমিতির দপ্তর সম্পাদক, চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ক্লাব ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি, কর্ণফুলী থানা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব।দ, চরপাথরঘাটা মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাব ও জাগরণী সংঘের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সবচেয়ে বড় বিষয় দেশে ভয়াবহ করোনাকালীন সময়ে মৃত্যুমুখে পতিত সাধারণ মানুষের পাশে থেকে গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন সবার প্রিয় এই মানবিক এম এ মারুফ। পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে যার খ্যাতি ছড়িয়েছে।
স্বজনদের দাবি, মানবিক বিবেচনায় অতি শিগগিরই যেন এমএ মারুফ মুক্তি লাভ করেন। সে লক্ষ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রসঙ্গত, পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত রোববার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে পল্টন থানা–পুলিশ ৪২ জন এবং শাহবাগ থানা–পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়।