নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাট করেও বরিশালের কাছে হেরে গিয়েছিল রাজশাহী। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে এসে জয় তুলে নিয়েছে এনামুল হক বিজয়ের দল। যদিও এই ম্যাচে রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলে ৭ উইকেট নিলেন তাসকিন আহমেদ। তবু লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় ঢাকা ক্যাপিটালস। দুর্বার রাজশাহীর শুরুটাও হলো নড়বড়ে। তবে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শঙ্কার মেঘ উড়িয়ে দিলেন এনামুল হক ও রায়ান বার্ল। প্রথম জয়ের স্বাদ পেল রাজশাহী। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে তাসকিনের ৭ উইকেট নেওয়ার দিন রাজশাহীর জয়ও ৭ উইকেটে।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা ঢাকার ব্যাটিং অর্ডার কাঁপিয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রানে ৭ উইকেট নেন তাসকিন। তবু শাহাদাত হোসেন, স্টিফেন এসকেনাজির ব্যাটে ১৭৪ রানের সংগ্রহ পায় ঢাকা। ঢাকার দুই ওপেনারকে শুরুতেই ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠান তাসকিন। দ্বিতীয় ওভারে ইয়াসির আলি চৌধুরীর হাতে ক্যাচ দেন লিটন কুমার দাস। পাঁচ বলে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। পরের ওভারে কট বিহাইন্ড হন তানজিদ হাসান। এরপর দলের হাল ধরেন এসকেনাজি ও শাহাদাত। মাত্র ৪৭ বলে দুজন মিলে গড়ে তোলেন ৭৯ রানের জুটি। দুজনের পাল্টা আক্রমণে পাওয়ার প্লেতে ৫৬ রান পায় ঢাকা। চতুর্থ ওভারে তাসকিনের বলে জোড়া চার মারেন শাহাদাত। পরের ওভারে শফিউল ইসলামের বলে দুটি ছক্কার পর চার মারেন এসকেনাজি। মোহর শেখের ওভারে দুটি চার মেরে দলের পঞ্চাশ পূর্ণ করেন শাহাদাত। নবম ওভারে সাব্বির হোসেনের বলে তিনটি চার মারেন এসকেনাজি। এক ওভার পর তাকে থামান হাসান মুরাদ। বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ২৯ বলে ৪৬ রান করেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। এরপর ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন থিসারা পেরেরা। কিন্তু মোহরের বলে আবার ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন ঢাকা অধিনায়ক। দুই ছক্কা ও এক চারে তিনি করেন ৯ বলে ২১ রান। পরের ওভারে টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন শাহাদাত। এরপর টিকতে পারেননি। সপ্তদশ ওভারে নতুন স্পেলে ফিরে শাহাদাতকে আউট করেন তাসকিন। একই ওভারে চাতুরাঙ্গা ডি সিলভার উইকেটও নেন তিনি। তাসকিনের জোড়া ধাক্কার পর শুভাম রঞ্জন ও আলাউদ্দিন বাবুর ঝড়ে দুই ওভারে ৩২ রান করে ঢাকা। রায়ান বার্লের বলে দুই চারের মাঝে ছক্কায় ওড়ান শুভাম। পরের ওভারে শফিউলের বল ছক্কায় ওড়ান আলাউদ্দিন। তবে ঢাকার শেষটা প্রত্যাশামতো করতে দেননি তাসকিন। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আলাউদ্দিনকে ফিরিয়ে তিনি পূর্ণ করেন টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট। পরের বলে বোল্ড মুকিদুল ইসলাম। হ্যাটট্রিক বল ঠেকিয়ে দেন নাজমুল ইসলাম। পরের বলে শুভামকে ক্যাচ আউট করে সাত উইকেটের বিরল অর্জনে নাম লেখান তাসকিন। মাত্র ১৯ রানে তার শিকার ৭টি।
জবাবে ব্যাট করতে নামা রাজশাহী প্রথম ওভারেই প্রথম উইকেট হারায়। মুস্তাফিজুর রহমানের তৃতীয় বলে চার মারেন মোহাম্মদ হারিস। পরের বলে মারেন ছক্কা। তবে টিকতে পারেননি তিনি। পঞ্চম বলেই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিং রুমে পাঠিয়ে দেন মুস্তাফিজ। চতুর্থ ওভারে আরেক ওপেনার জিসান আলমের উইকেট হারায় রাজশাহী। মুকিদুল ইসলামের বল পুল করার চেষ্টায় ক্যাচ দেন তরুণ ওপেনার। ৮ বলে কোনো রান করতে পারেননি জিসান। এরপর ইয়াসির রাব্বিকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন এনামুল। দুজন মিলে ৩৩ বলে যোগ করেন ৪২ রান। আগের ম্যাচে ঝড় তোলা রাব্বি এবার ২০ বলে করেন ২২ রান। ১০ ওভার শেষে রাজশাহীর স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৭৭ রান। এরপর ঢাকার বোলারদের নিয়ে একরকম ছেলেখেলাই করেন এনামুল ও বার্ল। চতুর্থ উইকেটে দুজন মিলে মাত্র ৫৬ বলে গড়ে তোলেন ১০৬ রানের জুটি। একাদশ ওভারে শুভামের বলে দুটি চার মারেন এনামুল। নাজমুলের বল পরপর দুই ছক্কা মারেন বার্ল। পরের ওভারে মুকিদুলের বলে হ্যাটট্রিক চার মারেন জিম্বাবুয়ে অলরাউন্ডার। পঞ্চদশ ওভারে পেরেরার বলে ছক্কা মেরে টানা দ্বিতীয় ও সবমিলিয়ে ১৭তম ফিফটি স্পর্শ করেন এনামুল। শেষ পর্যন্ত ১১ বল বাকি থাকতে জয় নিয়ে ফিরেন এনামুল। ৪৬ বলে ৯টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৭৩ রান করে অপরাজিত থাকেন এনামুল। আর রায়ান বার্ল অপরাজিত ছিলেন ৩৩ বলে ৫৫ রান করে। ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছেন তাসকিন আহমেদ।