ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা (১৯৩৪– ১৯৬৯)। ১৮ ফেব্রুয়ারি। ইতিহাসের সেই দিন, যেদিন এক মহান বাঙালি শিক্ষক বলেছিলেন, ‘ছাত্রদের গায়ে গুলি লাগার আগে সেই গুলি আমার বুকে লাগবে।’ তিনি বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহার জন্ম ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মে, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায়। পিতা মুহম্মদ আব্দুর রশীদ। শামসুজ্জোহার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় পশ্চিমবঙ্গে। বাঁকুড়া জিলা স্কুলে তিনি ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ করে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এবং বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। দেশবিভাগের পর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমদিকে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে শামসুজ্জোহা তার পরিবার নিয়ে পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হন। শহীদ ড. শামসুজ্জোহা একটি নাম, একটি ইতিহাস। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ১৯৬৬–এর ছয় দফা ও ১১ দফা দাবিতে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে গণ–আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে মিছিল করা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান শহীদ হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সেনানিবাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়। আন্দোলনকারী ছাত্ররা মিছিল বের করলে অনেক ছাত্রের জীবননাশের আশঙ্কা থাকায় প্রক্টর শামসুজ্জোহা নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সেনাসদস্যদের। কিন্তু সেনাসদস্যরা দ্বারা ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে তিনি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের দেশবিভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এই প্রথম কোনো বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হলো ড. শামসুজ্জোহার নাম। শহীদ ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুর ৩৯ বছর পর ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্র তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে।