সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের সময় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তান এত দীর্ঘদিন পরও বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায়নি কেন জানতে চাইলে তিনি দম্ভভরে বলেছেন,‘দু’বার বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে’। তাঁর এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যে দেশে পরম বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসাইন তাঁর ঐ উক্তি গ্রহণযোগ্য নয় দাবি করে বলেছেন,‘১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে’। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই অবস্থান সত্ত্বেও ইসহাক দারের সফরের সময় বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ও উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমি এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করছি। ইসহাক দারের উপর্যুক্ত দাম্ভিক উক্তির পর আর কোন আলাপ–আলোচনা চালানোই বাংলাদেশের উচিত হয়নি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নয়। অতএব, গণহত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ত্রিশ লাখ মানুষের মৃত্যু এবং কয়েক লাখ মা–বোনের সম্ভ্রম হানির জন্য দায়ী শত্রুরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে বিনাশর্তে বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য বর্তমান সরকার এত লালায়িত কেন তা সরকারের কর্তাব্যক্তিদেরকে প্রশ্ন করতেই হচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট–পরিবর্তনের পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল সরকার প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানপন্থী এবং ভারতবিরোধী থাকার সুবাদে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার বিষয়টি দু’দেশের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করেনি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসেই বিষয়টি দু’দেশের সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রধান শর্তে পরিণত করায় আওয়ামী লীগের ১৯৯৬–২০০১ মেয়াদে দু’দেশের সম্পর্ক তলানীতে চলে যায়। কিন্তু, ২০০১ সালে বিএনপি–জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে আবার পাকিস্তান বাংলাদেশের প্রধান বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়। বিএনপি–জামায়াত জোটের ২০০১–২০০৬ শাসনের মেয়াদে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ামকের ভূমিকায় চলে এসেছিল। ফলে, ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর জঙ্গি গোষ্ঠিগুলো বাংলাদেশে অভয়ারণ্য পেয়ে যায়, এবং ঐসব গোষ্ঠিগুলোর অস্ত্রশস্ত্র যোগানের প্রধান রুটে পরিণত হয়ে যায় বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে দশট্রাক অস্ত্রশস্ত্রের চালানটি ধরা পড়ে যাওয়ার পর বিষয়টি সারা বিশ্বের নজরে চলে আসে। ঐ বছর ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় বর্বর গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডগুলো পাকিস্তানের আইএসআই কর্তৃক সরবরাহ করা হয়েছিল বলে ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। ঐ সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের কর্তাব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ মদদে ঐ হামলার প্রধান কুশীলবরা পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল সেটাও ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। ২০০১–৬ মেয়াদে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সারা দেশে সশস্ত্র বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠির অভূতপূর্ব তান্ডব শুরু হয়ে গিয়েছিল। হংকং থেকে প্রকাশিত ‘ফার ইস্টার্ন ইকনমিক রিভিউ’ ঐ সময় বাংলাদেশকে ‘কুকুন অব টেরর’ নামে অভিহিত করেছিল সেটা এদ্দিনে হয়তো আমরা ভুলে গেছি। ২০০৫ সালে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় একই সময়ে বোমা–বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠিগুলো জাতিকে জানান্ দিয়েছিল যে তারা দেশের ক্ষমতা দখলের জন্য প্রস্তুত। ২০০৭–৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাংলাদেশ ঐ বেলাগাম জঙ্গিপনা ও তান্ডব থেকে মুক্তি পেয়েছিল। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় ফিরে এসে শেখ হাসিনা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এরপর যখন তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু করেন তখন পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আবার তলানীতে গিয়ে ঠেকে। ঐ বিচারের বিরুদ্ধে পাকিস্তান বিশ্বের সকল প্রভাবশালী দেশে প্রোপাগান্ডা–যুদ্ধ চালিয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক হিসেবে শেখ হাসিনা গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবার পাকিস্তানপন্থীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আসীন হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। এরপর আবার শুরু হয়ে যায় পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার পুরানো খেলা, যার ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর।
কিন্তু, এই পাকিস্তান–প্রেমীরা জাতিকে কি ভুলিয়ে দিতে পারবে পাকিস্তান তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে কীভাবে ঔপনিবেশিক বঞ্চনা, লুন্ঠন, পুঁজি–পাচার, বৈষম্য ও শোষণের শিকার করেছিল? ‘বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলনের’ যেসব নেতা সরকারের উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেছে তাদের মধ্যে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাডারদের আধিক্য থাকার বিষয়টি জনগণের কাছে ধরা পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি’ বলে নূতন রাজনৈতিক দল গড়ে তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখতে তৎপর রয়েছে। তাদের কেউ কেউ এমনও বলা শুরু করেছে যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল ‘দুই ভাইয়ের ঝগড়া’। তাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে নাকি ১৯৪৭ সালের চেতনা এবং ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করাই বেশি যুক্তিযুক্ত। জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ–সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির, ১৯৭১ সালে যার নাম ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ, তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরেধিতা করেই ক্ষান্ত ছিল না, তারা সরাসরি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ‘অক্সিলারী ফোর্স’ হিসেবে আল–বদর ও আল–শামস বাহিনী গঠনের মাধ্যমে গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছিল। জামায়াতে ইসলামী গত ৫৪ বছরেও তাদের ‘মানবতা–বিরোধী অপরাধের’ জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। ১৯৪৭–১৯৭১—এই চব্বিশ বছর ধরে পূর্ব বাংলা এবং পূর্ব পাকিস্তানকে তদানীন্তন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠি যেভাবে ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ’ হিসেবে লুন্ঠন, শোষণ, বঞ্চনা, পুঁজিপাচার ও অমানুষিক নিপীড়নের অসহায় শিকারে পরিণত করেছিল সে সম্পর্কে গত ৫৪ বছরে সব তথ্য–উপাত্ত এখন বিশ্বের সামনে উদঘাটিত হয়েছে। এতদ্সত্ত্বেও বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী কোন বাঙালি কীভাবে আজো পাকি–প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকে?
১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলার জনগণ ছিল পাকিস্তানের জনগণের ৫৬ শতাংশ, কিন্তু পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল বা প্রধানমন্ত্রীর পদ কোন বাঙালিকে দেওয়া হয়নি। একমাত্র জাতীয় সংসদের স্পীকার ছিলেন বাঙালি তমিজউদ্দিন খান। যদিও ঐ–পর্যায়ে পূর্ব বাংলা অর্থনৈতিকভাবে পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর–পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানের তুলনায় খানিকটা এগিয়ে ছিল কিন্তু ২৪ বছরের অভ্যন্তরীণ–ঔপনিবেশিকপর্বের শেষে এসে পাঞ্জাব এবং করাচী অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানের চাইতে অনেকখানি সমৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালে পাঞ্জাব ও করাচীর মাথাপিছু জিডিপি পূর্ব পাকিস্তানের জিডিপি’র ৭০ শতাংশ বেশি ছিল। স্বাধীনতা–উত্তর ৫৪ বছরে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন বারবার বিঘ্নিত হলেও পাকিস্তানের চাইতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেকখানি এগিয়ে গেছে, যা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের জনগণের জন্য কতখানি যৌক্তিক ছিল। ঐ ২৪ বছর যে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ’ হিসেবে শোষিত, বঞ্চিত ও লুন্ঠিত হয়েছিল সেটার অকাট্য প্রমাণ হিসেবে স্বাধীন–বাংলাদেশ এবং বর্তমান পাকিস্তানের তুলনামূলক তথ্য–উপাত্তগুলো যথেষ্ট প্রমাণিত হবে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের তুলনাটা দেখুন:
১) মাথাপিছু জিডিপি’তে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের চাইতে ৭০ শতাংশ পিছিয়ে ছিল, কিন্তু ২০২৫ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় ৬৫ শতাংশ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ২০২৫ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ২৮২০ ডলারে, আর পাকিস্তানে তা রয়ে গেছে ১৫৪৭ ডলারে।
২) বাংলাদেশের রপ্তানি আয় পাকিস্তানের চাইতে ২০ বিলিয়ন ডলার বেশি, ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরে তা ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
৩) বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস–রিজার্ভ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৩১ বিলিয়ন ডলার, যেটা পাকিস্তানের দ্বিগুণেরও বেশি।
৪) বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু ৭২.৪ বছর, পাকিস্তানের ৬৬ বছর।
৫) বাংলাদেশের জনগণের সাক্ষরতার হার ৭৬ শতাংশ, আর পাকিস্তানের ৫৯ শতাংশ।
৬) বাংলাদেশের মোট জিডিপি ৪৬২ বিলিয়ন ডলার, আর পাকিস্তানের ৩৪৬ বিলিয়ন ডলার।
৭) বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.১২ শতাংশ, আর পাকিস্তানের ২.১ শতাংশ। ফলে, পাকিস্তানের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটিতে, আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা সাড়ে ১৭ কোটির সামান্য বেশি।
৮) বাংলাদেশের ১২১/১২২ টাকায় এক ডলার পাওয়া যায়, পাকিস্তানে এক ডলার কিনতে ২৮০ রুপি লাগে। অথচ, ২০০৭ সাল পর্যন্ত রুপি’র বৈদেশিক মান টাকার তুলনায় আট শতাংশ বেশি ছিল।
৯) বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ জিডিপি’র ২২ শতাংশ, অথচ পাকিস্তানে তা জিডিপি’র ৪৬ শতাংশ।
১০) বাংলাদেশের নারীদের ৪১ শতাংশ বাড়ীর আঙিনার বাইরে কর্মরত, পাকিস্তানে এই অনুপাত মাত্র ১৪ শতাংশ।
১১) বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২১, আর পাকিস্তানে ৫৯।
১২) বাংলাদেশের শতভাগ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে, অথচ পাকিস্তানের ৭৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
উপরের তথ্য–উপাত্তগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, পাকিস্তান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৌড়ে আর কখনোই বাংলাদেশের নাগাল পাবে না ইনশাআল্লাহ। পাকিস্তানের জনগণ এখন বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য খুবই আগ্রহী, কিন্তু ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের সামরিক–বাহিনী–সমর্থিত শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের কাছে এখনো ক্ষমা প্রার্থনায় রাজি নয়। সেজন্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্তাব্যক্তি এবং বিএনপি–জামায়াতের নেতা–কর্মীদের কাছে আমার প্রশ্ন: বাংলাদেশ যেখানে একটি দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে পাকিস্তানকে গো–হারা হারিয়ে দৃপ্তপদে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে অযৌক্তিক পাকি–প্রেম কেন? পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের শিক্ষণীয় কিছুই নেই। জামায়াতের পাকিস্তানপন্থী রাজনীতি নিঃসন্দেহে স্বাধীনতা–বিরোধী বিধায় অগ্রহণযোগ্য। ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী, আমাদের সীমান্তের তিনদিক্ ঘিরে রয়েছে ভারত। তাই, ভারতের সাথে সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বজায় না রাখলে তারা নানাভাবে বাংলাদেশের স্বার্থহানি ঘটাতে পারে। কিন্তু, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই বললেই চলে। অর্থনৈতিকভাবে ক্রমশ পিছিয়ে পড়া পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে ২০২৫ সালে ষষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে, শুধু নেপাল ও আফগানিস্তান রয়েছে তাদের পেছনে। প্রায় সাত লাখ সৈন্যের সেনাবাহিনী পুষতে গিয়ে পাকিস্তান ক্রমশ একটি ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত হতে চলেছে, সেনাবাহিনী পাকিস্তানের অর্থনীতিকে অজগর সাপের মত গিলে খাচ্ছে। অনেকগুলো জঙ্গি বাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র, ট্রেনিং এবং গোয়েন্দা–সহায়তা দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব পুনর্বহাল করে আবার তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআ্ইকে এদেশে ঘাঁটি গেড়ে বসতে দিচ্ছে না তো? জামায়াত ও এনসিপি এখনো মুক্তিযুদ্ধকে মর্যাদা দিতে নারাজ, তারা ১৯৪৭ ও ২০২৪ সালকে স্বাধীনতা অভিহিত করছে। সংস্কারের নামে তারা ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলার ঔদ্ধত্যও দেখাতে পিছপাও হচ্ছে না। আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, জাতি এই ঔদ্ধত্যকে প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যান করবে। প্রফেসর ইউনূসের প্রতি আমার আহ্বান, আপনি নিজে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। কিন্তু, এখন জামায়াত ও এনসিপি’র স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি আপনার নমনীয়তা এবং অযৌক্তিক লাই দেওয়ার মানসিকতা আপনাকে ক্রমশ বিতর্কিত করে তুলছে। সময় থাকতে আপনি ভুল সংশোধনে যত্নবান হোন, নয়তো ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।