বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা অনেকখানি ফিরে এসেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২৫ সালে ১.৭০ বিলিয়ন ডলার বেড়ে মে মাসে গ্রস রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। আইএমএফ এর বিপিএম–৬ অনুসারে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। ডলারের দাম ১২২/১২৩ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে যে ১১টি ব্যাংক অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল তার মধ্যে দুটো ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক নিজেদের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন সহায়তা দিতে হয়নি। বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে টাকা ছাপিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সহায়তা দেওয়ায় ওগুলোও দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে হয়তো রক্ষা পেয়ে গেছে। তারপরও কুখ্যাত এস আলমের লুন্ঠনের শিকার ৪/৫টি ব্যাংকসহ ছয়টি ব্যাংকের অবস্থা এখনো খুবই কাহিল রয়ে যাওয়ায় ওগুলোকে মার্জারের মাধ্যমে বড় কোন ব্যাংকের সাথে একীভূত করার প্রক্রিয়া এখন এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডঃ আহসান মনসুর ইতোমধ্যেই কয়েকবার আশ্বাস দিয়েছেন যে এসব ব্যাংকের আমানতকারীরা তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পেতে কোন অসুবিধে হবে না, তাঁরা যখনই চাইবেন তখনই ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলতে পারবেন। উপরে আর্থিক খাতের যে চিত্রটা তুলে ধরা হলো সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, সেজন্য ডঃ মনসুরকে অজস্র অভিনন্দন।
একইসাথে এটাও বলতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক নীতি–নির্ধারণী টিমটি অত্যন্ত মেধাবী ও দক্ষ। এই টিমে পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থ উপদেষ্টা ডঃ সালেহউদ্দিন আহমদ এবং ডঃ আহসান মনসুরের পাশাপাশি এখন যুক্ত হয়েছেন আশিক চৌধুরী, ডঃ লুৎফে সিদ্দিকী ও ডঃ আনিসুজ্জামান চৌধুরীর মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। প্রফেসর ইউনূস নিজেও একজন বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক, যাঁর ক্ষুদ্রঋণ এবং সোশ্যাল বিজনেস আইডিয়ার পাশাপাশি ‘থ্রি জিরোস’ তত্ত্ব এখন সারা দুনিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করে চলেছে। এমন একজন বিশ্বনন্দিত অর্থনীতিবিদকে পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পথ–প্রদর্শক হিসেবে ব্যবহার না করে অন্ধ–প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অপরিসীম নির্যাতন ও হয়রানির শিকারে পরিণত করেছিলেন ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, রাষ্ট্রক্ষমতার চরমতম অপব্যবহারের মাধ্যমে তাঁর জীবনকে দুর্বিষহ করার কোন প্রয়াসকেই বাদ দেননি তিনি। এর ফলে প্রফেসর ইউনূসের জীবন চরম বিপর্যয়ে পড়ার পাশাপাশি দেশ এবং জাতি যে তাঁর অতুলনীয় উদ্ভাবনী–ক্ষমতা থেকে এই দেড় দশক বঞ্চিত হয়ে গেল তার ক্ষতিপূরণ তো আর কোনদিনই হবে না। তবুও আল্লাহতায়ালাহকে হাজারো শোকরিয়া যে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ–অভুত্থানের ফসল হিসেবে ৮ আগস্ট থেকে জাতি প্রফেসর ইউনূসকে রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত করতে পেরেছে, যার ফলে গত সাড়ে নয় মাসে দেশের অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা আরো বছরখানেক অব্যাহত রাখা গেলে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের জনগণের জন্য সত্যিকারভাবে একটি ‘রোল মডেলে’ পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
পরিবর্তনের এই ধারা অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে পড়তে শুরু করলেও আর্থিক খাতে সবচেয়ে বেশি সাফল্য বয়ে এনেছে। নিঃসন্দেহে একটি ‘অর্থনৈতিক মেল্টডাউন’ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে গেছে জাতি। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ লাই পেয়ে গত এক দশকে বিদেশে পুঁজি–পাচার দেশের অর্থনীতিতে ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক উন্নয়নের খেসারত হলো আঠারো লক্ষ কোটি টাকা ঋণের সাগরে জাতিকে ডুবিয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভুয়া বয়ান সৃষ্টির পাশাপাশি বেলাগাম পুঁজি–লুন্ঠন ও বিদেশে পুঁজি পাচারের এক অবিশ্বাস্য রেকর্ড সৃষ্টি। ঋণের সাগরে জাতিকে ডুবিয়ে দিয়ে হাসিনা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন। হাসিনা তাঁর স্বৈরাচারী শাসনামলে তাঁর পরিবার, আত্মীয়–স্বজন, দলীয় নেতা–কর্মী, কতিপয় অলিগার্ক–ব্যবসায়ী এবং পুঁজি–লুটেরাদেরকে সাথে নিয়ে সরকারী খাতের প্রকল্প থেকে যে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুন্ঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তার ভয়াবহ কাহিনী তাঁর পতনের পর উদ্ঘাটিত হতে শুরু করেছে। ৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দৈনিক বণিক বার্তার হেডলাইনের খবরে প্রকাশিত তথ্য–উপাত্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তারিখে বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে আঠারো লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অথচ, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার দিনে বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল মাত্র দুই লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার আট’শ ত্রিশ কোটি টাকা। এর মানে, এই দুই ঋণের স্থিতির অংকের পার্থক্য দাঁড়িয়েছে পনেরো লক্ষ আটান্নো হাজার দুই’শ ছয় কোটি টাকা। গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার আগে হাসিনা এই সুবিশাল আঠারো লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকার ঋণের সাগরে দেশের জনগণকে নিমজ্জিত করে প্রতি বছর মাথাপিছু জিডিপি’র উচ্চ–প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে চলেছিলেন, যাকে বলা চলে ‘নিকৃষ্টতম শুভংকরের ফাঁকি’ ও জনগণের সাথে ভয়ানক প্রতারণা। হাসিনার শাসনামলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার অজুহাতে একের পর এক মেগা–প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি সারা দেশে বেলাগামভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে শত শত উন্নয়ন প্রকল্প। প্রতিটি মেগা–প্রকল্পে প্রকৃত ব্যয়ের তিন–চার গুণ বেশি ব্যয় দেখানোর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা, যেজন্য এসব প্রকল্পের ব্যয় ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। গত সাড়ে পনেরো বছর ছিল দেশে দুর্নীতি ও পুঁজি–লুন্ঠনের মহোৎসব–কাল। এই পুঁজি–লুন্ঠনের কেন্দ্রে ছিল হাসিনা–পুত্র জয়, রেহানা–কন্যা টিউলিপ ও রেহানা–পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও তার পুত্র শেখ ফাহিম, শেখ হেলাল, তাঁর ভাই শেখ জুয়েল ও তাঁর পুত্র শেখ তন্ময়, সেরনিয়াবাত হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাঁর পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ, শেখ তাপস, শেখ পরশ, লিটন চৌধুরী ও নিক্সন চৌধুরী এবং হাসিনার অন্যান্য আত্মীয়–স্বজন। আর ছিল এস আলম, সালমান রহমান, সামিটের আজিজ খান, বসুন্ধরার আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রুপের ওবাইদুল করিম ও নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের মত লুটেরা অলিগার্ক ব্যবসায়ী এবং হাজার হাজার লুটেরা রাজনীতিবিদ ও দুর্নীতিবাজ আমলা।
আগস্টের ২৯ তারিখে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। কমিটি গত ১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রফেসর ইউনূসের কাছে তাদের শ্বেতপত্রটির খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শ্বেতপত্রটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়ন বয়ানের ব্যবচ্ছেদ’ (ডিসসেকশান অব এ ডেভেলাপমেন্ট নেরেটিভ)। ডঃ দেবপ্রিয় হাসিনার শাসনামলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ‘চামচা পুঁজিবাদ’ (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) থেকে সরাসরি ‘চোরতন্ত্রে’ (ক্লেপ্টোক্রেসি) রূপান্তরিত হওয়ার দাবি করেছেন। শ্বেতপত্র কমিটির গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বৈরশাসক হাসিনার সাড়ে পনেরো বছরের লুটপাটতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুন্ঠিত হয়ে দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি লুন্ঠনের শিকার হয়েছে ব্যাংকিং ও ফাইনেন্সিয়াল খাত, তারপর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত, তারপর ভৌত অবকাঠামো খাত এবং এরপর তথ্য প্রযুক্তি খাত। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, ভারত এবং কয়েকটি ‘ট্যাক্স হেভেন’ সবচেয়ে বেশি অর্থ–পাচারের সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। লুটেরা রাজনীতিবিদদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় অলিগার্ক ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের খেলোয়াড়, দুর্নীতিবাজ আমলা, ঠিকাদার ও মধ্যস্বত্বভোগী, হাসিনার আত্মীয়–স্বজন এবং ‘ইনফ্লুয়েন্স প্যাডলার’ ও ‘হুইলার–ডিলাররা’ এই লুটপাটতন্ত্রের প্রধান খেলোয়াড়। এই লুটেরারা পারষ্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে দেশের নির্বাহী বিভাগ, সিভিল প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহ, সরকারী রাজস্ব আহরণ বিভাগসমূহ ও বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগসমূহকে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফায়দা হাসিলের অংশীদার করে ফেলেছে। দেশের বিনিয়োগ ও রাজস্ব আহরণকে এরা দুর্বল করে ফেলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধস নামিয়েছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনকে তছনছ করে দিয়েছে।
সম্প্রতি ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার আইএমএফ এর ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। বলা হচ্ছে, আইএমএফ দুটো শর্তের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানে অসন্তুষ্ট: প্রথমটি হলো ডলারের বিনিময় হারকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করে ফেলার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি নয়, আর দ্বিতীয়টি হলো সরকারী রাজস্ব–জিডিপি’র অনুপাতকে বর্তমান আট শতাংশ থেকে দেড় শতাংশ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে সরকারের অনাগ্রহ। ডলারের দামকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করলে ঐ বাজারের ম্যানিপুলেটর ও এগ্রিগ্রেটরদের তান্ডবে ডলারের দাম বেলাগামভাবে বাড়তে বাড়তে ১৭০/১৮০ টাকায় উঠে যাওয়ার আশংকাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এই যুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছিল, তারা এখনই ডলারের দামকে বাজারভিত্তিক করে পাকিস্তান বা শ্রীলংকার মত ডলারের দাম–সংকট ডেকে আনতে চায় না। পাকিস্তানে এখন এক ডলারের দাম ২৮০ রুপি এবং শ্রীলংকায় ৪০০ রুপি। এর বিপরীতে বাংলাদেশে এক ডলারের দাম এক’শ বাইশ টাকায় স্থিতিশীল রাখা গেছে। ২০২৪ সালের জুনের পর বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ঋণের কিস্তির টাকা পায়নি। ঋণের অর্থ ব্যতিরেকেই যদি ডলারের দামকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ১.৭০ বিলিয়ন ডলার বাড়ানো সম্ভব হয় তাহলে বাংলাদেশ কেন আইএমএফ এর এহেন বিপজ্জনক শর্ত মেনে নেবে? এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে বাংলাদেশের এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে গত নয় মাস ধরে অফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স প্রবাহের অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির ধারার কারণে, যা আজো অব্যাহত রয়েছে। ডঃ মনসুর বলছেন, আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় না করলেও দেশের অর্থনীতির কোন ক্ষতি হবে না, কারণ এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাঁর এই সাহসী উচ্চারণের জন্য তাঁকে আবারো অভিনন্দন। রাজস্ব–জিডিাপ অনুপাত বাড়ানো সংক্রান্ত আইএমএফ এর শর্ত যৌক্তিক, কিন্তু এর বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। হাসিনা সরকারের পতনের পর হুন্ডিওয়ালাদের ব্যবসায় কিছুটা ধস নেমেছে। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে আগস্ট মাস থেকে যে অভূতপূর্ব জোয়ার পরিদৃষ্ট হয়ে চলেছে সেটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে যে এই কয়েক মাসে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থ–পাচার বেশ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সর্বাঙ্গীন মনিটরিং জারি রাখতে হবে যে হুন্ডি প্রক্রিয়া যেন কোনভাবেই আবার জেঁকে বসতে না পারে। মনে রাখতে হবে, গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী কয়েক মাসে অর্থনীতি ‘মেল্টডাউন’ এড়াতে সক্ষম হয়েছে প্রধানত বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সের অভূতপূর্ব জোয়ার, রফতানির প্রবৃদ্ধি এবং আমদানি–ব্যয়ের স্থিতিশীলতার কারণে। তাই এ–ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান কঠোর মনিটরিং শিথিল করা যাবে না।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়