ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান মন্তব্য করেছেন যে বাংলাদেশের জন্য সৌরবিদ্যুৎ সবচেয়ে উপযোগী বিদ্যুতের উৎস হিসেবে সরকারের অগ্রাধিকারের দাবিদার। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট জমি নেই বলে যে ধারণা রয়েছে সেটা ভুল। তিনি রেলওয়ের নিজস্ব জায়গা এবং মহাসড়কের পাশের জায়গার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, সরকারি জমিতে ভবিষ্যতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। বক্ষ্যমাণ কলামের প্রথমেই আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই জমির স্বল্পতার মিথ্যা ধারণাটি যে ভুল সেটা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি তাঁর সাথে একমত যে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে দশ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খুবই সম্ভব, যদি এব্যাপারে যথাযথ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। আমার কলামে আমি আরো কতগুলো সম্ভাব্য স্থানের তালিকা দেবো যেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা যাবে।

সৌরবিদ্যুতের প্রতি অবহেলা আমার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতকে বিদ্যুতের প্রধান সূত্রে পরিণত করা সময়ের দাবি। অথচ, ২০২৪ সালের মার্চের এক হিসাব মতে বাংলাদেশে মাত্র ১১৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছিল নবায়নযোগ্য উৎসগুলো থেকে। আরো দুঃখজনক হলো, বেশ কয়েকটি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলচালিত রেন্টাল ও কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের সাথে সরকারের চুক্তির মেয়াদ বহুদিন আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও এসব প্ল্যান্টের মালিকরা ঘুষদুর্নীতির মাধ্যমে তাঁদের চুক্তির মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে নিচ্ছিল। (এসব প্ল্যান্টের মালিক সাবেক সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয়স্বজন কিংবা তাঁর পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী)! এসব প্ল্যান্ট থেকে সরকার বিদ্যুৎ না কিনলেও ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দিতে হত, যা পিডিবি’র জন্য অসহনীয় বোঝায় পরিণত হয়েছিল। গত ১২ বছরে পিডিবি মোট ১,০৪,০০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করেছে বলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণায় জানানো হয়েছে। সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২০১০ সালের ‘দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ বিশেষ আইন’ (দায়অব্যাহতি অধ্যাদেশ) বাতিল ঘোষণা করেছে। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনটি পাওয়া গেলে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলচালিত রেন্টাল ও কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা থেকে দেশ মুক্তি পাবে।

বাংলাদেশের ‘সাসটেইনেবল এন্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলাপমেন্ট অথরিটি’ (ঝজঊউঅ) তাদের ঘোষিত ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপে ৩০,০০০ মেগাওয়াটের সোলার এনার্জির টার্গেট অর্জনের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে ১২,০০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ছাদভিত্তিক সোলার প্যানেল থেকে আহরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু, এই রোডম্যাপ ঘোষণার পর কয়েকবছর অতিবাহিত হলেও এই টার্গেট পূরণের উপযুক্ত কর্মসূচি গৃহীত হয়নি। দেশের বড় বড় নগর ও মফস্বল শহরগুলোর প্রাইভেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ীগুলোর ছাদ ব্যবহারের মাধ্যমে ৭৮ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন মোটেও অসম্ভব মনে হচ্ছে না, প্রয়োজন হবে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির ভর্তুকিদাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতির উপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস এবং যুগোপযোগী ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতি চালু করা। সম্প্রতি ভারতের সাধারণ নাগরিকদের বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর সূর্যোদয় যোজনা’ বা ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনা’ চালুর যে বিস্তারিত বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ার ইউটিউবে প্রচারিত হয়েছে তাতে ভারতীয় ৪৭,০০০ (সাতচল্লিশ হাজার) রুপি খরচে তিন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার সোলার প্যানেল বাড়ির ছাদে স্থাপন করতে চাইলে উল্লিখিত যোজনার কাছে আবেদন করার নিয়মগুলো পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। এই ব্যাখ্যা মোতাবেক মোট সাতচল্লিশ হাজার রুপি প্রাক্কলিত খরচের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮,০০০ (আঠার হাজার) রুপি ভর্তুকি প্রদান করা হবে, আর সোলার প্যানেল স্থাপনকারী ভোক্তাকে ব্যয় করতে হবে ২৯,০০০ (উনত্রিশ হাজার) রুপি। মোট এক কোটি পরিবারকে ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনায়’ অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। ইউটিউবে যোজনার পূর্ণ বিবরণ পাঠ করার পর আমার কাছে মনে হয়েছে এই মডেলটি সরাসরি বাংলাদেশে প্রয়োগযোগ্য ব্যবস্থা।

বাংলাদেশে বর্তমানে চারটি আমদানীকৃত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ বাস্তবায়িত হয়েছে। এগুলো হলো পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর প্রত্যেকটিই মেগাপ্রকল্প, যেগুলো থেকে প্রায় ৫২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু, এই প্ল্যান্টগুলো স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাঝখানে বাংলাদেশ ও বিশ্বের জ্বালানি খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অনেকখানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মারাত্মক ধস নামায় এখন এই বর্ধিত দামে এসব বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানির ব্যাপারে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেকখানি সংকুচিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে অত্যন্ত কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে নিজেদের বাণিজ্য ঘাটতি ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট একাউন্টের ঘাটতিকে মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে। এর ফলে, নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও কয়লার অভাবে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রায়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে যে আমদানীকৃত কয়লানির্ভর বিদ্যুতের মেগাপ্রকল্প স্থাপনের পুরো ব্যাপারটিই বাংলাদেশের জন্য অসহনীয় বোঝা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে অত্যন্ত অন্যায্য শর্তে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করে গেছেন পতিত স্বৈরশাসক হাসিনা, যে চুক্তি থেকে বেরোনোর কোন উপায় এখনো খুঁজে পাচ্ছে না দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই চুক্তির শর্ত মোতাবেক অনেক বেশি দামে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতেই হবে আদানির ঝাড়খন্ডের গড্ডা প্রকল্প থেকে!

আমদানিকৃত এলএনজি’র ওপর নির্ভরশীলতা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকে ইতোমধ্যেই বড়সড় বিপদে ফেলে দিয়েছে। এলএনজিচালিত অনেকগুলো বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বন্ধ থাকছে ডলার সংকটের কারণে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেওয়ায়। প্রায় সাতাশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্যাপাসিটি অর্জন সত্ত্বেও দৈনিক উৎপাদনকে এখন তের/চৌদ্দ হাজার মেগাওয়াটে সীমিত রাখতে হচ্ছে। এই সংকটের জন্য প্রধানত দায়ী আমদানিকৃত এলএনজিনির্ভর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি, যার পাশাপাশি এখন কয়লানির্ভর মেগাপ্রকল্পগুলোও বড়সড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, কয়েকজন প্রভাবশালী এলএনজি আমদানিকারককে অন্যায্য সুবিধা দেওয়ার জন্য সাবেক সরকারের সময় এই আমদানিকৃত এলএনজিনির্ভরতার নীতি গৃহীত হয়েছিল। এই নীতির কারণে দৃশ্যত একদিকে ইচ্ছাকৃত অবহেলার শিকার হয়েছে গ্যাস অনুসন্ধান, আর অন্যদিকে যথাযথ অগ্রাধিকার পায়নি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে দেশের স্থলভাগে গত চৌদ্দ বছরে কয়েকটি ছোট ছোট গ্যাসকূপ ব্যতীত উল্লেখযোগ্য তেলগ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভোলা গ্যাসের উপর ভাসছে বলা হলেও ভোলার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে দেশের মূল ভূখন্ডে আনার কাজটি এখনো শুরু হয়নি! ২০১২ ও ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে মামলায় জিতে বাংলাদেশ এক লাখ আঠার হাজার আট’শ তের বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার নিয়ন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও মামলায় জেতার পর ১০/১২ বছরে সমুদ্রে গ্যাসঅনুসন্ধান চালানো হয়নি। বেশ কয়েকমাস আগে সমুদ্রসীমায় তেলগ্যাস অনুসন্ধানের জন্য পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করেছিল, কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। আমরা জানি যে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনের অদূরে মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমা থেকে পাঁচ টিসিএফ এর বেশি গ্যাস আহরণ করে চলেছে। একই ভূতাত্ত্বিক কাঠামো যেহেতু বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও রয়েছে তাই বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন এলাকার সমুদ্রেও গ্যাস পাওয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের দৃঢ় অভিমত। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরের গোদাবরী বেসিনে ভারতও ইতোমধ্যেই বিশাল গ্যাস ও তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে।

দেশের বিদ্যুৎ খাতের জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে চীন, ভারত ও ভিয়েতনামের সোলার পাওয়ারের সাফল্য কিভাবে অর্জিত হয়েছে তা জেনে এদেশের সোলারপাওয়ার নীতিকে অবিলম্বে ঢেলে সাজাতে হবে। সেজন্যই ভারতের ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা’কে অবিলম্বে বাংলাদেশে চালু করার আশু প্রয়োজন অনুভব করছি। বাড়ির মালিকদের জন্য এই ভর্তুকি কর্মসূচি তাদেরকে অবিলম্বে বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনে উৎসাহিত করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। গণচীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, ফিলিপাইন এবং জার্মানি ছাদভিত্তিক সোলার পাওয়ার উৎপাদনে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে। সোলার প্যানেল ও ‘ব্যাটারি’র দামে সুনির্দিষ্ট ভর্তুকি প্রদান এবং ভর্তুকিদামে ‘নেট মিটারিং’ স্থাপনে প্রণোদনা প্রদান এসব দেশের সাফল্য অর্জনের প্রধান উপাদান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ‘নেটমিটারিং’ প্রযুক্তি গণচীন থেকে এখন সুলভে আমদানি করা যাচ্ছে। অথচ, এক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি একেবারেই নগণ্য রয়ে গেল! রূপপুর পরমাণু শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য আমরা এক লক্ষ তের হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করছি, যেখান থেকে ২০২৫ সাল নাগাদ আমরা নাকি ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। ছাদভিত্তিক সোলারপাওয়ার প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিলে ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যয় রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মোট ব্যয়ের অর্ধেকও হতো না। অথচ, সৌরবিদ্যুৎ সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব এবং ঝুঁকিমুক্ত প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত, এক ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইতোমধ্যেই গণচীন, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশী দশ টাকার নিচে নেমে এসেছে। ১৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে দি ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ব্লুমবার্গের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ২০২৫ সালের পর সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অন্য সব বিকল্পের তুলনায় বাংলাদেশেও কমে আসবে। ২০৩০ সালে এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হবে মাত্র ৪২ ডলার, যেখানে এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে তা পড়বে ৯৪ ডলার এবং কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১১৮ ডলার।

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক খালি জায়গা লাগে বিধায় বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তা উৎপাদন সম্ভব নয় বলে যে ধারণা রয়েছে তাও ঠিক নয়। আমার প্রস্তাব, বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরাঞ্চলসমূহ, দেশের সমুদ্রউপকূল এবং নদনদী ও খালগুলোর দু’পারে সোলার প্যানেল স্থাপনের সম্ভাবনাটি খতিয়ে দেখা হোক্‌। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানায় যে কয়েক’শ চরাঞ্চল গড়ে উঠছে সেগুলোতে জনবসতি গড়ে ওঠার আগেই ওগুলোতে যদি বড় বড় সৌরবিদ্যুৎকামবায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা অগ্রাধিকার সহকারে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে অত্যন্ত সাশ্রয়ী পন্থায় কয়েক হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন আগামী চারপাঁচ বছরের মধ্যেই সম্ভব হবে। সম্প্রতি জার্মানি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বাংলাদেশকে বিপুলভাবে আর্থিক ও কারিগরী সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি নিউজক্লিপ জানিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশে জমির তুলনামূলক স্বল্পতার প্রকৃত সমাধান পাওয়া যাবে যদি দেশের বিশাল সমুদ্রউপকূলে একইসাথে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। সমুদ্রউপকূলের কথা জার্মানি বলেছে, আমি এর চাইতেও সম্ভাবনাময় মনে করি বঙ্গোপসাগরে নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলগুলোকে। এগুলোতে মানববসতি নেই, তাই ভূমি অধিগ্রহণের কোন ঝামেলাই হবে না। উপরন্তু, উৎপাদিত বিদ্যুৎ সাবমেরিনকেবলের মাধ্যমে দেশের মূল ভূখন্ডের বিদ্যুৎগ্রিডে নিয়ে আসাও খুব বেশি ব্যয়সাধ্য হওয়ার কথা নয়। ডেনমার্ক বাংলাদেশের সমুদ্রউপকূলে ১৩০০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে বিনিয়োগপ্রস্তাব বিগত সরকারের কাছে পেশ করেছিল তা অবিলম্বে গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের নদনদীর দু’পার ও চরসমূহ, বঙ্গোপসাগরের নতুন জেগে ওঠা চর এবং সমুদ্রউপকূলে এরকম বড় বড় সৌরবিদ্যুৎকামবায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করলে দেশের বিদ্যুতের চাহিদার অধিকাংশই নবায়নযোগ্য সোর্স থেকে আহরণ করা সম্ভব হবে। তাহলে আমদানীকৃত কয়লা ও এলএনজি’র ওপর অতিনির্ভরতা থেকে জাতি মুক্তি পাবে। সম্প্রতি সাবেক সরকারের সকল সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি বাতিল ঘোষণা করে প্রতিযোগিতামূলকভাবে নতুন চুক্তি সম্পাদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা আশা করছি, এর ফলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেকখানি হ্রাস পাবে।

 

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅতিথি পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাস জরুরি
পরবর্তী নিবন্ধআমান বাজারে খাজা গরিবে নেওয়াজ কনফারেন্স