ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

সাম্রাজ্যবাদের শক্তিশালী হাতিয়ার মার্কিন ডলারের বিশ্ব-আধিপত্য কি বিপন্ন?

| বৃহস্পতিবার , ২৫ জুলাই, ২০২৪ at ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

সাম্রাজ্যবাদকে মহামতি লেনিন অভিহিত করেছেন ‘পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর’। রাজনৈতিক অর্থনীতির তত্ত্বে সাম্রাজ্যবাদের তাত্ত্বিক নাম হলো ‘স্টেট মনোপলি ক্যাপিটালিজম’। মনোপলি ক্যাপিটালিজম শক্তিসঞ্চয়ের এক পর্যায়ে যখন রাষ্ট্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করে তখন রাষ্ট্রগুলো ঐসব মনোপলি ক্যাপিটালিস্টদের স্বার্থে দেশদখলের জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়। লেনিন ও বুখারিন সাম্রাজ্যবাদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদানের কৃতিত্বের দাবিদার। তাঁরা যখন লিখেছেন তখন সারা বিশ্বের প্রায় তিনচতুর্থাংশের মত দেশ কয়েকটি প্রধান পুঁজিবাদী দেশের ঔপনিবেশিক দখলদারির শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল কিংবা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির একচ্ছত্র ভূরাজনৈতিক আধিপত্যের অধীনে ছিল। এই সাম্রাজ্যবাদী দখলদারি নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে গিয়েই মানবজাতিকে দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধ উপহার দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো। গ্রেট বৃটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি উপনিবেশের মালিক, যাদের তুলনায় জার্মানির উপনিবেশ ছিল অনেক কম। কারণ, জার্মানি ১৮৭০ সালে যখন একত্রিকরণের মাধ্যমে একক দেশ হিসেবে গঠিত হয়েছিল তখন পুরানো ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো বিশ্বের বেশিরভাগ উপনিবেশের ওপর নিজেদের দখলদারি পাকাপোক্ত করে ফেলেছিল, এবং উপনিবেশগুলোর ভাগবাঁটোয়ারাও প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছিল। নিজেদের ভাগে আফ্রিকার উপনিবেশগুলোর ভাগবাঁটোয়ারা বাড়ানোর জন্য জার্মানি ১৮৮৬ সালে বার্লিন কনফারেন্সের আয়োজন করলেও তারা খুব বেশি সফল হতে পারেনি বৃটেন ও ফ্রান্সের যৌথ কূটচালের কারণে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানি ঐ অবস্থানের পরিবর্তন করতে চেয়েছিল, কিন্তু ১৯১৮ সালে তাদের শোচনীয় পরাজয় ঐ উদ্দেশ্যকে ভন্ডুল করে দিয়েছিল। বরং, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির মিত্রশক্তি অটোম্যান (ওসমানীয়) সাম্রাজ্য পরাজিত হওয়ায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের পূর্বইউরোপীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের সাম্রাজ্য পুরোপুরি বৃটেন ও ফ্রান্সের কাছে খুইয়ে ফেলার পাশাপাশি তারা সরাসরি অস্তিত্বের সংকটে পতিত হয়েছিল। বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ ও তাদের শাসকদের ক্ষমতাসীন হওয়া বৃটেন ও ফ্রান্সের সাম্রাজ্যবাদী ভাগবাঁটোয়ারার মাধ্যমেই হয়েছেএটা যেন আমরা ভুলে না যাই! মোস্তফা কামাল পাশা ঐ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে ঠেকিয়ে অটোম্যান সাম্রাজ্যের ভগ্নস্তুপের ওপর বর্তমান তুরস্ক রাষ্ট্রের জন্ম প্রদানের কারণে তাঁকে ‘আতাতুর্ক’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের পর জার্মানিকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের যে অপমানজনক বোঝা ভার্সাই যুক্তির মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেটাই জার্মান জাতিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন। এই যুদ্ধে বিশ্বের জনগণ প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণহানি সহ যে ভয়াবহ ধ্বংসলীলার সম্মুখীন হয়েছিল তার ফলে ঔপনিবেশিক কাঠামো পরিত্যাগ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল মনে করা হলেও প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদ শুধু রূপ ও কৌশল পরিবর্তন করেছে, সাম্রাজ্যবাদ এখনো বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির প্রধান নিয়ামক হিসেবে অটুট রয়ে গেছে। তৃতীয় বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ১৯৪৫৭৫ পর্বে সরাসরি ঔপনিবেশিক দখলদারি থেকে ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জন করলেও সাম্রাজ্যবাদীরাজনৈতিক আধিপত্য ও অর্থনৈতিক পরনির্ভরতার এক অবিচ্ছেদ্য জালে প্রায় সব দেশ গত ৭৯ বছর ধরে আটকা রয়েছে। বিশ্বসাম্রাজ্যবাদের এই ‘আধিপত্যপরনির্ভরতার’ জটাজালে সবচেয়ে ক্ষমতাধর অধিপতির ভূমিকা পালন করে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম ছিল ১৮১৫ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঔপনিবেশিক শক্তি গ্রেট বৃটেন। ১৯৪৫ সালে ‘সাম্রাজ্যবাদী সুপারপাওয়ার’ হিসেবে তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যাদের বিশ্বআধিপত্য এখনো বহাল রয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির মালিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নাগপাশের এক প্রভাবশালী সাম্রাজ্যবাদী হাতিয়ার হলো মার্কিন ডলার, যে নাগপাশ থেকে তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশই নিজেদেরকে মুক্ত রাখার অবকাশ বা সুযোগ এখনো সৃষ্টি হয়নি। ১৯৪৭ সালে সৃষ্ট ইন্টারন্যাশনাল মোনেটারি ফান্ড (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মাধ্যমে এই হাতিয়ারের জালবিস্তার শুরু হয়েছিল এর পূর্ববর্তী বৃটিশ পাউন্ড স্টার্লিং এর পরিবর্তে মার্কিন ডলারকে বিশ্বের যাবতীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মুদ্রাবিনিময় ও অর্থলেনদেনের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও বহুলব্যবহৃত মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে। আইএমএফ এর সিস্টেমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক গ্যারান্টির ভিত্তিতে ৩৫ ডলারে এক আউন্স সোনার দাম নির্ধারণ ও স্থিতিশীল রাখার মাধ্যমে এই ‘ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম’ চালু হয়েছিল। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আইএমএফ এর ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম কাজ করলেও বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষের দিকে ‘ডলার ক্রাইসিস বা গোল্ড ক্রাইসিসের’ সময় সিস্টেমটা ভেঙে পড়ে। স্বর্ণের দাম ঐ সময় হু হু করে বাড়তে বাড়তে এক আউন্স তিন’শ ডলার ছাড়িয়ে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা প্রকাশ করে, যার ফলে আইএমএফ এর ‘ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম’ ভেস্তে যায়। এর পরিবর্তে চালু করা হয় ‘ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম’, যেখানে স্বর্ণের দাম এবং বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বৈদেশিক দাম নির্ধারণ আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। (২০২৪ সালে এক আউন্স স্বর্ণের দাম ২,২০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে)। ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেমের কারণে ক্রমে ক্রমে সারা বিশ্বে পরম শক্তিশালী হয়ে উঠে মুদ্রা বেচাকেনার বাজার। গত ৫২ বছরে এই ‘কারেন্সি কেনাবেচার বাজারে’ মুদ্রা লেনদেন প্রতিদিন চার ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে এক বছরে ‘ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট‘ (এফডিআই) হয় ৮০০ বিলিয়ন ডলারের মত। চলমান তথ্যপ্রযুক্তিবিপ্লবের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারের দক্ষতা আকাশচুম্বী হয়ে পড়ছে ক্রমশ। বিশ্বমুদ্রাবাজারের একাধিপত্য এই ৫২ বছর ধরে বহাল রেখেছে মার্কিন ডলার। মার্কিনীদের রফতানি আয় আমদানি ব্যয়ের চাইতে প্রতি বছর অনেক কম হওয়ায় তাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট একাউন্টে নিয়মিতভাবে ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। অন্য কোন দেশ এরকম ঘাটতিতে পড়লে ঐ দেশের মুদ্রার বৈদেশিক মানে ধস নামতো, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রম। তাদের মুদ্রা ডলার যেহেতু বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের বৈদেশিকমুদ্রারিজার্ভের প্রধান অংশ তাই কোন দেশই চায় না ডলারের বৈদেশিক মানে ধস নামুক্‌। উদাহরণ হিসেবে চীনের ব্যাপারটা উল্লেখ করা যেতে পারে: চীন এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৈদেশিকমুদ্রারিজার্ভের মালিক হওয়া সত্ত্বেও তারা নিজেদের মুদ্রাকে ডলারের সাথে একটা স্থিতিশীল সম্পর্কে বহাল রাখতে চায়। নয়তো একদিকে তাদের কাছে ডলারের যে বিশাল মজুত রয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে তাদের রফতানী পণ্যের প্রতিযোগিতাসক্ষমতা ক্ষুণ্ন হবে। বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশ হয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক আধিপত্য অক্ষুণ্ন রাখতে সমর্থ হচ্ছে মার্কিন ডলারের এই ‘আনচ্যালেঞ্জড আধিপত্যের’ কারণে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান ডলারপ্রতি অফিশিয়ালি ৪.৭৬ টাকা হলেও আনঅফিশিয়ালি ছিল পনেরো টাকা। এখন এক ডলারের বাজার দাম বাংলাদেশ ব্যাংকনির্ধারিত বাজারে ১১৮ টাকা, আর কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার বিক্রি হয় ১২৮ টাকায়। গত আড়াই বছরে টাকার বৈদেশিক মান ৪৭ শতাংশেরও বেশি অবচয়ন হয়েছে। এর ফলে আমাদের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে এবং আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও বড়সড় ধস নেমেছে। অথচ আমরা এখনো ‘ফ্রিলিফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম’ চালু করিনি, ক্যাপিটাল একাউন্টে টাকা এখনো অবাধে বিনিময়যোগ্য করা হয়নি। আমরা ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি অনুসরণ করছি ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে। তবুও এক্ষেত্রে ডলারের দাম টাকার অংকে ক্রমশ আরো বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বিদ্যমান। ডলারের এহেন দামবৃদ্ধির ফলে ফর্মাল চ্যানেলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এর ফলে দেশের আমদানি ব্যয় আমাদের রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ দিয়ে মেটাতে না পারায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা থামানো যাচ্ছে না। শুধু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি না, ডলারের দামকে স্থিতিশীল রাখার জন্য সব দেশের সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়াস জারি রাখা সত্ত্বেও দিনদিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার এই প্রক্রিয়াকে থামাতে অসমর্থ হচ্ছে প্রায় সব দেশ। (পাকিস্তানে এক ডলারের দাম এখন ২৮০ রুপির আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে, যার ফলে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতির হার এখন ৩০ শতাংশে পৌঁছে গেছে)। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ এজেন্ট আইএমএফ তৃতীয় বিশ্বের সব দেশের ওপর সার্বক্ষণিক চাপ অব্যাহত রেখে চলেছে ক্রমশ ডলারের দাম দেশীয় মুদ্রায় বাড়ানোর ব্যাপারে। তাদের মতে সকল তৃতীয় বিশ্বের দেশে ডলারের তুলনায় মুদ্রাগুলো ‘অতিমূল্যায়িত’ রয়ে যাচ্ছে, তাই মুদ্রার অবচয়ন (ডেপ্রিসিয়েশন) আইএমএফ এর প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে সব সময় অন্তর্ভুক্ত থাকে। মনে রাখা প্রয়োজন, আইএমএফ সার্বক্ষণিকভাবে এই দাবি করে চলেছে মার্কিন ডলারকে মদদ দেওয়ার জন্য।

আমরা অনেকেই খেয়াল করি না যে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পুঁজি পাচার হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বের সকল দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে অভিবাসনের স্বর্গরাজ্য বিবেচিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যে ১৫১৬ বিলিয়ন ডলার চারটি প্রধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয় সেগুলোরও প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই চারটি প্রক্রিয়া হলো: ) আমদানিতে ওভারইনভয়েসিং, ) রফতানিতে আন্ডারইনভয়েসিং, ) রফতানি আয় দেশে ফেরত না আনা এবং ৪) হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে রেখে দিয়ে তার বিনিময়ে দেশের পুঁজি পাচারকারীরা হুন্ডিওয়ালাদের কাছে সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করে সহজেই অর্থপাচার সম্পন্ন করা। এই হুন্ডি প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যাংকের ঋণ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, এবং প্রথমোক্ত তিনটি প্রক্রিয়ার তুলনায় বর্তমানে হুন্ডি পদ্ধতিতে অর্থপাচার সবচেয়ে বহুলব্যবহৃত প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। এর মানে, পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ এখন ডলারসাম্রাজ্যবাদের অনেক বড় শিকারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের নগরেশহরেগ্রামেগঞ্জে এখন কার্বমার্কেটে ডলার কেনাবেচা হয়, যেটাকে সরকার কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। ডলারের এহেন দ্বৈতবাজার এদেশের অর্থনীতিতে ব্ল্যাকইকনমির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দখল করে ফেলেছে। অবশ্য, ব্রিকস সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ডলারের এই বিশ্বআধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তুলেছে। ব্রিকস দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি এখন বিশ্বের মোট জিডিপি’র ৩৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে, এবং এই অনুপাত ক্রমবর্ধমান। মনে হচ্ছে, আগামী এক দশকে ডলারের বিশ্বআধিপত্য খর্ব হয়ে যাবে।

লেখক: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধউচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা বিভাগ চালু করা দরকার
পরবর্তী নিবন্ধ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ করলে জরিমানা নয়