বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আরেকটি একতরফা নির্বাচন হয়ে গেলো। ২০১৪ সালের নির্বাচনটিও একতরফা নির্বাচন ছিল, কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক হওয়া সত্ত্বেও বিতর্কিত হয়েছিল। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, যদিও এর সাংবিধানিক বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচন এদেশে ১৯৭৩ সাল থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছিল, কারণ প্রতিটি নির্বাচনকেই সরকারী দল সিভিল প্রশাসন, আইন–শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও দলীয় মাস্তানদের মাধ্যমে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার একটা সংস্কৃতি প্রথম থেকেই এদেশে চালু করেছে। এহেন প্রেক্ষাপটে এবারের নির্বাচনটা আবারো ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে হওয়ায় বিএনপিসহ দেশের প্রধান বিরোধীদলগুলো এই নির্বাচন বয়কট করেছে। এবারের একতরফা নির্বাচনে ভোট সম্পন্ন হয়ে ফলাফল ঘোষিত ২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। কিন্তু, ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী যাঁরা জয়ী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৪ জন ছাড়া ৫৮ জন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী হওয়ায় ২৮১টি আসনে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হয়েছে বলা চলে। (জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ এবং কল্যাণ পার্টির বিজয়ী প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগ–সমর্থিত)। নির্বাচনের দিন বিকেল তিনটায় নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল তখন পর্যন্ত ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের পর এখন তারা বলছে, নির্বাচনে ৪১.৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। শেষের এক ঘন্টায় ১৪.৮৪ শতাংশ বৈধ ভোট পড়ার বিষয়টি একেবারেই অবিশ্বাস্য। নির্বাচন কমিশনের এসব দাবি কি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি?
এবারের নির্বাচনে ভোটার বাড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল। অভূতপূর্ব উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে প্রতিটি আসনে একাধিক আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যেই ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় অর্জনও করেছেন, যার মধ্যে ৫৮ জন আওয়ামী লীগার। ভোটার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নিঃসন্দেহে এই কৌশল ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে মিডিয়ার কল্যাণে দেখা গেল, দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে প্রায় সারাদিন ভোটের কেন্দ্রগুলো জনবিরল ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যে দীর্ঘ ভোটার লাইন দেখা গিয়েছিল এবার তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায়নি। প্রকাশিত ফলাফল থেকেও দেখা যাচ্ছে, যেসব আসনে ব্যালটে সিল মারার মহোৎসব চালানো হয়নি সেখানে ভোটের অনুপাত ২০ শতাংশের আশেপাশে ছিল। বিশেষত, ঢাকা নগরী ও আশেপাশের জেলাগুলোতে এরকম ভোটার অনুপাত পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ বা তারও বেশি ভোট যেসব বিজয়ী পেয়েছেন সেখানে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে কিনা সহজেই অনুমেয়। ওসব জায়গার বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে ‘ব্যালট–স্টাফিং’ চালানো হয়েছে বলে সন্দেহ করলে দোষণীয় হবে কি? এটা অনস্বীকার্য যে ভোটকেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদেরকে মোকাবেলা করার সাহস দেখানো তাঁদের চাকুরির জন্য নিশ্চিত বিপদ ডেকে আনবে। অতএব, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন হলে এহেন ভোট জালিয়াতি চলতেই থাকবে এদেশে।
নির্বাচনী জালিয়াতির এই বদ্ধমূল সংস্কৃতি থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যেই ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাশ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে কেয়ারটেকার সরকার আইন পাশ হওয়ার পর ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে। কিন্তু, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত চারটি নির্বাচনেই বাংলাদেশের জনগণ ক্ষমতাসীন দল বা জোটকে প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনটি অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছিল বলে দেশে–বিদেশে বহুল–প্রশংসিত হলেও পরাজয় মেনে নেয়নি বিএনপি। রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসকে ব্যবহার করে বেগম জিয়া বিজয়ী দল আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন, যে ষড়যন্ত্রটি এদেশে নিযুক্ত কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সহায়তায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা ভন্ডুল করে দিয়েছিলেন।
২০০১ সালের নির্বাচন ঘনিয়ে আসার আগেই রাষ্ট্রপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টাবৃন্দ, সিভিল আমলাতন্ত্রের ডিসি, এডিসি, ম্যাজিস্ট্রেট, ডিআইজি, এসপি, ডিএসপি, এএসপি, ওসি—সবার নির্বাচনকালীন ভূমিকাকে ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং–এ ব্যবহারের ফন্দি–ফিকিরগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর আয়ত্তে চলে আসে। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয়মাস আগে মার্চ মাসে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও পিছিয়ে গিয়েছিলেন। পত্র–পত্রিকায় কারণ উদঘাটন হলো যে স্বাধীনচেতা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের চাইতে তুলনামূলক নিরীহ প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানকে আওয়ামী লীগ অধিকতর নিরাপদ বিকল্প মনে করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে। নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ায় বিচারপতি লতিফুর রহমান যখন নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে তিনিই প্রধান উপদেষ্টা হতে যাচ্ছেন তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাসখানেক আগেই তিনি তাঁর ‘হোমওয়ার্ক’ শুরু করে দিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাও তাঁর হোমওয়ার্কে অংশগ্রহণ করেছেন আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব লাভের আগেই। একইসাথে, বিএনপি ও জামায়াতপন্থী কয়েকজন আমলাও গোপনে তাঁদের হোমওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছিলেন সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর মাঠ–পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যে ছক আওয়ামী লীগ সাজিয়ে রেখেছিল তা কিভাবে বিএনপি–জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদেরকে গণ–ট্রান্সফারের মাধ্যমে তছনছ করে দেওয়া যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুঈদ–মঈনুল–শাহজাহান কমিটিকে ব্যবহার করে ঐ বিএনপি–জামায়াতপন্থী কুশীলবরা দু’মাসেরও কম সময়ে ১৫২৬ জন কর্মকর্তার ট্রান্সফার সুসম্পন্ন করার কাহিনী পরবর্তীকালে ঐ কুশীলবদের কয়েকজনের পত্র–পত্রিকায় প্রদত্ত জবানিতেই খোলাসা হয়ে গিয়েছিল। এরপর বিএনপি দাবি তুলল, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে সারা দেশে—নয়তো আওয়ামী লীগের মাস্তানরা নাকি ভোটকেন্দ্র দখল করে রাখবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের এতৎসম্পর্কীয় সুপারিশ মেনে নিলেন প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন। সেনাবাহিনী মাঠে গিয়ে ধাওয়া দিল মাস্তান–পাতি মাস্তান–ক্যাডারদেরকে, পালিয়ে বাঁচল বীর–পুঙ্গবরা। কিন্তু, আওয়ামী ‘দুষ্টলোকদের’ খালি করা মাঠ যে বিএনপি–জামায়াতের ক্যাডার ও মাস্তানরা দখল করে নিয়েছিল ঐ সত্যটাও এদ্দিনে খোলাসা হয়ে গেছে। অতএব, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী বিপর্যয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল যে চরিত্রগতভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ক্ষমতাসীন দল–বিরোধী (ধহঃর–রহপঁসনবহঃ)।
২০০১–২০০৬ মেয়াদে বিএনপি–জামায়াত জোট সেনা বাহিনী, সিভিল প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনী থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিল আওয়ামীপন্থী ও মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদেরকে। সাতজন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে জেনারেল মইন ইউ আহমদকে সেনা বাহিনীর চীফ অব স্টাফ করা হলো। বঙ্গবন্ধুর কবর জেয়ারতের অপরাধে অপমানজনকভাবে ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে পদত্যাগে বাধ্য করে রাষ্ট্রপতি করা হলো প্রফেসর ইয়াজউদ্দিনকে। বিএনপি’র প্রাথমিক পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্পাদক বিচারপতি কে, এম, হাসানকে পুরস্কার হিসেবে হাইকোর্টে বিচারপতি করা হয়েছিল; তাঁকেই ২০০৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার অংক কষে বিএনপি’র ‘চাণক্য–প্রবররা’ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়স দু’বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছরে নির্ধারণ করে দিল। ধুরন্ধরদের এই ‘অতি চালাকি’ জনগণের কাছে ধরা পড়ে গেল, শুরু হয়ে গেল হাসান–বিরোধী প্রাণঘাতী আন্দোলন–সংগ্রাম। আন্দোলনের তীব্রতা উপলব্ধি করে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দুপুরেই বিচারপতি হাসান রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা হবার ব্যাপারে তাঁর অসম্মতি জানিয়ে দিলেন। কিন্তু, ঐ মহাগুরুত্বপূর্ণ খবরটা জাতিকে না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন মোবাইল টেলিফোনে তা জানালেন শুধু বেগম জিয়াকে। বেগম জিয়া তখন নয়াপল্টনের সভামঞ্চে। টিভি ক্যামেরায় আমরাও দেখলাম, তিনি কলটি রিসিভ করে ঐ সভার বক্তৃতা না দিয়েই তড়িঘড়ি মঞ্চ থেকে নেমে গাড়ীবহর নিয়ে সোজা চলে গেলেন বঙ্গভবনে। টিভি সাংবাদিকরা তাঁর ঐ রহস্যজনক ‘বঙ্গভবন–গমন’ অনেকখানি কভার করাতে আমরা দর্শকরাও জানলাম ব্যাপারটা। ঐদিন রাত সাড়ে এগারটায় বঙ্গভবন থেকে জাতিকে জানানো হয়েছিল যে স্বাস্থ্যগত কারণে বিচারপতি হাসান প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ব্যাপারে অপারগতা জানিয়েছেন। অথচ, ২৮ অক্টোবরের ঐ বিকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যার মধ্যেই নারকীয় দাঙ্গাহাঙ্গামায় এদেশের ১২ জন মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এসব মানুষের মৃত্যুর জন্য বেগম জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন কি নৈতিক দায় এড়াতে পারবেন? তাঁদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেকই সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধান অনুসারে বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরীকে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার অনুরোধ না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে গেলেন। তাঁর কট্টর বিএনপি–প্রেমের প্রমাণ পেয়ে চারজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করায় নতুন চার উপদেষ্টা নিয়োগ করে প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিন ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করতে এগিয়ে গেলেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তারিখে বেগম জিয়ার নির্দেশমত সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ পদে মেজর জেনারেল রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে নিয়োগের বন্দোবস্ত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিন। কিন্তু, ঐ খবর আগেভাগে ফাঁস হওয়াতে জেনারেল মইন ইউ আহমদ তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। এভাবেই ১/১১ তে বাংলাদেশ আবারো ছদ্মবেশী সেনা–শাসনের কবলে পড়েছিল। সেনা এস্টাবলিশমেন্টের ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ এবং দীর্ঘদিন শাসন করার খায়েস ব্যর্থ হওয়ায় তারা ২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল।
মূলকথা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ম্যানিপুলেশনের’ শিকার হয়েছে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬–৮ সালে। ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করলো অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক, কিন্তু প্রয়োজন মনে করলে আরো দুটো নির্বাচন ঐ ব্যবস্থায় হতে পারে। সুযোগ বুঝে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে দিলেন শেখ হাসিনা। আর, তখন থেকেই দেশের বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহালকে আন্দোলন–সংগ্রামের মূল দাবিতে পরিণত করলেও তাদের আন্দোলন–সংগ্রাম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশীদের বিরোধিতাকে তোয়াক্কা না করে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ আরেকটি একতরফা নির্বাচন করে ফেল্ল। বোঝা প্রয়োজন, গণ–অভ্যুত্থানে বাধ্য না হলে কোন ক্ষমতাসীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করবে না। জেনেশুনে পরবর্তী নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় কি কোন সরকার চাইতে পারে? কিন্তু, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটা এখন কট্টর আওয়ামীলীগ–সমর্থক ব্যতিরেকে দেশের জনগণের গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন কখনোই ‘নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা’ পাবে না এদেশে। এ ধরনের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে পারছে বারংবার, কিন্তু জনগণের কাছে সরকার পরিবর্তনের কোন বৈধ সুযোগ বা সাংবিধানিক ক্ষমতা থাকছে না। অতএব, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট দিনদিন মারাত্মক আকার ধারণ করতেই থাকবে। অস্বাভাবিক পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনের আশংকাও এহেন পরিস্থিতিতে বাড়বেই।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়