ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে সাম্প্রতিক টানাপড়েন
বিজেপি’র কট্টর হিন্দুত্ববাদের তিক্ত ফসল
বাংলাদেশ এবং ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কে সম্প্রতি বেশ টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। ভারতে বাংলাদেশি কথিত অবৈধ অভিবাসীরা ‘উইপোকা’ বা ‘ঘুণের’ মত ভারতীয় অর্থনীতিকে খেয়ে ফোকলা করে দিচ্ছে দাবি করে সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশকে তাচ্ছিল্য করার পর এই টানাপড়েন সংকটের আবর্তে নিপতিত হয়েছে। এমনিতেই কয়েকবছর ধরে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র বিভিন্ন স্তরের নেতারা বাংলাদেশের ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার সময় লাগামহীন ও অপমানজনক বুলি আওড়ানোর খাসলতকে বাহাদুরি হিসেবে জাহির করায় মেতে উঠেছিলেন। আরো দুঃখজনক হলো, স্রেফ অভ্যন্তরীণ সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে খোদ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও কট্টর মুসলিম-বিদ্বেষী মানসিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে কিছুদিন যাবত বন্ধুদেশ বাংলাদেশকে আক্রমণ করায় মেতে উঠেছিলেন, যেভাবে তিনি এবং বিজেপি’র নেতারা ‘ভারতের আজন্ম-শত্রু’ পাকিস্তানকে হরদম টার্গেট করে থাকেন। এই আক্রমণাত্মক সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতিকে পুঁজি করে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি আসাম ও ত্রিপুরার নির্বাচনে বাজিমাত করার পর এখন টার্গেট করেছেন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জীকে। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বাঙে অবৈধ বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়া ঠেকাতে অমিত শাহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পুরোপুরি ‘সীল’ করে দেওয়ার হুংকার তুলেছেন ইতোমধ্যেই। কোন সন্দেহ নেই, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভোটার যাওয়ার ব্যাপারটি বিজেপি’র কষ্টকল্পিত অভিযোগ।
পাঠকদের হয়তো মনে আছে, ২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদী ভারতের নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন নোবেল পুরস্কার-বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মোদীর চরম সাম্প্রদায়িকতা, হিন্দুত্ববাদ ও প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন, কিন্তু ২০১৪-১৯ সালের পাঁচ বছরের মেয়াদে তাঁর জনপ্রিয়তায় মোটেও ভাটার টান পরিলক্ষিত হয়নি। বরং, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি আরো বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুনর্নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মোদী সরকার একের পর এক হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়িত করে চলেছে, যার মধ্যে ভারতীয় সংবিধানে প্রদত্ত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিলোপ, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনশীপ (এনআরসি) আইন পাস এবং সর্বশেষ সিটিজেনশীপ এমেন্ডমেন্ট এক্ট (সিএএ) পাস সারা ভারতে এবং বিশ্বেও প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সিটিজেনশীপ এমেন্ডমেন্ট এক্টে যেভাবে মুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী অন্য সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা চরম বৈষম্যমূলক ও অগ্রহণযোগ্য সাম্প্রদায়িকতা। সেটা খোদ জাতিসংঘকেও ঘোষণা করতে হয়েছে, কিন্তু মোদী পুরোপুরি নির্বিকার। কারণ মোদী বুঝতে পেরেছেন, হিন্দুত্ববাদী চরম দক্ষিণপন্থী রাজনীতির আফিম এখন ভারতীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে নেশায় বুঁদ করে ফেলেছে। অতএব, আগামী কয়েকটি নির্বাচনেও বিজেপি’র বিজয়ের সম্ভাবনা এই আফিমের মৌতাতে বাড়বে বই কমবে না। ভারতের হিন্দু জনগণের বৃহদংশের মুসলিম-বিদ্বেষকে সুপরিকল্পিতভাবে উস্‌কে দিয়ে নরেন্দ্র মোদী ভারতের নব্য জনগণমনঅধিনায়ক বনে গেছেন। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে এখনো মোদীর বিজয়রথ ঢুকতে সমর্থ না হলেও আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ দখল করলে অবাক হবো না আমি! কিন্তু, এই সংকীর্ণ নির্বাচনী-রাজনীতির স্বার্থে যেভাবে মোদী এবং তাঁর দলের নেতারা বাংলাদেশকে ‘বলির পাঁঠা’ বানাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশ কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না ভেবে থাকলে মোদী বড় ধরনের ভুল করবেন।
নরেন্দ্র মোদী নিজেও যেমন কট্টর হিন্দুত্ববাদী, তাঁর বিজেপি’র নেতারা এবং ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরাও কট্টর হিন্দুত্ববাদী এবং মুসলিম-বিদ্বেষী। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যদিও নরেন্দ্র মোদীকে গুজরাটের দাঙ্গায় হাজারেরও বেশি মুসলিম-নিধনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে তবুও আমরা যারা ঐ ঘটনার ধারাবাহিকতা গভীরভাবে অনুসরণ করেছি তাদের কাছে বিবেকের এই দায় থেকে মোদী কখনোই মুক্তি পাবেন না, তিনি এজন্য ঘৃণার পাত্রই থেকে যাবেন আজীবন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদী ঐ সময়ে যেভাবে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে ‘রক্তচক্ষু আল্টিমেটাম’ উচ্চারণ করেছিলেন ‘এদেরকে চরম শিক্ষা পেতেই হবে’, সেটা জীবনেও ভুলতে পারা যাবে না! ঐ উচ্চারণের পথ ধরেই শুরু হয়েছিল গুজরাটের দাঙ্গা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে মোদী ঐ কট্টর সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিত্যাগ করা দূরে থাক, ভারতীয়দের অধিকাংশের মধ্যে তিনি তাঁর এহেন মুসলিম-বিদ্বেষকে ছড়িয়ে দিয়েছেন গত ছয় বছরে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদীর সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার প্রাণান্তকর প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন, যা প্রশংসনীয় হলেও বিজেপি’র নেতা-পাতিনেতাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বাংলাদেশ-বিদ্বেষী বাক্যবাণ বিনা প্রতিবাদে হজম করার কোন যুক্তি নেই। বাংলাদেশ ভারতের কাছে এতখানি নতজানু হওয়ার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না আমি। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই বাংলাদেশ ভারতের কাছে অসহায় অবস্থানে নেই যে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী শাসক দলের নেতা-পাতিনেতাদের বেলাগাম আক্রমণ, অপমানজনক বাক্যবাণ ও তাচ্ছিল্য এবং বিজেপি’র নানাবিধ মুসলিম-বিদ্বেষী কর্মকান্ডকে বিনা প্রতিবাদে মেনে নিতে হবে!
অবশ্য এটাও বলতে হবে, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিলসহ বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতের এই একতরফা বাংলাদেশ-বিরোধী বিদ্বেষমূলক ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্বের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এতে বিজেপি’র মোটেও টনক নড়েনি। একই সমান্তরালে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ক্ষেত্রের অনেকগুলো বৃহদাকার প্রকল্পে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের অংশগ্রহণ, বিনিয়োগ ও ঋণ-অর্থায়ন ভারতের সরকারি মহলে এবং মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ উঠেছে যে বাংলাদেশ ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। চীন নাকি ঋণ দিয়ে বাংলাদেশকে কিনে নিচ্ছে। এমনও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রীলংকার মত চীনের ঋণের ফাঁদে আটকা পড়তে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্ব চীন ও ভারতের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে পক্ষাবলম্বন না করার সঠিক নীতি অনুসরণে খুবই যত্নবান হওয়া সত্ত্বেও ভারতের ক্ষমতাসীন মহল ও মিডিয়ার এহেন ঢালাও অভিযোগ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং, ভারতে মোদী সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার অব্যবহিত পর মোদীর অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশ সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের অর্থায়ন সংক্রান্ত সমঝোতা-স্মারক স্বাক্ষর থেকে একেবারে শেষ মুহূর্তে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল, যে পশ্চাদ্‌পসরণকে আমাদের কাছে অপমানকর ও সার্বভৌমত্ব-পরিপন্থী মনে হয়েছিল। (২০১২ সালে চীনের তদানীন্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই চীনকে ঐ বন্দর নির্মাণে অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।) গত ছয় বছরে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বাংলাদেশের ওপর সার্বভৌমত্ব-বিরোধী অন্যায় চুক্তি ও বৈরি পদক্ষেপ চাপিয়ে দেওয়া অব্যাহত রেখেছে, যেগুলোর মধ্যে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ উপকূলে সাতটি যৌথ রাডার স্টেশন স্থাপনের চুক্তি, পরপর দু’বছর হঠাৎ করে পিঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে বাংলাদেশকে চরম বিপাকে ফেলা এবং সাপটা ও সাফটা চুক্তি লঙ্ঘন করে ভারতের একতরফা কাস্টমস্‌ রুলস পরিবর্তনকে নজির হিসেবে উল্লেখ করা যায়। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ যখন চীন থেকে দুটো সাবমেরিন ক্রয় করেছে তখন ভারত প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেছে, এবং পাল্টা-পদক্ষেপ হিসেবে মিয়ানমারকে একটি সাবমেরিন উপহার দিয়েছে। এরপর যখন বাংলাদেশের অনুরোধে চীন ঐ সাবমেরিন দুটোর জন্য মহেশখালীতে সাবমেরিন স্টেশন নির্মাণ করে দিচ্ছে তখন তাদের ভবিষ্যত নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ তুলে ভারত এই সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা করে যাচ্ছে। উপরন্তু, ভারত মিয়ানমারকে নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে শক্তিশালী করার নীতি গ্রহণ করেছে। আরো দুঃখজনক হলো, ২০১৭ সালে গণহত্যা চালিয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বর্বর ও অমানবিক কায়দায় জীবন নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করা সত্ত্বেও গত তিন বছরে ভারত একবারও এই গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেনি। বরং, রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে পূর্বে-আসা চার লাখ সহ এই সাড়ে এগার লাখ শরণার্থীর মানবেতর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানোার জন্য নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রাণপণ প্রয়াসকে সামান্যতম সমর্থন দেওয়ার পরিবর্তে মিয়ানমারকে চীনের কাছ থেকে সরিয়ে নিজের দিকে ফেরানোর দুরাশায় ভারত দৃষ্টিকটূভাবে মিয়ানমার সরকারকে তোয়াজ করে চলেছে।
ভারতের বিজেপি সরকারের গত ছয় বছরের এমনতরো কর্মকান্ডে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়ে চলেছে যে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব এবং সুপ্রতিবেশীসুলভ সমমর্যাদার ইস্যু তাদের কাছে মোটেও গুরুত্ব বহন করে না, বরং নিজের স্বার্থোদ্ধারের প্রয়োজনে বাংলাদেশের জন্য প্রত্যক্ষ ক্ষতিকর নীতি গ্রহণে ভারত একটুও পিছপা হবে না। নেপাল ও ভুটানের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনে ভারতের প্রতি এই দু’দেশের অবস্থান পরিবর্তনের সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এবং চীনের দিকে দেশ দুটো ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছে বললে অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান গ্রহণ বাংলাদেশের জন্য বিপদ ডেকে আনবে, এহেন পদক্ষেপের প্রয়োজনও নেই। তবে, ভারতকে অহেতুক তোয়াজ করারও কোন দরকার নেই। আমি আবারো বলছি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভারতের উপর মোটেও নির্ভরশীল নয়। ভারত থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে সেগুলো উভয় দেশের স্বার্থ বিবেচনায় উপকারী প্রমাণিত হওয়ায় বাণিজ্য সম্পর্ক চালু রয়েছে, এক্ষেত্রে কোন দেশ অপর দেশকে দয়া দেখাচ্ছে না। বাংলাদেশ ভারতের ঋণ-সহায়তা গ্রহণে তেমন আগ্রহীও নয়। এটা খুবই উল্লেখযোগ্য যে এ পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশকে যে ‘লাইন অব ক্রেডিট’ অফার করেছে তার সিংহভাগ এখনো বাংলাদেশ ব্যবহারই করেনি। এখন বরং শোনা যাচ্ছে যে ঐ ঋণের অর্থে ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্র ক্রয়ের জন্য ভারত বাংলাদেশের হাত মোচড়ানো শুরু করেছে। চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ নিজেদের সিংহভাগ অস্ত্র কেনার বিষয়টি আগাগোড়াই ভারতের অপছন্দ। বলা বাহুল্য, এ ধরনের হাত মোচড়ানো অগ্রহণযোগ্য। ভারতের ঋণের অফারগুলো এতই শর্ত-কন্টকিত যে বাংলাদেশ এগুলো থেকে যতখানি ফায়দা পাবে তার বহুগুণ ফায়দা ভারতের ভাগে জমা হয়ে যাবে। এই ঋণগুলোকে ‘টাইড এইড’ এর ক্লাসিক উদাহরণ বলাই সমীচীন। অতএব, চীন থেকে যদি ওগুলোর চাইতে অনেক সহজ শর্তে প্রকল্প ঋণ পাওয়া যায় তাহলে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ঋণ নেবে না কেন?
বাংলাদেশ ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে ভবিষ্যতেও আগ্রহী থাকবে, কারণ এই সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের একাংশের মধ্যে গেড়ে বসে থাকা ভারত-বিদ্বেষ ক্রমবর্ধমান হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে যত্নশীল আওয়ামী লীগ ভারতকে বৈরী অবস্থানে ঠেলে দিতে চাচ্ছে না। কিন্তু, বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে ভারতীয় ক্ষমতাসীন মহলকে বাংলাদেশকে শ্রদ্ধা করা ও সমমর্যাদা প্রদান শিখতে হবে। বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে ‘ফেলনা’ হিসেবে ভারত হেলাফেলা করলে এই বন্ধুত্ব টেকসই হবে না। অভ্যন্তরীণ সংকীর্ণ রাজনীতিতে ফায়দা হাসিলের জন্য বাংলাদেশকে কট্টর হিন্দুত্ববাদের টার্গেট করলে বিজেপি এবং মোদীকে আখেরে পস্তাতে হবে, তাদের ‘হেইট ক্যাম্পেইনের’ তিক্ত ফসল তাদের ঘরেই উঠবে।
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর,
অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল আজকাল
পরবর্তী নিবন্ধঠিকাদারদের বিল পরিশোধে বিলম্ব হলেও উন্নয়ন কাজ যেন প্রতিবন্ধক না হয়