ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

বিবিসি মোদীর মুসলিম-বিরোধী অপরাজনীতিকে আবারো বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে

| বৃহস্পতিবার , ২ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি বিবিসি কর্তৃক প্রচারিত দুটো তথ্যচিত্র ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গুজরাটের মুসলিমনিধন দাঙায় মোদীর ভূমিকাকে বিভিন্ন প্রামাণ্য তথ্যউপাত্তের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলায় ঐ দাঙ্গায় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ন্যক্কারজনক ভূমিকাকে বিশ্বের জনগণের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। ঐ দাঙায় প্রায় দু’হাজার মানুষকে অমানুষিকভাবে হত্যা করা হয়েছিল, যাদের ৯০ শতাংশেরও বেশি ছিল মুসলিম। ঐ দাঙা সংঘটিত হয়েছিল এর কয়েকদিন আগে ভারতের গুজরাট রাজ্যের গোধারা নামক স্থানে ট্রেনের দুটো কামরায় কতিপয় আততায়ীর অগ্নিসন্ত্রাসের আগুনে পুড়ে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীর মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায়। ঐ সময় নরেন্দ্র মোদী ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। ট্রেন দুর্ঘটনার পর কোন তদন্ত ছাড়াই ঐ অগ্নিকান্ডের জন্য তিনি স্থানীয় মুসলিমদেরকে সরাসরি দায়ী করে রক্তচক্ষু নিয়ে টেলিভিশনে বক্তব্য রেখেছিলেন, ‘এই ঘটনার জন্য তাদেরকে চরম মূল্য দিতেই হবে’। তাঁর ঐ উস্‌কানিমূলক বক্তব্যকে সিগন্যাল ধরে নিয়ে গুজরাটের বিজেপি ও আরএসএস এর গুন্ডারা রাজ্য জুড়ে দাঙা শুরু করে দেয়, যার অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছিল গুজরাটের মুসলিমরা। বিবিসি’র তথ্যচিত্রে প্রমাণসহ বলা হয়েছে, ঐ দাঙা প্রতিরোধের জন্য নরেন্দ্র মোদী আদেশ জারি করেননি, কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করেননি। বরং, তিনি বলেছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী প্রতিক্রিয়া থামানোর জন্য কিছু করা উচিত হবে না। ফলে, সারা গুজরাটে সরকারের পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নীরব দর্শক হয়ে ঐ মুসলিমনিধনযজ্ঞ চলতে দিয়েছিল। ঐ দাঙার জন্য নরেন্দ্র মোদীকে দায়ী করে ভারতের তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু, মোদীর মুসলিমনিধনকারী ভূমিকা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠির বৃহদাংশের কাছে খুবই পছন্দনীয় হওয়ায় দাঙার পর সারা ভারতে মোদীর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে পৌঁছে যায়। ফলে, পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়।

পাশাপাশি, নরেন্দ্র মোদীও বিজেপি’র সিনিয়র নেতাদেরকে ডিঙিয়ে বিজেপি’র মূল নেতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে যান। এই জনপ্রিয়তার জোয়ারে অবগাহন করে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজেপি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন হয়েছে, এবং মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আরো বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়েছে। ২০২৩ সালেও নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন রয়েছে। এর মানে, মোদীর মুসলিমবিরোধী অপরাজনীতি ভারতের সাধারণ হিন্দু ভোটারদের অধিকাংশেরই খুব মনঃপুত হয়েছে। ভারতে সাধারণ হিন্দু জনগণের মুসলিমবিদ্বেষকে সুপরিকল্পিতভাবে উস্‌কে দিয়ে নরেন্দ্র মোদী ভারতের নব্য জনগণমনঅধিনায়ক বনে গেছেন। নয় বছর ক্ষমতায় থেকেও মোদী এখনো ঐ আসনে সমাসীন রয়েছেন। গত একুশ বছরেও নরেন্দ্র মোদী কিংবা তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের কেউ ২০০২ সালের এই পরিকল্পিত ‘এথনিক ক্লিনজিং’ এর জন্য দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত করেননি। বরং কাতারের টিভি চ্যানেল আল জাজিরার এক সংবাদে ২০২২ সালে বর্তমান নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলের ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এক জনসভায় সহাস্যে বলতে শোনা গেল,‘ ২০০২ সালে আমরা তাদেরকে এমন শিক্ষা দিয়েছি যে তারা গত ২২ বছর আর কিছু করার দুঃসাহস দেখায়নি’।

গুজরাটের ঐ দাঙার পর গত একুশ বছর ধরে ভারতের ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও সংঘাত বিশ্বের সচেতন জনগণের মনোযোগের ফোকাসে পরিণত হয়েছে। বিবিসি’র তথ্যচিত্রটি আবারো বিষয়টিকে বিশ্বের সামনে নগ্নভাবে উন্মোচিত করে দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন বন্ধ করার আদেশ জারি করেছেন। (সবশেষে ভারতের পুলিশ বিবিসি’র কার্যালয়ে কয়েকদিন তল্লাসী চালিয়ে ঘোষণা করেছে বিবিসি আয়কর ঠিকমত পরিশোধ করেনি। এটা যে শুধুই প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে হয়রানি তা না বোঝার কারণ নেই)। বিজেপি’র গুন্ডারা বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন বন্ধ করার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে। স্বয়ং মোদী বিবিসি’র এই তথ্যচিত্রকে ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতাউদ্ভূত প্রোপাগান্ডা’ আখ্যায়িত করতেও দ্বিধা করেননি। কিন্তু, ভারতে এবং বিশ্বের নানা দেশে মোদীর এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ দিনদিন জোরালো হচ্ছে। খোদ মার্কিন প্রশাসন এই ইস্যুতে তাদের রাজনৈতিক মিত্র ভারতকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে এহেন অপতৎপরতা তাদের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়। গত দু’দশকের ঘটনাবলী বলতে চাইছে, ধর্মকে অন্ধভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার একটি সমাজকে কতখানি গোমরাহির অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারে তারই প্রত্যক্ষ উদাহরণ হয়ে উঠেছে ভারত।

২০১৪ সালে ‘গুজরাট দাঙ্গার মহারথী’ নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ভারতীয় জনগণ গত নয় বছর ধরে সাম্প্রদায়িকতার মহাগহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। দাঙা উসকে দেওয়ায় কংগ্রেস আমলে মোদীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হলেও ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিজেপিনিয়োজিত বিচারপতিদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বপূর্ণ রায়ে মোদীকে অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছিল। কট্টর হিন্দুত্ববাদকে বিজেপি’র রাজনীতির মূল আদর্শে পরিণত করেছেন নরেন্দ্র মোদী। ‘ভারত শুধু হিন্দুদের দেশ’এটাই মোদীর প্রধান আদর্শ। ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ যে কত ঠুনকো সেটা বিজেপি’র এহেন নাটকীয় উত্থান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ২০০২ সালের ঐ দাঙ্গার পর থেকে গত একুশ বছর ধরে ভারতীয় রাজনীতি মোদী এবং বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদের আফিমের মৌতাতে মশগুল রয়েছে। বিজেপি’র আদর্শিক মূলসংগঠন আরএসএস এর গেরুয়াউত্তরীয়ধারী গুন্ডারা ‘সিভিল আর্মির’ ঢঙে লাঠিমিছিল করে ভারতের বেশিরভাগ শহরে এখন মুসলিম সম্প্রদায়কে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করছে, এবং স্লোগান দিতে অস্বীকার করলে লাঠিপেটা করে চলেছে। গত বছর ভারতের কর্ণাটকে একজন মুসলিম কলেজশিক্ষার্থী তরুণী বোরখা ও হিজাব পরিধানের কারণে বিজেপি’র গেরুয়াধারী আক্রমণউদ্যত সমর্থকদের সামনে পড়ে নাকাল হয়েছিলেন। ঐ চেলাচামুন্ডাদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিসহকারে অশ্রাব্য গালিগালাজে অতিষ্ঠ হয়ে উক্ত তরুণীর উপর্যুপরি ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে সোচ্চার প্রতিবাদের ভিডিওটি শুধু ভারতে নয় সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ভারতের কুড়ি কোটি মুসলমান এখন আক্ষরিক অর্থেই সে দেশে অধিকারহারা সমাজচ্যুত (pariah) জনগোষ্ঠিতে পরিণত হয়েছে।

পাঠকদের হয়তো মনে আছে, ২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদী ভারতের নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন নোবেল পুরস্কারবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বিজেপি তাদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে কোন রাখঢাক ছাড়াই সামনে নিয়ে এসেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মোদী সরকার একের পর এক এই হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়িত করে চলেছে, যার মধ্যে ভারতীয় সংবিধানে প্রদত্ত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিলোপ, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনশীপ (এনআরসি) আইন পাশ এবং সিটিজেনশীপ এমেন্ডমেন্ট এক্ট (সিএএ) পাশ সারা ভারতে এবং বিশ্বেও প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সিটিজেনশীপ এমেন্ডমেন্ট এক্টে যেভাবে মুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী অন্য সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা যে চরম বৈষম্যমূলক ও অগ্রহণযোগ্য সাম্প্রদায়িকতা সেটা খোদ জাতিসংঘকেও ঘোষণা করতে হয়েছিল। কিন্তু, মোদী পুরোপুরি নির্বিকার। কারণ মোদী বুঝতে পেরেছেন, কট্টর হিন্দুত্ববাদী চরমদক্ষিণপন্থী রাজনীতির আফিম এখন ভারতীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। অতএব, আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বিজেপি’র বিজয়ের সম্ভাবনা এই আফিমের মৌতাতে বাড়বে বৈ কমবে না। সম্প্রতি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজেপিনিয়োজিত উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী প্রফেসর অমর্ত্য সেনকে সরাসরি আক্রমণের শিকার করে ফতোয়া দিয়েছেন যে অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার নাকি ভুয়া নোবেল পুরস্কার, কারণ ১৯০২ সাল থেকে প্রদত্ত আলফ্রেড নোবেলঘোষিত পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে অর্থনীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আরো দুঃখজনক হলো, ঐ বিশ্ববিদ্যালয়কর্তৃপক্ষ প্রফেসর অমর্ত্য সেনের পিতাকে বরাদ্দ দেওয়া জমির একাংশকে অবৈধ ঘোষণা করে মামলা করার হুমকি দিয়ে চলেছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী গত ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে সরেজমিনে প্রফেসর অমর্ত্য সেনের বাড়ীতে গিয়ে তাঁকে জমির প্রামাণ্য দলিল প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দাবিকে খারিজ করা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়কর্তৃপক্ষ মামলা করার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে সর্বশেষ খবরে জানা যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর প্রত্যক্ষ উসকানিতেই যে প্রফেসর অমর্ত্য সেনকে নাজেহাল করার এই অপপ্রয়াস সেটা না বোঝার কারণ নেই। কারণ, কয়েক সপ্তাহ আগে প্রফেসর অমর্ত্য সেন অভিমত দিয়েছেন যে মমতা ব্যানার্জীই এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতম ব্যক্তি। পশ্চিমবঙ্গের গত বিধানসভা নির্বাচনে অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী ইস্যুটা মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি নির্বাচনে গোহারা হেরে গিয়েছিল। কিন্তু, এর আগে আসামে কথিত অবৈধ বাংলাদেশীদেরকে লাথি মেরে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার প্রোপাগান্ডা ঠিকই বিজেপিকে নির্বাচনী বিজয় এনে দিয়েছিল। ত্রিপুরায়ও সিপিএমকে হারিয়ে বিজেপি ক্ষমতাসীন হয়েছে। ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর জন্য মোদী এবং তাঁর চেলাচামুন্ডারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পর্যন্ত বদলে দিচ্ছে, যেখানে মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু এবং কংগ্রেসের পরিবর্তে সাভারকার এবং বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘প্রকৃত হিরো’ বানানোর প্রয়াস সামনে চলে এসেছে। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আমলে ভারত ও বাংলাদেশের সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতাদের বেলাগাম গলাবাজি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর কথিত অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের অর্থনীতি ও সমাজকে ‘উইপোকার’ মত কুরে কুরে খাচ্ছে বলে গালমন্দ করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে মোদীবিরোধী জনমত ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২১ সালের মার্চে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরে আসাকে উপলক্ষ করে হেফাজতে ইসলামের লেবাসধারী ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ও র‌্যাবকে কয়েকটি স্থানে গুলি চালাতে হয়, যাতে ১২ জন দাঙ্গাকারীর প্রাণহানি ঘটে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মোদীর মুসলিমবিদ্বেষী অপরাজনীতি বাংলাদেশেও নিঃসন্দেহে সাম্প্রদায়িকতাকে বিপজ্জনকভাবে উসকে দিচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শধারণকারী রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল দলগুলোর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পারতপক্ষে ভারতবিরোধী আবস্থান নেয় না। কিন্তু, মোদীর কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী রাজনীতির প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের জনগণের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ আওয়ামী লীগবিরোধী, ভারতবিরোধী ও পাকিস্তানপন্থী বিএনপিজামায়াতের রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন করে পথচলা: জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল
পরবর্তী নিবন্ধগ্রিসে ট্রেন দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত মন্ত্রীর পদত্যাগ