ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ১০ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ‘বাত্‌ কা বাত্‌’ থাকলে পুঁজিপাচার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না

২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিল। এরপর ২০১৯ সালে যুবলীগের প্রভাবশালী মাস্তান ‘ক্যাসিনো গডফাদার’ সম্রাট ও তাঁর সাগরেদদেরকে গ্রেফতারের মাধ্যমে এই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঐ গ্রেফতার অভিযানে ভাটার টান জোরদার হয়। বলতে গেলে এরপর থেকে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম একেবারেই ‘বাত্‌ কা বাতে’ পর্যবসিত হয়েছে। আমাদের স্মরণে আছে যে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরপর পাঁচ বছর বার্লিন-ভিত্তিক দুর্নীতি গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের বিশ্ব-র‌্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তক্‌মা অর্জন করেছিল।

ঐ পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম বছর ক্ষমতাসীন ছিল আওয়ামী লীগ, পরের চার বছর ক্ষমতাসীন ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর সামরিক বাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছরের শাসনামলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচন্ড দমননীতি বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ ঐ ‘ন্যক্কারজনক চ্যাম্পিয়নশীপ’ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিল। কিন্তু, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঐ দুর্নীতি-দমন অভিযানকে গলা টিপে মেরে ফেলার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘নখদন্তহীন বাঘে’ পরিণত করে। ফলে, আবার দেশে দুর্নীতির তান্ডব পুরোদমে চালু হয়ে যায়। ২০১৪ সাল থেকে গত আট বছর ধরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পর সবচেয়ে দুর্নীীতগ্রস্ত দেশের তক্‌মা অর্জন করে চলেছে, বিশ্ব-র‌্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পনেরোটি দেশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজিপাচারকে গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইনেন্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)। তারা বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭-৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমদানি বাণিজ্যে ব্যাপক ওভারইনভয়েসিং, রফতানি বাণিজ্যে ব্যাপক আন্ডারইনভয়েসিং, হুন্ডি প্রক্রিয়ায় ক্রমবর্ধমান পুঁজিপাচার এবং রফতানি আয়ের একটি বিরাট অংশ দেশে ফেরত না আনা পুঁজিপাচারের সবচেয়ে চালু চারটি পদ্ধতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর চাহিদা এবং সরবরাহ উভয় দিক্‌ থেকে হুন্ডি ব্যবসা অনেকখানি গুটিয়ে গিয়েছিল, যার সুফল হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থ-বছরে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছিল।

এই প্রবৃদ্ধির কারণেই ঐ দুই অর্থ-বছরে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট একাউন্টে বড়সড় উদ্বৃত্ত হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বেড়ে গিয়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে যখন করোনা ভাইরাস মহামারির তান্ডব কমে আসে তখন আবার চাঙা হয়ে উঠে হুন্ডি ব্যবসা। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর বরাত দিয়ে দেশের পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। (মানে, সিআইডি’র দাবি ৭৫ হাজার কোটি টাকার সম-পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই আসছে না। অথচ, এই পরিমাণ টাকা হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বিদেশে পুঁজিপাচারকারীদের ব্যাংক একাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে জমা হয়ে যাচ্ছে)। এর সাথে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রফতানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রফতানি আয় দেশে ফেরত না আনার মত মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রত্যেক বছর এখন কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সম-পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে।

এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫/১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে চলেছে, যার অর্ধেকের মত পাচার হচ্ছে হুন্ডি প্রক্রিয়ার বেলাগাম বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থ-বছরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স গত ২০২০-২১ অর্থ-বছরের ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যার প্রধান কারণ ঐ-বছর হুন্ডি প্রক্রিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণ আবার চাঙা হওয়া। এর ফলে ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা। ২০২২ সালের অক্টোবরে রিজার্ভ কমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা মোতাবেক ৩৫.৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। কিন্তু, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এই ঘোষণা গ্রহণযোগ্য মনে করে না। কারণ, রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা এঙপোর্ট ডেভেলাপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের ‘রিফাইনেন্সিং স্কীমের’ অধীনে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের প্রভাবশালী রফতানিকারকদেরকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দিয়েছে সেটাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে আইএমএফ।

সাম্প্রতিক সফরকালে আরো কয়েকটি ব্যাপারে আইএমএফ এর পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ টিম। তার মানে, বাংলাদেশের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অক্টোবরের শেষে ২৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পাওনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে। এহেন পতনের ধারা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজার ব্যবস্থাকে মেনে নিলেও কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত হারের ব্যবধান এখনও ৮-১০ টাকা রয়ে গেছে। এই দুই দামের এতবড় পার্থক্য শুধু হুন্ডি ব্যবস্থাকেই চাঙা করছে, যার ফলে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে বাধ্য। (অর্থমন্ত্রীর মতে দেশের রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ এখন হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশে আসছে। আমার মতে অধিকাংশ রেমিট্যান্স হুন্ডি ব্যবস্থায় দেশে আসছে)! আমি আবারো বলছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে সেটার জন্য দায়ী পাঁচটি প্রধান পুঁজিপাচার প্রক্রিয়া: ১) আমদানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির আড়ালে ওভারইনভয়েসিং পদ্ধতিতে জোরেসোরে বিদেশে পুঁজিপাচার, ২) রফতানিতে ব্যাপক আন্ডারইনভয়েসিং পদ্ধতিতে পুঁজিপাচার, ৩) রফতানি আয় দেশে ফেরত না এনে বিদেশে রেখে দিয়ে ঐ অর্থ দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ী-ব্যবসাপাতি কেনার হিড়িক, ৪) দেশের ব্যাংকঋণ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠিগুলো কর্তৃক হুন্ডিওয়ালাদেরকে ঋণের টাকা প্রদানের মাধ্যমে এর সমপরিমাণ ডলার হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার এবং ৫) সাম্প্রতিক কালে চালু করা এঙপোর্ট ডেভেলাপমেন্ট ফান্ডের সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ বিদেশে পাচার। (উদাহরণ দেখুন: গত ২০২১-২২ অর্থ-বছরে তৈরী পোষাক খাতের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫.৪৭ শতাংশ, অথচ একই সময়ে পোষাক খাতের কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে ৫৮ শতাংশেরও বেশি।

অতএব, এ খাতের আমদানিতে ব্যাপক ওভারইনভয়েসিং হয়েছে ধরে নেয়াই যায়)। তাই, পুঁজিপাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজিপাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমাদের বর্তমান সরকারকে অনেকে ‘ব্যবসায়ীদের সরকার’ আখ্যায়িত করেন। বর্তমান সংসদের ৬২.৭ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী । অতএব, সরকারে আসীন অনেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্য-নেতাকর্মী পুঁজিপাচারকারী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাঁদের আত্মীয়-স্বজন অনেকেও পুঁজিপাচারকারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকাটাই স্বাভাবিক। সমস্যার সত্যিকার সমাধান চাইলে প্রথমে সরকারকে আন্তরিকভাবে সমস্যাটিকে স্বীকার করে নিতে হবে।

অর্থমন্ত্রী মহোদয় কি আদৌ তা করছেন? এবারের বাজেটে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে চাইলে মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে তা গ্রহণ করার িিসদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু, খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে গত চার মাসে কেউ এই সুবিধা গ্রহণ করেনি। (বর্তমান বাজেটে অর্থমন্ত্রী মহোদয় পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য যে ‘টোটকা দাওয়াই’ এর প্রস্তাব করেছেন সেগুলোকে আমি দেশের জনগণের সাথে ‘মশকরা’ আখ্যায়িত করেছি। আমি বলেছি, তিনি পুরো ব্যাপারটাকে লঘু করার জন্য এই প্রহসনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করেছেন। বছরের শেষে দেখা যাবে ফলাফল শূন্য)।

আমদানিতে ওভারইনভয়েসিং মনিটরিং করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তার কোন হদিশ মিলছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই এবং ইতালীতে আটটি তদন্ত টিম প্রেরণ কিংবা গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করে পুঁজিপাচারকারীদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করার যে পরামর্শ দিয়েছিলাম সে ব্যাপারেও কোন নড়াচড়া পরিলক্ষিত হচ্ছে না! এমনকি, রফতানি আয় রফতানিকারকদের নিজের কাছে রেখে দেওয়ার পরিমাণকে (অনুপাতকে) আগামী কিছুদিনের জন্য কঠোরভাবে সীমিত করা এবং একইসাথে কতদিনের মধ্যে রফতানি আয় বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে সে সময়সীমাকে কঠোরভাবে নামিয়ে আনা সম্পর্কিত পরামর্শকেও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। অথচ, সরকার স্বীকার না করলেও ওয়াকিবহাল মহল ঠিকই বুঝতে পেরেছেন যে গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৫ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। (ভিয়েতনামের মুদ্রার তেমন কোন অবচয়নই হয়নি)। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। আর, এজন্য প্রয়োজন পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সময় থাকতে কঠোরভাবে পুঁজিপাচার দমন করুন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এমনকি, প্রয়োজন মনে করলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ নেতৃত্বে পরিবর্তন নিয়ে আসুন। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ‘এবসেন্ট ফিন্যান্স মিনিস্টার’ আখ্যায়িত করেছেন। এবারই প্রথম বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগদান করেননি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে কয়েকজন আমলা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পরিষদ একনেকে অর্থমন্ত্রী প্রায়ই অংশগ্রহণ করছেন না। অর্থনীতির বর্তমান সংকট সম্পর্কেও অর্থমন্ত্রী তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিধায় ভুগছেন তাঁর অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে!

কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম আন্তঃব্যাংক লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ডলারের দামের চাইতে ৮-১০ টাকা বেশি হওয়ার প্রধান কারণ হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পুঁজিপাচারের চাহিদার ক্রমবর্ধমান ব্যাপক উল্লম্ফন। অতএব, এই ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে কমিয়ে আনতে না পারলে এই দু’টো দামের পার্থক্যকে কমিয়ে আনা যাবে না। শুধু আন্তঃ-ব্যাংক লেনদেনে ডলারের দামকে বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য ক্রমান্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সুফল পাওয়া যাবে না। হুন্ডি-ডলারের চাহিদা শক্তিশালী থাকলে কার্ব মার্কেটেও ডলারের দাম ক্রমেই বাড়িয়ে পার্থক্যটা ৮-১০ টাকায় রেখে দেবে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা, হুন্ডি ব্যবসাকে চাঙা রাখার জন্য। সেজন্যই বলছি, হুন্ডি ডলারের চাহিদাকে দমন করতে চাইলে প্রয়োজন হবে দুর্নীতি দমনকে আবার সত্যিকারভাবে শক্তিশালী করা। কারণ, এই চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, লুটেরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণ গ্রহীতারা। হুন্ডি প্রক্রিয়ায় যে পঁচাত্তর হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার দাবি করছে সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) তার সিংহভাগ চাহিদাকারী ওপরে উল্লিখিত গোষ্ঠিগুলো। অতএব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ‘বাত্‌ কা বাত্‌’ বানিয়ে রেখে পুঁজিপাচার সমস্যার সত্যিকার সমাধান পাওয়া অসম্ভব মনে করি।

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধনূর হোসেনের জীবনদান ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে পুলিশে দিল জনতা