ড. মইনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মাওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন শেখ মুজিবুর রহমান জেলে ছিলেন, তাঁকে করা হয়েছিল দলের যুগ্ম সম্পাদক। পরবর্তীতে শামসুল হক অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অতএব, জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের শ্রমজীবী কৃষকশ্রমিক ও জনগণের রাজনৈতিক দল হিসেবেই পরিগণিত হয়ে উঠেছিল। ১৯৫৪ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত পূর্ব বাংলার সংসদীয় নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছিল, যুক্তফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরীক ছিল আওয়ামী লীগ। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে অনেক বামপন্থী কমিউনিস্টও নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণার তিন বছরের মধ্যেই ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের পতাকাবাহী সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক প্লাটফরমে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় আওয়ামী লীগকে বসিয়ে দিয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের একক নেতৃত্বের আসনে, বঙ্গবন্ধুকে ম্যানডেট দিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একক মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালনে। তাই, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ যখন স্বাধিকার সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছিল তখন আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের ওপরেই দায়িত্ব বর্তেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল ছাত্রলীগের আ,,, আবদুর রবের হাতেই। পরদিন ঢাকার পল্টন ময়দানে ঘোষিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজের কন্ঠে। ২৬ মার্চ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদের ভাষণে গঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার, রাষ্ট্রপতি ঘোষিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাজউদ্দিনঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের তিনটি মূলনীতি ঘোষিত হয়েছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, যার ভিত্তিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়লগ্নে যাত্রা শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। বাংলাদেশের ইতিহাসের এই স্বর্ণঅধ্যায়ে আওয়ামী লীগের অনন্য অবস্থানকে যারা অস্বীকার করবে তারা চিরকাল চিহ্নিত হবে স্বাধীনতাবিরোধী খলনায়ক হিসেবে।

মাওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ পরিত্যাগ করলেও ভারতে গঠিত মুক্তিযুদ্ধের উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তিনিই, তাজউদ্দিন ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসচিব। স্বাধীন বাংলাদেশে ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ভিন্ন পথে মোড় নিলেও বক্ষ্যমাণ কলামে তা আমার বিবেচ্য নয়। আমি আলোচনা করতে চাই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা এহেন জনমানুষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে কীভাবে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম, চৌর্যতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্রেসি) এবং অলিগার্কিতে রূপান্তরিত করায় দেশের জনগণ কর্তৃক ঘৃণিত লুটেরা ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রাণভয়ে ভারতে পালিয়ে গেলেন। ১৯৭৫ সালে সপরিবার বঙ্গবন্ধু হত্যার পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় লাভ করেন এবং ১৯৮১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দিল্লীতে অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপনে বাধ্য হন। ১৯৮১ সালের ১৭ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশে ফেরত আসার পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত বিপদসংকুল দেড় দশকে বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতাসীন করায় সফল হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হলেও ক্ষীণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০০১ সাল পর্যন্ত হাসিনাকে শাসন চালাতে হওয়ায় তাঁর একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতা জনগণের কাছে ধরা পড়েনি। বরং, ১৯৯৬২০০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরিচালিত ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিপর্যয় ডেকে আনে। কিন্তু, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভূমিধস বিজয় অর্জন করায় হাসিনা আজীবন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সর্বনাশা পথে পা বাড়ান।

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের পুত্র সোহেল তাজ অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সালেই হাসিনা বলেছিলেন ‘বিএনপি অনেক টাকা কামিয়েছে। এখন আমাদেরকে দু’হাতে টাকা বানাতে হবে’। গত সাড়ে পনেরো বছর ছিল দেশে দুর্নীতি ও পুঁজিলুন্ঠনের মহোৎসবকাল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে পতনের আগে হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে পনেরো বছর ধরে দেশটাকে লুটেপুটে ছারখার করে দিয়েছে, যার সিংহভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এই পুঁজিলুন্ঠনের কেন্দ্রে ছিল হাসিনাপুত্র জয়, রেহানাকন্যা টিউলিপ ও রেহানাপুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও তার পুত্র শেখ ফাহিম, শেখ হেলাল, তাঁর ভাই শেখ জুয়েল ও তাঁর পুত্র শেখ তন্ময়, সেরনিয়াবাত হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাঁর পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ, শেখ তাপস, শেখ পরশ, লিটন চৌধুরী ও নিক্সন চৌধুরী এবং হাসিনার অন্যান্য আত্মীয়স্বজন। আর ছিল এস আলম, সালমান রহমান, সামিটের আজিজ খান, বসুন্ধরার আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রুপের ওবাইদুল করিম ও নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের মত লুটেরা অলিগার্ক ব্যবসায়ী এবং হাজার হাজার লুটেরা রাজনীতিবিদ ও দুর্নীতিবাজ আমলা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে দেশের চলমান ৮২টি প্রকল্পে শেখ হাসিনার কোন না কোন আত্মীয়স্বজন জড়িত রয়েছে, যেগুলোর প্রকল্পব্যয় একান্ন হাজার কোটি টাকার বেশি। হাসিনার পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং অলিগার্ক ব্যবসায়ীরাই শুধু নয়, আওয়ামী লীগের প্রায় সকল মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উচ্চস্তরের নেতাকর্মী এমনকি স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও গত সাড়ে পনেরো বছরে কোন না কোনভাবে দুর্নীতি, পুঁজিলুন্ঠন ও পুঁজি পাচারে জড়িয়ে গিয়েছিল। বিশেষত, অজস্র ঋণ করার কৌশল পুরো জাতিকে যে বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদী ঋণের সাগরে নিমজ্জিত করেছে সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়েছে এজন্য যে ঐ ঋণের সিংহভাগই স্রেফ পুঁজিলুন্ঠনের মাধ্যমে লুন্ঠিত হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। হাসিনা আমলের ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত হয়েছিল পুঁজি পাচার।

ভাসানীর আওয়ামী লীগকে গত সাড়ে পনেরো বছরে হাসিনা দুর্নীতি, বেধড়ক্‌ পুঁজিলুন্ঠন ও পুঁজিপাচারের লীলাক্ষেত্রে কীভাবে পর্যবসিত করেছিলেন? ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের রাতের ভোটের প্রহসনের মাধ্যমে সংসদে আসা সদস্যদের ৬১.৭ শতাংশ ছিল ব্যবসায়ী, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচনী প্রহসনে ঐ ধারার কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। ২০১৯ সালে দেশের অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হয়েছিল একজন লুটেরা আদম বেপারিকে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে দেশের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তিতে পরিণত করা হয়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি সালমান রহমানকে, তাকে বানানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা। তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের খেলাপিঋণ পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকারও বেশি। চট্টগ্রামের কুখ্যাত এস আলমকে দেশের সাতটি ব্যাংকের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যার দ্বিতীয় নজির বিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এস আলম ঐ ব্যাংকগুলো থেকে কমপক্ষে দেড় লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। কমিটি গত ১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে তাদের শ্বেতপত্রটির খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শ্বেতপত্রটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়ন বয়ানের ব্যবচ্ছেদ’ (ডিসসেকশান অব এ ডেভেলাপমেন্ট নেরেটিভ)। শ্বেতপত্র কমিটির গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বৈরশাসক হাসিনার সাড়ে পনেরো বছরের লুটপাটতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুন্ঠিত হয়ে দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি লুন্ঠনের শিকার হয়েছে ব্যাংকিং ও ফাইনেন্সিয়াল খাত, তারপর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত, তারপর ভৌত অবকাঠামো খাত এবং এরপর তথ্য প্রযুক্তি খাত। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, ভারত এবং কয়েকটি ‘ট্যাক্স হেভেন’ সবচেয়ে বেশি অর্থপাচারের সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গত পৌনে আট মাসে অর্থনীতিবিদদের কাছে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়ে চলেছে যে স্বৈরশাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে ক্ষমতা না হারালেও ‘অর্থনৈতিক মেল্টডাউনে’র অবশ্যম্ভাবী পরিণতি থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে পারতেন না হাসিনা। এদিক্‌ থেকে দেখলে মহান আল্লাহতাআলাকে শোকরিয়া জানাতে হয় যে তিনি আমাদেরকে আরেকটি শ্রীলংকা হওয়ার লজ্জা থেকে রক্ষা করেছেন।

হাসিনা কীভাবে জনগণের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে এরকম একটি ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের লুটপাটের হাতিয়ারে পরিণত করতে পারলেন? আসলে, ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ক্রমেই হাসিনা নিজেকে একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী একনায়কের আসনে অধিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন। যেন একমাত্র তিনিই সবজান্তা সব সিদ্ধান্ত তাঁরই, অন্য কারো ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার নেই। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরকে একে একে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রীসভায় একজন মন্ত্রীকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাঁরা হাসিনার কোন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারেন। উপরে উল্লিখিত কয়েকজন ব্যবসায়ী অলিগার্কের ভূমিকা দখল করে ফেলেছিল, সাথে ছিল হাসিনার বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন। অন্য কোন মন্ত্রী, সংসদসদস্য কিংবা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দলের নীতিনির্ধারণী অবস্থানে ছিলেন না। তাঁদেরকে আমরা দোষারোপ করবো তাঁরা এই স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে দল থেকে বেরিয়ে আসার সাহস না দেখানোর জন্য। মতিয়া চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নুর, সাবের হোসেন চৌধুরী, সিমিন হোসেন রিমি, ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী, এম,,মান্নানতাঁদের কারো গায়ে দুর্নীতির আঁচড় না লাগা সত্ত্বেও হাসিনার পতনের পর ঐ লেবাস তো এখন সবার গায়ে লেগে গেলো! আমার মনে হচ্ছে, সাধারণ জনগণের মত তাঁরাও ধরে নিয়েছিলেন যে পরপর তিনটি নির্বাচনী প্রহসন সফলভাবে মঞ্চস্থ করা সত্ত্বেও ভারতের সমর্থনে যেহেতু হাসিনা ক্ষমতাসীন থেকে গেছেন তাই তাঁর জীবদ্দশায় এদেশে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। একটি গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পতন হতে পারেএটা ২০২৪ সালের জুলাই মাসেও ছিল অচিন্তনীয়। পুরো আওয়ামী লীগ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতাধন্য ব্যবসায়ী অলিগার্কদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে দেখেও জনগণের আস্থাভাজন আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীরা অসহায় বোধ করছিলেন হয়তোবা! কারণ, হাসিনা ডঃ কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের মত মহীরুহকে ১৯৯১ সালেই আওয়ামী লীগ থেকে উৎপাটিত করা সত্ত্বেও তাঁরা তেমন কোন রাজনৈতিক ঝড় তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন, তোফায়েল আহমদ ২০১৪ সালেই কোণঠাসা অবস্থানে চলে গেছেন, ২০১৮ সালের পর অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দকেও ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন হাসিনা। এই ধারাবাহিকতায় জনগণের দল, মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ হাসিনার স্বৈরশাসনের সাড়ে পনেরো বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করে রূপান্তরিত হয়ে গেলো ক্রোনি ক্যাপিটালিজম, ক্লেপ্টোক্রেসি (চৌর্যতন্ত্র) এবং গণধিকৃত অলিগার্কিতে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর কমপক্ষে আগামী এক দশক আওয়ামী লীগ এদেশে বিলোপের গিরিখাতে মরণাপন্ন হয়ে ধুঁকতে থাকবে। এই দুঃখ কোথায় রাখি!

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধসক্রেটিসের সর্বকালীন প্রাসঙ্গিকতা
পরবর্তী নিবন্ধএসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায়