ড. মইনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ২৭ জুন, ২০২৪ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

২০২৪২৫ অর্থবছরের বাজেট কি মূল্যস্ফীতি মোকাবেলার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির হারকে বাড়াতে পারবে?

গত ৬ জুন ২০২৪ তারিখে ৭,৯৭,০০০ কোটি টাকার বাজেটপ্রস্তাব সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এই বাজেটকে ‘সংকোচনমূলক বাজেট’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য ঘোষিত হয়েছে অর্থনীতিতে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির হারকে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকা ও ভারত তাদের মূল্যস্ফীতির হারকে ইতোমধ্যেই পাঁচ শতাংশের নিচে নামিয়ে ফেলেছে, অথচ আমরা পারিনি প্রধানত এদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অদক্ষ ও অর্থনীতি সম্পর্কে কমজ্ঞানসম্পন্ন সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালের নিষ্ক্রিয়তা, কায়েমী স্বার্থ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে। এখন অভিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যিনি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদানের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন দু’বছর। কূটনীতিকের চাকুরি পরিত্যাগ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করায় তিনি এদেশের একজন ‘সূর্যসন্তান’ হিসেবে সম্মানের পাত্র। গত সংসদীয় মেয়াদে তিনি অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অতএব, চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল থাকার কথা। তাঁর বাজেটবক্তৃতাকে আমি প্রশংসা করব অর্থনীতির চলমান সমস্যাগুলোর বাস্তবানুগ স্বীকারোক্তি হিসেবে। সাবেক অর্থমন্ত্রী জনগণের কাছ থেকে বাস্তবতাকে আড়াল করার যে প্রবণতা তাঁর ‘গিমিকেভরা বাজেটউপস্থাপনায়’ দেখিয়ে যেতেন এবারের বাজেটবক্তৃতা সেখান থেকে অনেকখানি সরে এসেছে। তবে ওয়াকিবহাল মহল বাজেটপ্রস্তাবকে যেভাবে ‘গতানুগতিক’ বলে সমালোচনা করছেন তাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এর মানে, ওয়াকিবহাল মহল বাজেটে আরো অনেক বেশি সাহসী নতুন নীতিমালা আশা করেছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পুঁজিপাচার, খেলাপিঋণ, হুন্ডিদমন ও দুর্নীতি সম্পর্কীত বিষয়গুলোতে। কারণ, অর্থনীতি বর্তমানে যেসব সমস্যায় জর্জরিত তার বেশিরভাগই সাবেক অর্থমন্ত্রীর ভুলের খেসারত বলাই সমীচীন। (অবশ্য, আমাদের দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই সব নীতি গ্রহণ করে থাকেন বলে মনে করা হয়)! এগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য আরো সাহসী ও উদ্ভাবনমূলক পদক্ষেপের প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত বাজেটকে সংকোচনমূলক বলা হলে তা যথাযথ বলা হবে, কারণ গত অর্থবছরের ৭,৬২,০০০ কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটটি ‘ক্ষুদ্রতর আকারের’। সামষ্টিক অর্থনীতির তত্ত্বে এটাকে contractionary fiscal policy অভিহিত করা হয়, যেখানে সরকারী ব্যয়কে কমিয়ে ফেলা হয় মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সামষ্টিক চাহিদাকে হ্রাস করার জন্য। এদিক থেকে বিবেচনা করলে সরকারী ব্যয়সংকোচন অত্যন্ত সময়োচিত প্রস্তাব। এখানে সরাসরি সংঘর্ষ বাঁধবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকেও বর্তমান ৫.৮ শতাংশ থেকে আগামী অর্থবছরে ৬.৭৫ উন্নীত করার উদ্দেশ্যের সাথে। (বিশ্ব ব্যাংক প্রক্ষেপণ করেছে আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫.৭ শতাংশ)। আমার বিশ্বাস, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে ৬ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়া বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে। অবশ্য, এই উদ্দেশ্য একেবারে অসম্ভব নাও হতে পারে কতগুলো বিষয় বিবেচনা করলে। সরকারী ব্যয় এখন দেশের মোট জিডিপি’র ১৪.৫ শতাংশের মত, যার মধ্যে সরকারী রাজস্বজিডিপি’র অনুপাত হলো মাত্র সাড়ে আট শতাংশের মত। বাকি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ ছিল বাজেট ঘাটতি। এই বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সূত্র ও বৈদেশিক সূত্র থেকে ঋণ করতে হয়েছে। গত অর্থবছরে বৈদেশিক সূত্রসমূহ থেকে আমরা যথেষ্ট পরিমাণ ঋণ পাইনি। তদুপরি, সাবেক অর্থমন্ত্রীর অযোগ্যতার কারণে রাজস্বজিডিপি’র অনুপাতও ছিল বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমহ্রাসমান। এখন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের রাজস্বজিডিপি’র অনুপাত সর্বনিম্ন। এটা চলতে দেওয়া যায় না। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রাজস্বজিডিপি’র অনুপাতকে কমপক্ষে ১২ শতাংশে উন্নীত করাটা এখন আমাদের জন্য ‘ফরজ’ হয়ে গেছে বলা উচিত। আগামী অর্থবছরে রাজস্বজিডিপি’র অনুপাতকে ৯.৭ শতাংশে বাড়ানোর এবং বাজেট ঘাটতিজিডিপি’র অনুপাতকে ৪.৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী, আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই। এটা অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে নিঃসন্দেহে, কিন্তু এটা সঠিক পদক্ষেপ। এব্যাপারে আমাদের সফল হতেই হবে। এদেশে যাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা আছে তারা দুর্নীতির সহায়তায় করফাঁকি দিয়ে চলেছে, এটা চলতে দেওয়া যায় না। সাবেক অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী ছিলেন, তাই তিনি প্রধানত ব্যবসায়ীদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এই ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে অনীহ ছিলেন। এবারের বাজেটে অনেকগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইল টেলিফোনে কথা বলার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে, মোবাইল সিমের খরচ বাড়ানো হয়েছে, ফ্রিজ, এসি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, সকল প্রকার সফ্‌ট ড্রিংকসের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে, আইসক্রীমের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, সিগারেটের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, গাড়ী আমদানির ওপর শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে, ২৫০ সিসি’র বেশি ক্যাপাসিটির মোটর সাইকেলের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, কাজুবাদামের ওপর আরোপিত কর বাড়ানো হয়েছে, সংসদ সদস্যদের আমদানিকৃত গাড়ীর ওপর শুল্ক আরাপের প্রস্তাব করা হয়েছে, গিফটের ওপর কর আরোপিত হয়েছে, বিনোদন পার্কে ভ্রমণের ওপর কর আরোপিত হয়েছে। এর বিপরীতে অনেকগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আরোপিত কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো প্রশংসনীয়। তবে, করপোরেশন ইনকাম ট্যাক্সে প্রদত্ত সুবিধাগুলো এবার না দিলেই ভাল হতো। ব্যক্তিগত আয়করের সর্বনিম্ন সীমা অপরিবর্তিত রাখা হলেও সর্বোচ্চ আয়করের হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি মনে করি, আয়করের জালকে প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভাল হতো। আর একটা ব্যাপার আমার কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য মনে হয় না, সেটা হলো কালো টাকাকে সাদা করার ব্যাপারটা। যেখানে সর্বোচ্চ আয়কর হার প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০ শতাংশ, সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকাকে বিনাপ্রশ্নে সাদা করার ব্যবস্থার প্রস্তাব করা কতখানি ‘নৈতিক’ হয়েছে সে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।

বাজেটের দুটো বাজে দিক্‌ হলো শিক্ষা খাতের বাজেটকে এবার জিডিপি’র ১.৬৯ শতাংশে নামিয়ে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে এবং জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়বরাদ্দকেও গত বছরের চাইতে কমিয়ে ফেলা হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়েছিল তখন শিক্ষাখাতে সরকারী ব্যয় ছিল ২.০৪ শতাংশ, যা ধীরে ধীরে বেড়ে ২.৫ শতাংশে পৌঁছেছিল ২০১৬ সালে। তারপর থেকে ক্রমেই এই ব্যয়বরাদ্দ জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে কমছে। ইউনেস্কোর কাছে বাংলাদেশ অঙ্গীকার করেছে শিক্ষাখাতে ব্যয়বরাদ্দকে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে জিডিপি’র ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতে শিক্ষাখাতে সরকারী ব্যয় ইতোমধ্যেই ৪ শতাংশ অতিক্রম করেছে। টাকার অংকে এই দুই খাতের বাজেটবরাদ্দ গত বছরের চাইতে বেশি দেখানো হলেও মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় তা প্রকৃতপক্ষে কম। যোগাযোগ ও পরিবহন খাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং পল্লী উন্নয়ন খাতে সরকারী ব্যয়বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে টাকার অংকে।

বাজেটে ব্যাংকের খেলাপিঋণ আদায়ের জন্য কোন কঠোর পদক্ষেপ খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বীকার করতে হবে যে দেশের খেলাপি ব্যাংকঋণের পরিমাণ নিশ্চিতভাবে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, এবং এসব খেলাপিঋণের আশি শতাংশেরও বেশি ‘ইচ্ছাকৃত রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের’ কাছে বছরের পর বছর ধরে আটকে রয়েছে। এগুলো ব্যাংকে ফেরত আসবে না। এসব রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদেরকে ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে এই সমস্যার কোন সমাধান পাওয়া যাবে না। এই বিপুল খেলাপিঋণের বেশিরভাগই দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে, এগুলো কখনোই বর্তমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকে ফেরত আনা যাবে না। আইনমন্ত্রী আরো কয়েকটি অর্থঋণ আদালত গঠনের যে প্রস্তাবের কথা বলেছেন সেটা একেবারেই বেফজুল প্রস্তাব। বর্তমান অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের মামলাগুলোতে তিন লক্ষাধিক কোটি টাকার বেশি খেলাপিঋণ বছরের পর বছর ধরে ঝুলে রয়েছে, যেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফাইড লোনে’র হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। ঋণখেলাপিরা তাদের আর্থিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এই মামলাগুলোকে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছে বলেই এই সমস্যার কোন সমাধান মিলছে না। নতুন আরো কয়েকটি অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠা করলে আরো বহুজনের ঘুষদুর্নীতির মওকা বাড়বে নিঃসন্দেহে, কিন্তু সমস্যার সমাধানের পথে কোন অগ্রগতি হবে না। অতএব, এই বেফজুল প্রস্তাব থেকে সরে আসাই উত্তম! আমি বুঝি না ট্রাইব্যুনালে বিচারের প্রস্তাবে কোন সরকার রাজি হচ্ছে না কেন? এই প্রস্তাবটি ১৯৯৮ সালে করেছিলেন তদানীন্তন মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন, যিনি এদেশের প্রধান বিচারপতিও ছিলেন। দেশের বিচার ব্যবস্থার অব্যবস্থা ও দুর্নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন বলেই তিনি সকল ব্যাংকের শীর্ষ দশ ঋণখেলাপির বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রস্তাব করেছিলেন। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে অন্য কোন আদালতে আপিল করা যায় না।

ফলে, সাথে সাথে ঐ রায় কার্যকর করা যায়। বছরের পর বছর বিভিন্ন আদালতে ঝুলে থাকা খেলাপিঋণের মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে গেলে রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদেরকে জেলের ভাত খাওয়ানো এবং তাদের সম্পত্তি ক্রোকের পথে আর কোন বাধা থাকত না। সেক্ষেত্রে ঋণখেলাপিরা হয়তো দেশ থেকে ভেগেই যাবে, কিন্তু ব্যাংকিং খাত লুটপাটের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। বর্তমান সরকার যে খেলাপিঋণ সমস্যার কোন প্রকৃত সমাধান চায় না তার বড় প্রমাণ হলো দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা! একইসাথে, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণেরও প্রস্তাব করা হয়নি। এটা সকলেরই বোঝা প্রয়োজন যে হুন্ডি ব্যবসাকে দমন না করলে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার কোনমতেই কমানো যাবে না, যার মানে ফর্মাল চ্যানেলে প্রবাসীদেরকে রেমিট্যান্স প্রেরণে উৎসাহিত করা যাবে না। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপজ্জনক পতনের ধারাকে থামানো যাবে না। এরূপ পদক্ষেপের মধ্যে হুন্ডিওয়ালাদের দেশীয় এজেন্টদেরকে গ্রেফতার, এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং পাকাবাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের ব্যাংকসার্টিফিকেট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

আরেকটি ব্যাপারে বাজেটবক্তৃতায় কিছু না পেয়ে হতাশ হয়েছি, সেটা হলো নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা না করা। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নবায়নযোগ্য সূত্রগুলো থেকে মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেছেন। কিন্তু, কত বছরের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে তা বলেননি। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির ভর্তুকিদাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতির উপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস এবং যুগোপযোগী ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতি চালু করা। সম্প্রতি বেশ কয়েকদিন ধরে ভারতের সাধারণ নাগরিকদের বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর সূর্যোদয় যোজনা’ বা ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনা’ চালুর বিস্তারিত বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ার ইউটিউবে প্রচারিত হয়ে চলেছে। এই বিবরণীতে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় ৪৭,০০০ (সাতচল্লিশ হাজার) রুপি খরচে তিন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার সোলার প্যানেল বাড়ির ছাদে স্থাপন করতে চাইলে উল্লিখিত যোজনার কাছে আবেদন করার নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ব্যাখ্যা মোতাবেক মোট সাতচল্লিশ হাজার রুপি খরচের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮,০০০ (আঠার হাজার) রুপি ভর্তুকি প্রদান করা হবে, আর সোলার প্যানেল স্থাপনকারী ভোক্তাকে ব্যয় করতে হবে ২৯,০০০ (উনত্রিশ হাজার) রুপি। মোট এক কোটি পরিবারকে ‘পিএম রুফটপ সোলার যোজনায়’ অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। ইউটিউবে যোজনার বিবরণ পাঠ করার পর আমার কাছে মনে হয়েছে এই মডেলটি বাংলাদেশে প্রয়োগযোগ্য। আমার মতে ভারতের ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা’র মত একটি কর্মসূচি অবিলম্বে বাংলাদেশে চালু করা প্রয়োজন, যেখানে সরকার রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপনের মোট খরচের একতৃতীয়াংশ বা তারও বেশি ভর্তুকি প্রদান করবে। বাড়ির মালিকদের জন্য এই ভর্তুকি কর্মসূচি তাদেরকে বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনে উৎসাহিত করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সংসদে বাজেট আলোচনায় কোন মাননীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করলে বাধিত হবো। অর্থমন্ত্রী কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি প্রস্তাব করতে পারেন।

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষের প্রেম
পরবর্তী নিবন্ধবনসংরক্ষণে আমাদের করণীয়