দেশের ব্যবসায় সংক্রান্ত পত্রিকা ‘দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ সম্প্রতি তাদের সংবাদ আইটেম টিবিএস ইনসাইটে জানিয়েছে, ২০২২–২৩ অর্থ–বছরে দেশের আমদানি ব্যয় আগের ২০২১–২২ অর্থ–বছরের ৮৬.৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে ২১.১১ বিলিয়ন ডলার কমে ৬৫.২৯ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। এই হ্রাসের হার ২৪. ৪৩ শতাংশ। অর্থনীতির জন্য এটা একদিক্ থেকে সুসংবাদ হলেও আরেকটি দিক্ থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এটা দুঃসংবাদ। প্রথমে কোন্দিক থেকে সুসংবাদ সেটা ব্যাখ্যা করছি। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মোতাবেক ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল। আইএমএফ অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এই রিজার্ভের হিসাবকে গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। তাদের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম–৬ মোতাবেক ঐ রিজার্ভের পরিমাণ থেকে এক্সপোর্ট ডেভেলাপমেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদত্ত সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের অংক বাদ দিতে শর্ত দিয়েছিল তারা। একইসাথে, বাংলাদেশ বিমানকে বিমান কেনার জন্য রিজার্ভ থেকে প্রদত্ত ঋণ, রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকাকে প্রদত্ত ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ এবং পায়রা বন্দরের নৌ–প্রবেশপথ খননের জন্য রিজার্ভ থেকে প্রদত্ত ঋণ বাদ দেওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছিল তারা। বাংলাদেশ তখন আইএমএফ এর এসব শর্ত মেনে নেয়নি। কিন্তু, ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার আইএমএফ থেকে ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ঐ ঋণের শর্ত মেনে ২০২৩ সালে বিপিএম–৬ পদ্ধতি অনুসরণে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ‘গ্রস রিজার্ভ’ দুই বছর চার মাসে বিপজ্জনকভাবে কমতে কমতে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তারিখে বিপিএম–৬ মোতাবেক ১৯.১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল, নিট রিজার্ভ নেমে এসেছিল ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে। গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে আইএমএফ এর ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৬৯ কোটি ডলার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ায় এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রচুর ডলার ক্রয় করায় রিজার্ভ আবার ২১.৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এবং মার্চে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পাওনা পরিশোধের পর ২০২৪ সালের মার্চের ২৪ তারিখ গ্রস রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে অবস্থান করছে, নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৭ বিলিয়ন ডলারে। আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় এরপর আর ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এর কারেন্ট একাউন্টে ঘাটতি সৃষ্টির আশংকা হয়তো থাকবে না, ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমবে না। বরং, শ্লথগতিতে হলেও রিজার্ভ আবার বাড়তে শুরু করবে। এটাই আমদানি নিয়ন্ত্রণের সুফল।
কিন্তু, ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি হ্রাসের মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলার হলো শিল্পের কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারী আমদানি হ্রাস। এসব পণ্যের এল/সি খোলা কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিল্প উৎপাদন ও রফতানি পণ্য উৎপাদনে, যার ফলে বর্তমান ২০২৩–২৪ অর্থ–বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশেরও নিচে নেমে যাওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। এটা হলো আমদানি কমে যাওয়ার অবশ্যম্ভাবী দুঃসংবাদ। আরেকটি দুঃসংবাদ হলো আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিভিন্ন আমদানীকৃত পণ্যের ঘাটতি সৃষ্টির কারণে বাজার–নিয়ন্ত্রণকারী ‘সিন্ডিকেটগুলোর’ দৌরাত্ম্য জোরদার হওয়া। সরকার যে গত দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতিকে কোনমতেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারেনি তার প্রধান কারণ বিভিন্ন পণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট বা ‘যোগসাজশকারী অলিগোপলির’ দৌরাত্ম্য। কিন্তু, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার আশংকা এবং মূল্যস্ফীতির এই ঝুঁকি সত্ত্বেও আমদানি নিয়ন্ত্রণের কঠোর সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হয়েছে প্রধানত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপজ্জনক পতনের ধারা থামানোর জরুরী তাগিদে। অতএব, অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে আমদানি হ্রাসের নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিবে জেনেও আমদানি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সরকারের গত্যন্তর ছিল না। বিশেষত, ২০২১–২২ অর্থ–বছরের আমদানি ব্যয়ের উল্লম্ফন শুধু আমদানী পণ্য বাড়ার কারণে ঘটেনি বলে সন্দেহ করার কারণ রয়েছে। ঐ আমদানি ব্যয়ের আড়ালে ‘ওভারইনভয়েসিং অব ইমপোর্টস’ পদ্ধতিতে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারের একটা হিড়িক পড়েছিল বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। ওভারইনভয়েসিংকে কঠোরভাবে দমন করতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন থামানো যেতো না বলেই আমার বিশ্বাস। অতএব, ১২ বিলিয়ন ডলার শিল্পের কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারী আমদানি হ্রাসের ফলে ওসব পণ্য আমদানি এল/সি’র আড়ালে পুঁজি পাচারের যে আশংকা থাকে সেটা যদি কিছুটা প্রশমিত হয় তাহলে সেটাকেও অর্থনীতির জন্য সুখবর বলাই সমীচীন হবে। তবে, এটা মানতেই হবে যে আমাদের অর্থনীতি এবং বিশেষত রফতানি খাত যেহেতু ব্যাপক আমদানী–নির্ভর তাই দীর্ঘদিন যদি আমদানিকে কঠোরভাবে দমিয়ে রাখা হয় তাহলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক অভিঘাতগুলো ক্রমেই বিপর্যয়কর পর্যায়ে চলে যাবে। অতএব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার পরিকল্পিতভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা অবলম্বন ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই।
আরেকটি বড় সুসংবাদ আসছে ফর্মাল চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্স প্রেরণ গত পাঁচ মাস ধরে বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটায়। প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স গত ২০২০–২১ অর্থ–বছরের ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২–২৩ অর্থ–বছরে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল, যার প্রধান কারণ করোনা ভাইরাস মহামারী চলে যাওয়ার পর হুন্ডি প্রক্রিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণ আবার চাঙা হওয়া। প্রধানত হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হওয়ার কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দ্রুত পতনের যে ধারা আমাদের অর্থনীতিকে টালমাটাল অবস্থায় নিয়ে গেছে তা সামাল দিতে পারছিল না সরকার। ২০২১ সালের আগস্টে দেশে এক ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা। গত আড়াই বছরে ডলারের দাম হু হু করে বেড়ে ২০২৪ সালের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত বাজারে এক ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকায়, কার্ব মার্কেটে এখনো ডলারের দাম ১২০–১২২ টাকা। এর মানে, এই আড়াই বছরে টাকার বৈদেশিক মান কমপক্ষে ২৮ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের পতনকে থামাতে চেষ্টা করেও এদ্দিন সফল হতে পারেনি, কারণ হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হওয়ায় ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছিল সরকার। অবশেষে সুখের খবর এসেছে যে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গত পাঁচ মাস ধরে ফর্মাল চ্যানেলে প্রেরিত রেমিট্যান্স আগের বছরের তুলনীয় মাসের চাইতে বেশি এসেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স ফর্মাল চ্যানেলে এসেছে, যা গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫৬ কোটি ১০ লাখ ডলারের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি।
গত ছয় মাস ধরে ডলারের দাম টাকার অংকে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় ফর্মাল চ্যানেলে প্রেরিত রেমিট্যান্সে এই ইতিবাচক ধারা সূচিত হয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। প্রকৃতপক্ষে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের এই সুবাতাস যদি আগামী মাসগুলোতেও বজায় থাকে তাহলে দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট একাউন্টে ঘাটতি সৃষ্টির পরিবর্তে আবার উদ্বৃত্ত হওয়ার ধারা ফেরত আসবে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা থেমে গিয়ে আবার রিজার্ভের প্রবৃদ্ধির ধারাও ফিরে আসবে। এ–ব্যাপারটা অর্থনৈতিক সংকট থেকে জাতির মুক্তির সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলবে নিঃসন্দেহে।
বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অর্থনীতির সমস্যাগুলো সমাধানের অযোগ্য কোন বিষয় নয়, কিন্তু সাবেক অর্থমন্ত্রীর অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে অনেকগুলো সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পরিণত হয়েছে। নূতন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ–প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে আশা করি দেশ ক্রমেই এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠবে। তবে, প্রথমেই প্রয়োজন হবে সরকারী নীতির দিক্ পরিবর্তন। বিগত দিনগুলোতে সরকার খেলাপি ব্যাংকঋণ, পুঁজি পাচার, হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স প্রেরণ, দুর্নীতি দমন এবং স্বল্প–প্রয়োজনীয় মেগা–প্রকল্প গ্রহণের হিড়িকের ব্যাপারে যে ভুল অবস্থান গ্রহণ করে চলেছিল সেখান থেকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলছি, ব্যাংকের প্রায় আঠার লক্ষ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ইতোমধ্যেই সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকারও বেশি খেলাপিঋণে পরিণত হলেও রাঘব বোয়াল ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের’ বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে নানারকম অযৌক্তিক ছাড় দিয়ে খেলাপিঋণ লুকিয়ে ফেলার সুবন্দোবস্ত করে চলেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী, যার ফলে দেশের সুপরিচিত বড় বড় ঋণখেলাপি প্রায় সবাই এখন ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নিজেদের নাম লুকিয়ে ফেলতে সমর্থ হয়েছে। অথচ, গত পাঁচ বছরে খেলাপিঋণ পুনরুদ্ধারে বিন্দুমাত্র কোন সফলতা অর্জিত হয়নি। দ্বিতীয় যে নজিরটি উল্লেখ করা যায় সেটি হলো, সাত শতাংশ কর দিয়ে পাচারকৃত পুঁজি দেশে ফেরত নিয়ে আসার যে ব্যবস্থা সাবেক অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করেছিলেন তার মাধ্যমে পরবর্তী অর্থ–বছরে একটি কানাকড়িও দেশে ফেরত আসেনি।
পুঁজি পাচারের বিষয়ে সরকারের অবস্থানও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রফতানির আন্ডারইনভয়েসিং, রফতানি আয় দেশে ফেরত না আনা এবং হুন্ডি পদ্ধতিতে ব্যাংকঋণ বিদেশে পাচার—এই চারটি প্রধান অর্থ–পাচার প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৫–১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সংখ্যায় এসব পুঁজিপাচারকারী কয়েক হাজারের বেশি হবে না। দুর্নীতিবাজ সিভিল আমলা, প্রকৌশলী, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক, বিত্তবান ব্যবসায়ী কিংবা মার্জিনখোর রাজনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশের সমাজের উচ্চ–মধ্যবিত্ত, উচ্চ–বিত্তশালী ও ‘এলিট’ অংশে তাদের অবস্থান। তারা দেশের ব্যাংকিং সিস্টেমকে অপব্যবহার করে ব্যাংকঋণ নিয়ে তা বছরের পর বছর ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করে চলেছে। তারা ব্যাংকগুলোর ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ হিসেবে ঋণ–লুটপাটকারীর ভূমিকা পালন করছে। তারা রাজনীতিক পরিচয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুন্ঠন করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী। তারা ৫৩ বছরের স্বাধীনতা–উত্তর বাংলাদেশের ‘এক নম্বর সমস্যা’ দুর্নীতি ও পুঁজিলুন্ঠনের মাধ্যমে অর্থ–বিত্তের মালিক হয়ে তাদের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে কানাডার টরোন্টোর ‘বেগম পাড়া’, অস্ট্রেলিয়ার সিডনীর ফ্রেটারনিটি এবং মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে। পুঁজি পাচারকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে চাইলে সরকারকে হুন্ডি ব্যবসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, কারণ হুন্ডি ডলারের চাহিদা কাঠামোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, মার্জিনখোর রাজনীতিবিদ, গার্মেন্টসের মালিক এবং ব্যাংকঋণ–খেলাপি রাঘববোয়াল ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের আঠারো লক্ষ কোটি টাকা ব্যাংকঋণের মধ্যে এখন কমপক্ষে সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা খেলাপিঋণে পরিণত হয়েছে। এই খেলাপিঋণ সমস্যার সাথে হুন্ডি পদ্ধতিতে ব্যাংকঋণ বিদেশে পাচার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিদেশে পুঁজি পাচারের কারণেই ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যাচ্ছে না। বাজারে ডলারের দাম যতই বাড়ুক হুন্ডিওয়ালারা তার চাইতে ৭/৮ টাকা বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনে নিচ্ছে। সেজন্যই ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা আনয়নের স্বার্থে হুন্ডি ব্যবসার ব্যাপারে সরকারকে কঠোর হতেই হবে। ডলারের বাজার স্থিতিশীল হলে ডলারের প্রাপ্যতার সংকট যেহেতু কেটে যাওয়ার বাতাবরণ সৃষ্টি হবে তখন আমদানি নিয়ন্ত্রণের কঠোর অবস্থান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রমশ সরে আসতে সক্ষম হবে। ফলে, ২০২৪–২৫ অর্থ–বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আবার ৭ শতাংশে উন্নীত করার উপযোগী অর্থনৈতিক নীতিমালা পরিবর্তনের সক্ষমতা অর্জন করবে সরকার। অতএব, আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে উদ্ভূত নেতিবাচক অভিঘাতগুলো অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য সময়মত আমদানি নীতি পরিবর্তনের ব্যাপারটিকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়