প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেছেন, যেখানে নাজুক দশায় পড়া অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব বর্তেছে সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদের ওপর। আইন ও বিচার বিষয়ক বিষয়গুলো সামলাবেন আসিফ নজরুল। এক সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব সামলানো আদিলুর রহমান খানকে অন্তর্বর্তী সরকারে সামলাতে হবে শিল্প মন্ত্রণালয়। আর তার সাবেক ‘বস’, অর্থাৎ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ পেয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান করে নেওয়া দুই তরুণ তুর্কিও পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুই দপ্তরের দায়িত্ব। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ছাত্র মো. নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য–প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করবেন। আর ছাত্রদের আন্দোলনে তার সহযোদ্ধা ২৫ বছর বয়সী আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলিয়ে ২৭টি দপ্তর তার নিজের হাতে রেখেছেন। এর মানে হলো, সামনে আরো নতুন উপদেষ্টাকে তিনি তার উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করে নিতে পারেন। প্রতিরক্ষা থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা থেকে তথ্য, বাণিজ্য থেকে সংস্কৃতি, কৃষি, জনপ্রশাসন থেকে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পানি সম্পদ, রেলওয়ে, সড়ক ও সেতু, নৌ পরিবহন, বিমান পরিবহন, খাদ্য, গণপূর্ত, পার্বত্য চট্টগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রয়েছে এই নোবেলজয়ীর হাতে থাকা দপ্তরের তালিকায়। অতীতে সীমিত সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনেও একেক জনকে একাধিক মন্ত্রণালয় সামলাতে দেখা গেছে।
এবারের উপদেষ্টা পরিষদে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পেয়েছেন সেই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ভার, যে বিষয় নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেনকে এক সময় নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকায় দেখা গেছে। নতুন সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলাবেন। ক্ষমতার পালাবদলে কয়েক দিনের সরকারহীন অবস্থায় তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খলা থামিয়ে আস্থা ফেরানো এবং পুলিশ বাহিনীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার গুরু দায়িত্ব তাকে পালন করতে হবে।
পররাষ্ট্র ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা তৌহিদ হোসেনকে দেখা যাবে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কূটনীতিকের ভূমিকায়। নাগরিক অধিকার কর্মী শারমিন এস মুরশিদ দেখবেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, উবিনীগের ফরিদা আখতার পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এক সময় গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব সামলানো নুরজাহান বেগম নতুন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সামলাবেন। আর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির ও সুন্নি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত আ ফ ম খালিদ হোসেনকে করা হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।
প্রবল গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ নেন মুহাম্মদ ইউনূস। এই যাত্রায় ১৬ জন উপদেষ্টা তার সঙ্গী হলেও বৃহস্পতিবার শপথ নেন ১৩ জন। ফারুক–ই–আজম বীর প্রতীক, সুপ্রদীপ চাকমা এবং ডা. বিধান রঞ্জন রায় ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন না। শপথ নেওয়ার পর তাদের দপ্তর বণ্টন হবে।
কার হাতে কোন দপ্তর : মুহাম্মদ ইউনূস : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; শিক্ষা মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; খাদ্য মন্ত্রণালয়; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; ভূমি মন্ত্রণালয়; বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; কৃষি মন্ত্রণালয়; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; রেলপথ মন্ত্রণালয়; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়; বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ : অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আফিস নজরুল : আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আদিলুর রহমান খান : শিল্প মন্ত্রণালয়, এ এফ হাসান আরিফ : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, তৌহিদ হোসেন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, শারমিন এস মুরশিদ : সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, এম সাখাওয়াত হোসেন : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আ ফ ম খালিদ হোসেন : ধর্ম মন্ত্রণালয়, ফরিদা আখতার : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নুরজাহান বেগম : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মো. নাহিদ ইসলাম : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য–প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।