চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অন্যতম একটি অনুষদ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে তিনটি বিভাগ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৯টি বিভাগ রয়েছে এ অনুষদে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষদ হিসেবে সমধিক পরিচিত।
জানা যায়, শান্তিতে নোবেলজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সমাজবিজ্ঞানের অনুষদেরই শিক্ষার্থী ছিলেন। ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকও। এখানে থেকেই তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রাম থেকেই ১৯৭৬ সালে ভিত্তি রচিত হয় গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম। ক্ষুদ্রঋণ নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা নিয়ে বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালের ২ অক্টোবর একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবে আনুষ্ঠানিক জন্ম হয় গ্রামীণ ব্যাংকের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ‘রুরাল ইকনোমিকস প্রোগ্রামের’ প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তখন জোবরা এবং সংলগ্ন গ্রামগুলোতে শুরু করেছিলেন একটি মাঠ গবেষণা, যেখানে তিনি যাচাই করতে চেয়েছিলেন সমাজের একেবারে নিচু শ্রেণির মানুষের মধ্যে ব্যাংকঋণ সরবরাহের সম্ভাব্যতা। এরপর সেটি জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ধীরে ধীরে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নাম ড. ইউনূস নামে নামকরণ প্রস্তাব করা হয় সিন্ডিকেটে। সেই মোতাবেক ড. ইউনূস ভবন নামে পরিচিত সমাজবিজ্ঞান অনুষদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উত্তর দিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বর্তমান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবন অবস্থিত। ৬ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি পরিকল্পিতভাবে তৈরি, যার প্রতিটি তলায় স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে সিঁড়ির পাশাপাশি লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন এক সিন্ডিকেট সদস্য আজাদীকে বলেন, ড. ইউনূস নোবেল পাওয়ার কয়েক মাস পরেই চবির সিন্ডিকেটে প্রস্তাব আসে অনুষদের নাম তাঁর নামে নামকরণের জন্য। সেই মোতাবেক অনুষদের নামকরণ করা হয় ড. ইউনূস ভবন। এছাড়া তাকে ডিলিট উপাধি দেওয়ার প্রস্তাবও আসে, কিন্তু সেটিতে ড. ইউনূস রাজি হননি।
জানা যায়, ড. ইউনূসের নামে এই স্থাপনার নাম পরিবর্তন করার জন্য ২০১৭ সালে মানববন্ধন করেন চবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া কয়েকবার দাবি উঠে এই অনুষদের নাম পরিবর্তনের। এরপর গত বছরও এই অনুষদের নাম পরিবর্তন করার দাবি জানান আওয়ামীপন্থী শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূস বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই সংবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থী গর্বিত মনে করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুভূতি জানাতে দেখা গেছে। তারা মনে করেন এটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গর্বের একটি বিষয়। মিজানুর রহমান নামে একজন লিখেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, ড. ইউনূস সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এটা আমাদের জন্য গর্বের। অথচ উনার নাম মুছে ফেলার কত চেষ্টা করা হয়েছিল।