পাল্লেকেলে টেস্টে জয় পরাজয়ের চাইতে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ছিল একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। সে প্রতিযোগিতায় লংকানরা এগিয়ে সেটা মানতেই হবে। এমন ব্যাটিং স্বর্গের টেস্টে ফলাফল হওয়াটা কঠিন। শ্রীলংকা-বাংলাদেশ প্রথম টেস্টের ফলাফল তাই ড্রই হলো। কিউরেটররা উইকেটকে এমন ‘ব্যাটিং স্বর্গ’ বানিয়ে রেখেছিলেন যে, এই উইকেটে প্রতিপক্ষের বিশ উইকেট তুলে নেওয়া কঠিনতম কাজগুলোর একটি। বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা কোনো দলই তা পারেনি। ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবের মধ্যে পাল্লেকেলেতে নিস্ফলা ড্রই হয়েছে। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় এটা নিস্ফলা ম্যাচ হলেও বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির এক ড্র। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আগের পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতেই হেরে যাওয়া বাংলাদেশ এই প্রথম পয়েন্টের দেখা পেল। তাছাড়া এই টেস্টে নিজেদের ফিরে পাওয়ার একটা তাগিদ ছিল। সেটা পেয়েছে টাইগাররা। তবে তামিম ইকবাল মনে হয়তো স্বস্তি নেই। কারন পাল্লেকেলের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগানো বাংলাদেশি তারকা সেঞ্চুরি পেলেন না একটিও।
প্রথম ইনিংসে ১০১ বলে ৯০ রানের চকচকে একটা ইনিংস খেলে হঠাৎ-ই আউট হয়ে যান। দ্বিতীয় ইনিংসে তামিমকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করল আবহাওয়া। গতকাল শ্রীলংকা তাদের প্রথম ইনিংসে ৬৪৮ রান করলে স্বাগতিকরা লিড পায় ১০৭ রানের। আর সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বাংলাদেশের দুই তরুণ সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরে গেলে শেষ দিনের রোমাঞ্চের একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। তামিম দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সেই রোমাঞ্চের রেশ উড়ে দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া সাইফ দ্বিতীয় ইনিংসে ১ রান করতে পেরেছেন। সুরঙ্গা লাকমালের বলে টাইমিং মিস করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে দেড়শোর্ধ্ব রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত লাকমালের বাইরের বল স্ট্যাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন শূন্য রানে।
তারপর মুমিনুল হক এসে হাল ধরেছেন। তবে অন্য প্রান্তে রীতিমতো স্টোকের ফুলঝুঁড়ি ছুটিয়েছেন তামিম। মনে হচ্ছিল প্রথম ইনিংসে নিজের ভুলে সেঞ্চুরি মিস করা তামিম দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি পেয়েই যাচ্ছেন। পঞ্চম দিনের চা বিরতিতে যাওয়ার সময় ৭৪ রানে অপরাজিত ছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু চা বিরতি শেষে আর ব্যাটিংয়েই ফেরা হলো না তামিমের। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ছিল তখন ২ উইকেটে ১০০। ৭৪ রান করতে ৯৮ বল খেলে ১০টি চার ৩টি ছক্কা মেরেছেন তামিম। মোমিনুল হক অপর প্রান্তে অপরাজিত ছিলেন ২৩ রানে।
বোলারদের জন্য বধ্যভূমিতে পরিণত হওয়া পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের উইকেটে মাথাকুড়ে মরেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। তারপরও খানিকটা সফল তাসকিন আহমেদ। আগের চার দিনের মত শেষ দিনেও উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। তারপরও তাসকিন টেস্ট করেছেন বোলিংয়ে পরিবর্তন এনে কিছুটা করতে। তার ফলটাও পেয়েছেন তাসকিন। ফিরিয়েছেন ১৬৬ রান করা ধনঞ্জয়াকে। যাতে ৩৪৫ রানের জুটি ভেঙেছে। কিছুক্ষণ পর ডাবল সেঞ্চুরি করা করুনারত্নেকেও গতির মিশ্রনে বোকা বানিয়েছেন তাসকিন। ৪৩৭ বল খেলে ২৬টি চারের সাহায্যে ২৪৪ রান করেছেন লংকান দলপতি। ধনঞ্জয়া ২৯১ বল খেলে ২২টি চারের সাহায্যে ১৬৬ রান করেন। এরপর ১২ রান করা পাথুম নিশাঙ্কা এবং ৪৩ রান করা হাসারাঙ্গা ফিরলে ৮ উইকেটে ৬৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলংকা।