ড্রোন দিয়ে ৪০ ভবন পর্যবেক্ষণ

নাসিরাবাদে সাতটির ছাদে এডিস মশার লার্ভা, জরিমানা ।। জনসচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু কন্ট্রোলে আনা দুঃসাধ্য : কার্যক্রম উদ্বোধনে মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১০ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ড্রোন দিয়ে নগরের নাসিরাবাদ হাউজিং এলাকার ৪০টি ভবন পর্যবেক্ষণে সাতটির ছাদে মিলেছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা। তাই ভবনগুলোর মালিককে ৮৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এছাড়া আরো একাধিক ভবনের ছাদে জমেছিল পানি। ওসব ভবন মালিককে সতর্ক করা হয়। গতকাল সকাল ১১টায় মশার লার্ভা খুঁজতে এ ড্রোন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় ড্রোনের মাধ্যমে পানি দেখতে পেয়ে দুটি ভবনের ছাদে উঠেন মেয়র। এডিস মশার লার্ভা থাকায় মেয়রের উপস্থিতিতেই ৩ নং রোডের ‘আলফা ড্রিমস’ নামে একটি ভবন মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ড্রোনের মাধ্যমে একটি ভবনের ছাদে সুইমিং পুল দেখতে পান মেয়র। পরে সেখানে উঠে মেয়র উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এটা সুইমিংপুল নাকি ডাস্টবিন। এখানে নিচে সব লার্ভা। কিছু কিছু লার্ভা ম্যাচিউরড হয়ে গেছে, এগুলো হয়তো কালকের মধ্যে উড়তে শুরু করবে।

এর আগে উদ্বোধন করার সময় মেয়র বলেন, শহরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা করার জন্য এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্য সচেতনতামূলক কাজ করছি। ড্রোনের মাধ্যমে আমরা সার্ভে করছি। বাস্তবতা হচ্ছে, ওষুধ ছিটিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। জনগণের সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু কন্ট্রোলে আনা খুব দুঃসাধ্য।

মেয়র বলেন, অনেক ভবনে ছাদবাগান আছে এবং বিল্ডিংয়ের উপরে পানি জমে থাকে। ঘরের আঙিনায় পানি জমে থাকে। নিচে তো আমরা ওষুধ ছিটাতে পারি। উপরে উঠতে পারি না। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গেলে নিরাপত্তার অজুহাতে আমাদের কর্মীদের উপরে উঠতে দেয় না। ঝগড়াঝাটি হয়। আমাদের কর্মীরা যাতে সহজে কাজ করতে পারে, কোন ভবনের ছাদে পানি জমে আছে সেটা যাতে সহজে শনাক্ত করতে পারি সে জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার মনে হয় ১০০টা ভবনে যদি আমরা সার্ভে করি তাহলে ৬০ থেকে ৭০টি ভবনে পানি জমে থাকতে পারে। ছাদবাগানে পানি আছে। আবার উপরে পানির টাংকি আছে সেখানে হয়তো পানি পড়ে পড়ে জমে আছে। এখানেই এডিস মশা ডিম পারে। সবাই জানেন এডিস মশা নালানর্দমায় ডিম পাড়ে না। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা পরিষ্কার পানিতে, ফ্রিজের পানিতে, ছাদের পানিতে, একটা কাপেও যদি পানি জমে থাকে সেখানে এডিস মশা ডিম পারতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা ৪৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে লার্ভিসাইডসহ মশা নিধনকারী বিভিন্ন কীটনাশক ছিটাচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে সাফল্য প্রাপ্তিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু অসচেতন বাড়ি মালিকের ছাদে জমে থাকা পানি। বিশেষ করে সুইমিংপুল আর ছাদবাগানগুলো মশার নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। অনেক বাড়ির মালিক আবার আমাদের কর্মীদের ছাদে উঠতে দেন না। আমরা মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি নালানর্দমায়, কিন্তু আবাসিক ভবনগুলোই হয়ে উঠছে মশার বড় আবাসস্থল। তাই বাধ্য হয়ে ড্রোন দিয়ে ছাদ পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, প্রথম দিনে আমরা হতাশ। বেশিরভাগ ভবনের ছাদে পানি জমেছিল। সেখানে অল্পপরিমাণ লার্ভাও ছিল। এসব ভবন মালিককে সতর্ক করা হয়। কীটনাশক ছিটানো হয়। বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে এমন সাত ভবন মালিককে জরিমানা করা হয়।

তিনি বলেন, মশার সংক্রমণ কমাতে আমরা ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে জোর দিচ্ছি। আরবান ভলান্টিয়ার ও রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়ারদের ৮টি টিম গঠন করে নগরীর ৮টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ করে জনগণকে তাদের বাসায় জমে থাকা পানি অপসারণের আহ্বান জানানো হচ্ছে এবং মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

এদিকে ড্রোনের মাধ্যমে এডিস মশার লার্ভা শনাক্তের পর জরিমানা করেন চসিকের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মণীষা মহাজন। তিনি ৩ ভবন মালিককে ২০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার টাকা, দুই ভবন মালিককে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, ১ ভবন মালিককে ৫ হাজার টাকা এবং অপর এক ভবন মালিককে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অভিযানের সময় অনেকগুলো ভবনের পানির টাংকি থেকে উপচে পড়া পানি ছাদে জমেছিল। ওসব পানি নিচে পড়ার মতো পাইপও ছিল না। ফলে জমে থাকা এসব পানিতে কিলবিল করছিল এডিসের লার্ভা। এছাড়া বহু ভবনে ছিল ফুলের টব। সেখানে জমে থাকা পানিতেও ছিল এডিসের লার্ভা।

চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি আজাদীকে বলেন, পুরো নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিং আমরা ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেছি।

ড্রোন পরিচালনাকারী সাগর দত্ত আজাদীকে বলেন, ১২০ মিটার উঁচু পর্যন্ত ড্রোন উড়ানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৪ জুন চকবাজার ওয়ার্ডের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার প্রেসিডেন্সি স্কুলের সামনে একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে চসিক। এরপর ২২ জুন একই ওয়ার্ডের চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের সামনে ৪১ ওয়ার্ডে ১০০ দিনের আরেকটি ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাবে চসিক
পরবর্তী নিবন্ধব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসে কী ধরনের ঝুঁকি