নিখোঁজের ১৬ ঘণ্টা পর নগরীর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের আবিদারপাড়া এলাকার নাসির খাল থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটির নাম সাইদুল ইসলাম শহীদুল (৮)। সে বিল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক আলী আকবরের ছেলে। সে আগ্রাবাদ শিশু নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার মা নাছিমা আক্তার বাক্প্রতিবন্ধী। ১০ জুন আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা বক্স ড্রেনের ঢাকনা (স্ল্যাব) খোলা থাকায় শিশুটি খেলতে গিয়ে অসাবধানবশত খালে পড়ে গেছে। দুদিন আগে ড্রেনের ওপর থেকে ঢাকনাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে।
শিশুর মরদেহ উদ্ধারের খবরে ঘটনাস্থলে যান সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খাল সংস্কার ও বক্স ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। আমরা জানতে পেরেছিলাম, বক্স ড্রেনের উপর লোডেড ট্রাক যাওয়ার কারণে কয়েকটা স্ল্যাবের ক্ষতি হয়েছে। নির্মাণ ত্রুটিরও অভিযোগ কিছুটা পেয়েছিলাম। এগুলো খতিয়ে দেখার জন্য আমি ৫–৬টা স্ল্যাব তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিই। স্থানীয়রা যে ধারণা করছেন সেটি সঠিক নয়। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে ৫–৬টা স্ল্যাব তুলে নেওয়া হয়। শিশুটি কিন্তু নিখোঁজ হয়েছে বিকাল ৫টার দিকে। আর আমাদের স্ল্যাব তোলা হয়েছে রাত ৮টার দিকে। তাহলে শিশুটির স্ল্যাবের অংশে ড্রেনে পড়ে নিখোঁজের সম্ভাবনা মোটামুটি নেই বললেও চলে। তারপরও যেহেতু বক্স ড্রেনের মাত্র ২০০ গজ দূরে খালে লাশটা পাওয়া গেছে, আমরা কিন্তু সেটা বলছি না। আরও একটা বিষয় খেয়াল করবেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি নেই। খালের পানি, ড্রেনের পানি একেবারে স্ট্রেইট আছে। এখানে পড়ে গিয়ে স্রোতে তলিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আশা করি পুলিশের তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগরের খাল–নালায় পড়ে গত চার বছরে মারা গেছে ১০ জন।
নগরীর নালা–নর্দমা পরিষ্কার রাখা এবং নতুন নালা–নর্দমা, খাল নির্মাণ কিংবা সংস্কার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মূল দায়িত্ব হলেও তারা সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কি না সে ব্যাপারে নাগরিকবৃন্দ সন্দেহ প্রকাশ করছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৪১টি ওয়ার্ডে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রতিদিন যে নির্দিষ্টসংখ্যক পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় তারা যথাযথভাবে কাজ করছে কি না তা সঠিকভাবে তদারকি হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আজাদীর প্রতিবেদনে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদেরের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শিশু সাইদুল শনিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিল। স্থানীয় লোকজন সকালে খালে শিশুটির মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, নালার উপর স্ল্যাব খোলা থাকায় শিশুটি খেলার সময় নালায় পড়ে গিয়ে মারা যেতে পারে। বাকিটা তদন্তের পর জানা যাবে।
সড়ক, নালা–নর্দমা অরক্ষিত পড়ে থাকলেও কোনো প্রকার জবাবদিহিতা না থাকায় মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটছে। গত চার বছরে অরক্ষিত সড়ক ও নালার কারণে দশ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতিবছরই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।
প্রায় প্রতিটি এলাকার সড়কের পাশে ড্রেন থাকলেও সব জায়গায় ঢাকনা নেই। দিনদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। মশার উপদ্রব, যেখানে সেখানে ময়লা–আর্বজনা তো রয়েছেই। এর ফলে ভোগান্তি আর দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে নগরবাসীর। শিশু স্কুলগামী ছাত্র–ছাত্রীসহ পথচারীরা এ ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে সবসময় ভয়ে থাকে, কখন কে পড়ে যায় ড্রেনে।
স্পষ্টত বলা যায়, ড্রেনের ঢাকনা না থাকায় পথচারীদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। দিনে সাবধানতা অবলম্বন করলেও রাতের অন্ধকারে ঢাকনাবিহীন ড্রেনে অনেককেই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। মানুষের চলাচলের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে ঢাকনাবিহীন ড্রেন।
নাগরিক সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নগরবাসী যে অবহেলার শিকার হচ্ছে, তাকে ছাপিয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের চলাচল। নগরবাসীর জীবন যে ঝুঁকির মুখে পড়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় একের পর এক যে দুর্ঘটনা ঘটছে, তাকে কোনোভাবে স্বাভাবিক জীবনের অংশ ভাবা যায় না। অনেকে এক খুন বলে আখ্যায়িত করছেন। এ বিষয়ে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে নগরবাসীকে?