ড্রেজিংয়ে বাড়ছে কর্ণফুলী পাড়ের সৌন্দর্য

রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা প্যারাবন সৃষ্টি করার দাবি

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলীতে ড্রেজিং কার্যক্রম চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের ড্রেজিং করা বালি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পূর্ব সরফভাটা এলাকার নদী পাড়ে ফেলা হচ্ছে। এতে নদী পাড়জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে নয়নাভিরাম চর। যেখানে বিকাল হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে বেড়াতে আসতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষদের। পাড়জুড়ে নদীরক্ষা ব্লকের কাছে বালি ফেলার ফলে পাড়ের বাসিন্দারাও সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে গোডাউন পর্যন্ত একইভাবে বালি ফেলে স্থায়ীভাবে চর রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা যায়, নদী ভাঙন রোধে কর্ণফুলীতে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের উদ্যোগে ২০০৮ সালের পর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পূর্ব সরফভাটা থেকে গোডাউন পর্যন্ত ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। এরফলে ভাঙন রোধ হয় এবং পূর্ব সরফভাটা এলাকা দিয়ে কর্ণফুলীর বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগে উঠে। তবে তা শুধুমাত্র ভাটার সময় দেখা যেতো। সমপ্রতি কর্ণফুলী ড্রেজিং শুরু হলে কিছু কিছু এলাকায় ব্লক ধসে যেতে শুরু করে। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে ড্রেজিং এর বালি নদী তীরে ফেলা হয়। এতে পূর্ব সরফভাটা দিয়ে অন্তত ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে ডুবো চর দৃশ্যমান হয়ে চমৎকার দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ব্লক ধসের ঘটনায় চিন্তার ভাজ পড়া জনসাধারণও আশার আলো দেখতে পায়।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙনের কারণে একসময়ের অভিশপ্ত কর্ণফুলী এখন বাসিন্দাদের জন্য আশীর্বাদে রূপ নিয়েছে। নদীর শিলক খালের মুখ থেকে মরাখালের মুখ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে নদীপাড়ে ড্রেজিংয়ের বালি ফেলা হয়েছে। এতে পাড়ঘেষে চর সৃষ্টি হয়েছে। যেটি সমুদ্র বীচের ন্যায় এই স্থানে নয়নাভিরাম দৃশ্যে রূপ নিয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এই স্থানে বেড়াতে আসছেন। আগতদের জন্য এই চরে নানা পসরা সাজিয়ে বসছেন বিভিন্ন দোকানি। অন্যদিকে চরের কারণে নদী পাড়ের ভাঙণ রোধ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শতবর্ষী মোয়াবিনুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে শুরু করে রক্ষা হবে এই এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি। তবে এই চর স্থায়ীভাবে রক্ষা করে পরিকল্পিতভাবে প্যারাবন লাগালে এখানে অপার পর্যটন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিন সরফভাটা মুয়াবিনুল ইসলাম মাদ্রাসা সংলগ্ন কর্ণফুলীর তীর এলাকায় পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সম্ভাব্যতা পরিদর্শন করেন সরফভাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শুধু এই স্থানে নয়, ড্রেজিং করা বালি গোডাউনের মাওলানা গ্রাম পর্যন্ত নদী পাড়ে ফেলা হলে ভাঙন থেকে রক্ষা হবে নদী তীর। পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে প্যারাবন লাগালে চরগুলো যেমন টেকসই হবে, তেমনি নদীপাড়ের সৌন্দর্য অনেক দেশের পর্যটন স্পটকেও হার মানাবে। এজন্য আমি নিজে বন বিভাগের সাথে কথা বলেছি। তারা প্যারাবন সৃষ্টির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডও এই ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাত ধরে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায় নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। এবার ড্রেজিং এর বালিও যদি নদীর পাড়ে ফেলা হয়, ব্লক ধসে গিয়ে ভাঙনের শিকার আর হতে হবে না। নদী পাড়ের সৌন্দর্যও বাড়বে।’

চরে জাল মুড়ি বিক্রি করতে বসেছেন আবদুল আলিম নামে এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে এই স্থানে অনেক মানুষ বেড়াতে আসেন। তার আধাবেলার মধ্যে ১২০০ টাকা বিক্রি হয়।’

মোয়াবিলুন ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি নেজাম উদ্দীন বলেন, ‘ব্লক দেয়ার পর তা ধসে পড়ে যাচ্ছিল। তবে চরের কারণে শতবর্ষি মাদ্রাসা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। শিলক খালের মোহনায় যদি মুখটা আরও বড় করে জিও ব্যাগ কিংবা ব্লক স্থাপন করা হয়, তবে ভাঙন রোধ এবং চর রক্ষা হবে। সৌন্দর্যও আরও বাড়বে।’

মার্শাল টিটু নামে চরে বেড়াতে আসা অপর একজন বলেন, ‘চর জেগে উঠার পর এখানকার দৃশ্য সমুদ্র পাড়ের ন্যায় অপরূপ সৌন্দর্য্যে রূপ নিয়েছে। এটি যদি রক্ষা করা হয়, তবে কর্ণফুলীর তীর ঘেষে অপার পর্যটনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।’

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম বলেন, ‘অভিশপ্ত কর্ণফুলী ড্রেজিং এর বালির কারণে জেগে উঠা চরে বাসিন্দাদের জন্য আশির্বাদে পরিণত হয়েছে। গোডাউন পর্যন্ত যেন একইভাবে ড্রেজিং এর বালিগুলো ফেলা হয় এবং তীর ঘেষে প্যারাবন সৃষ্টি করে এটি রক্ষা করা হয়।’

এসময় কথা হয় ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত সার্ভেয়ার হামিদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে নদীর তীর ঘেষে বালিগুলো ফেলা হয়েছে। বাকী অংশটুকুতেও ড্রেজিংয়ের বালি নদী তীরে ফেলা যায় কিনা, সেটা উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে আলাপ করা হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমিরাবাদে আগুনে পুড়েছে পাঁচ বসতঘর
পরবর্তী নিবন্ধমেশিনের ঘর্ষণে কর্ণফুলী জুট মিলে আগুন