বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেডের (সিডিডিএল) অধীনে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) যাত্রা শুরু হয়েছে। গতকাল প্রথম দিনেই আগেকার কাজের কোনো ছন্দপতন হয়নি বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাইফ পাওয়ার টেকের সাথে চুক্তি শেষ। তারা চলে গেছে। এনসিটির যেসব লোকবল আগে কাজ করতেন তাদেরকে ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিয়ে কাজ পরিচালনা করছেন। ৬ এপ্রিল আগেকার অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেকের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
গত (রোববার) রাত ১২টা ১ মিনিটে বন্দর ও ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ এনসিটির দায়িত্ব সাইফ পাওয়ার টেকের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এনসিটিতে বেসরকারি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের প্রায় দেড় যুগের অবসান হলো। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক দৈনিক আজাদীকে বলেন, এনসিটিতে কোনো ছন্দপতন হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে (ডিপিএম) এনসিটি পরিচালনা করবে চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড। এরপর বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ এনসিটির দায়িত্ব বুঝে নেওয়া শুরু করেছিল। রোববার মধ্যরাত থেকে ড্রাইডকের অধীনেই এনসিটি পরিচালিত হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বন্দরের অপারেশনাল সব পয়েন্টে ড্রাইডক ও বন্দরের লোকজন দায়িত্ব পালন করছেন। জাহাজ বার্থিং থেকে শুরু করে কন্টেনার লোড, আনলোড এবং ডেলিভারি সবই স্মোথলি চলছে। বন্দর সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় এবং সমৃদ্ধ টার্মিনাল হচ্ছে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল। কী গ্যান্ট্রি ক্রেন, স্ট্রাডল ক্যারিয়ারসহ কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট এই টার্মিনালে রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এই টার্মিনালকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ইকুইপমেন্টে সমৃদ্ধ করে। বন্দরের ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক গত প্রায় দেড় যুগ ধরে টার্মিনালটি পরিচালনা করে আসছিল। এনসিটিতে প্রতি ঘণ্টায় ৩০টির বেশি কন্টেনার জাহাজ ওঠানামা করানোর সক্ষমতা রয়েছে, অন্যান্য বার্থ এবং টার্মিনালে যা প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ১৭ থেকে ১৮টি। বছরে এখন ১২ থেকে ১৩ লাখ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে এনসিটিতে। এই টার্মিনালে জেটি আছে পাঁচটি। এই পাঁচ জেটিতে চারটি সমুদ্রগ্রামী জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী একটি জাহাজ ভিড়তে পারে।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, সাইফ পাওয়ারটেক ২০০৫ সালে বন্দরের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার সুবিধা নিয়ে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
টেন্ডার ছাড়াই বছরের পর বছর চুক্তি নবায়ন এবং টেন্ডার পদ্ধতিতে একচেটিয়া সুবিধা পাওয়ার মাধ্যমে তারা বন্দরে এক ধরনের ‘ছায়া শাসন’ কায়েম করে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিনের সঙ্গে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, নূর–ই–আলম চৌধুরী, সামশুল হক চৌধুরী ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ. ম. নাছির উদ্দীনের ঘনিষ্ঠতা সেই আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।