চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার’ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখানে একজন প্যাথলজিস্ট থাকবেন। ডেঙ্গু নির্ণয়ে যে টেস্ট তা এখানে নিশ্চিত করা হবে। যে কোনো রোগী এখানে এসে অত্যন্ত সাশ্রয়ী রেটে, বাইরে থেকে ৩০–৪০ শতাংশ কমে এখানে সেবাটা পাবেন। গত ৬ নভেম্বর হাসপাতালটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মেয়র। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে কিডনি রোগীদের ডাইয়ালাইসিস এর সুবিধার্থে অতি দ্রুত চসিকের উদ্যোগে নগরে একটি অত্যাধুনিক ডায়ালাইসিস সেন্টার নির্মাণেরও ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এখন কিডনি রোগী বেশি। ডাইয়ালাইসিস করতে তাদের কষ্ট হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এত বেশি রোগী, তারা ফি নেয় কিন্তু ঠিক মত ডাইয়ালাইসিস করতে পারে না। তিনি সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একটি অত্যাধুনিক ডায়ালাইসিস সেন্টার করার পরিকল্পনা আছে, যেখানে স্বল্প খরচে সেবা পাবেন। এর বাইরে বার্ন, ট্রমা, নিউরোসার্জারি হাসপাতালসহ বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসাপতালে সমস্ত ফ্যাসিলিটিস নিশ্চিতে আমি বদ্ধপরিকর। এখানে যে মেশিনগুলোর সংকট রয়েছে সেগুলো প্রোভাইড করব। চিকিৎসার ব্যাপারে আমি কোনো ধরনের কমপ্রোমাইজ করতে চাই না। আমি চাই জনগণ সাশ্রয়ী রেটে যেন তাদের সেবা পায়।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি মেয়রের পদক্ষেপকে আমরা অভিনন্দিত করছি। ডেঙ্গু এমন এক রোগ, যাকে নিয়ে কোনো রকম অবহেলা নয়, তার মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা দেখি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারাবছর নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম চালানো হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেবল আগাম সতর্কতা জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে তাদের দায়িত্ব সারে তারা। সিটি করপোরেশনগুলো আগাম সতর্কতা পাওয়ার পরও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেয় নি। অনেকের অভিযোগ, ডেঙ্গু প্রতিরোধের কার্যক্রম চলছিল অনেকটা দায়সারাভাবে। এমনকি যখন ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করে তখনও কিছু অনিয়মিত অভিযান ছাড়া তেমন উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ বোধ করে নি বলে অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে ডেঙ্গু আজ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ আকারে। ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে রেকর্ড মাত্রায়।
এদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে দেশব্যাপি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে গবেষণা এবং উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণকল্পে গঠিত কমিটিতে দেশের স্বনামধন্য কীটতত্ত্ববিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞ। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই দেশে ডেঙ্গু মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। গত ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে দেশব্যাপী ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধকল্পে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হাসান আরিফ বলেন, মশক নিধনে মেডিসিন ভিত্তিক কার্যকলাপে সীমাবদ্ধ না থেকে পরিবেশবান্ধব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাগত তথ্য নয়, রোগীর ঠিকানা অনুসন্ধান করেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মশক নিধন স্প্রে শুধুমাত্র নালা–নর্দমায় নয় বাড়ির ভেতরেও ছিটানো প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনগুলোতে এন্টোমলজি ল্যাব স্থাপন করতে হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে মশা সংগ্রহ করে প্রজাতি নির্ধারণ করে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক লার্ভার দৈনন্দিন ঘনত্ব কেমন তা যাচাই–বাছাই করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কীটতত্ত্ববিদরা মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার কথা বলেন।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নিজে একজন চিকিৎসক হওয়ার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সেবায় তাঁর অধিক মনোযোগ থাকবে বলে নগরবাসী মনে করেন। আশা করি ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা প্রয়োজন, সবকটি পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করবেন। জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কিন্তু জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে যেসব ঘাটতি ছিল, তা পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার’ গড়ে তোলা হলে রোগীরা উপকৃত হবেন।