ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে

| সোমবার , ২৪ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গু বাড়ার আশংকা রয়েছেএমন খবরে নগরবাসী উদ্বিগ্ন। গত ১৯ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে এমন আশংকার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। বিশেষ করে ভ্যাপসা গরমের সাথে এক পশলা বৃষ্টি কিংবা থেমে থেমে বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গত মাসে শীত পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে। আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি শুরু হবে গ্রীষ্ম মৌসুম। গ্রীষ্মের খরতাপে যদি বৃষ্টি হয়, তবে ডেঙ্গু নিয়ে গত বছরের মতো আবারও নগরবাসীর মাথাব্যথার কারণ হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাতেগোনা লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে আগামী মাস থেকে এর প্রকোপ শুরু হতে পারেএই আশঙ্কা নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন পুরুষ ও ১ জন নারী। দুজনই বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১১২ জন। এর মধ্যে নগরীতে ৪৭ জন এবং উপজেলায় ৬৫ জন। মারা গেছেন ১ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। অনেক রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষার (এনএসওয়ান) রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এর দরকার নেই। ডেঙ্গুর প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন কেবল রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। তখন জরুরি চিকিৎসা কিংবা নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে রক্তের প্লাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক থাকে। আসলে প্লাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। গত বছর বিশেষ করে ডেঙ্গুর ভ্যারিয়েন্ট ডেন২ এর সাবভ্যারিয়েন্ট কসমোপলিটনে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হার বেশি ছিল।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ইতোপূর্বে বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, বরং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগই পারে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে। তিনি বলেছিলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এবং সাধারণ জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় নগরে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। এছাড়া সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার’ গড়ে তোলারও ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখানে একজন প্যাথলজিস্ট থাকবেন। ডেঙ্গু নির্ণয়ে যে টেস্ট তা এখানে নিশ্চিত করা হবে। যে কোনো রোগী এখানে এসে অত্যন্ত সাশ্রয়ী রেটে, বাইরে থেকে ৩০৪০ শতাংশ কমে এখানে সেবাটা পাবেন।

সেই অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে এনএসওয়ান এন্টিজেন পরীক্ষা সেবা চালু করা হয়েছে এবং ডেঙ্গু রোগীদের জন্য মেমন হসপিটালে বিশেষায়িত ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আমরা মনে করি সিটি মেয়রের কথাগুলো গুরুত্ব বহন করে। কেননা, শুধু সিটি করপোরেশন নয়, সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ ও নগরবাসীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। অন্যদিকে, ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল সেন্টার’ গড়ে তোলা হলে রোগীরা উপকৃত হবেনতাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ডেঙ্গু এমন এক রোগ, যাকে নিয়ে কোনো রকম অবহেলা নয়, তার মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা দেখি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারাবছর নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম চালানো হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেবল আগাম সতর্কতা জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে তাদের দায়িত্ব সারে তারা। সিটি করপোরেশনগুলো আগাম সতর্কতা পাওয়ার পরও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেয় না। অনেকের অভিযোগ, ডেঙ্গু প্রতিরোধের কার্যক্রম তথা মশক নিধন কার্যক্রম চলে অনেকটা দায়সারাভাবে। এমনকি যখন ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করে তখনও কিছু অনিয়মিত অভিযান ছাড়া তেমন উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ বোধ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি হয়।

আসলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মূল অস্ত্র হল সচেতনতা। তবু প্রকোপ বাড়লে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে