গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর– বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন অন্তত ১০ কোটি মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এরইমধ্যে তা বুঝতে শুরু করেছে বিশ্ব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুয়ায়ী, ২০০০ সালে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান প্রায় ২০ হাজার মানুষ। আর চলতি বছর বিশ্বে ৪০ হাজার মানুষ মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ৩ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে গত বছর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এ সময় প্রতি মাসে গড়ে ২ হাজার ৬শ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। ওই হিসেবে এ পাঁচ মাস ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ‘ভয়ংকর’ সময়। তাই এ সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগও শঙ্কায় থাকে। চলতি বছর জুলাই মাসের মাত্র দুদিন পেরিয়েছে। এরই মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের গতকালের প্রতিবেদনে ৫ জন এবং আগের দিনের প্রতিবেদনে ৯ জন শনাক্তের তথ্য দেওয়া হয়। দুদিনে ১৪ জন শনাক্তের পর তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা কী সত্যি হতে চলেছে? তবে সিটি মেয়র ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি রোধে সচেতনতার ওপর জোর দেন। এছাড়া কারো জ্বর হওয়ার এক থেকে চার দিনের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্তে ‘এনএস–১’ এবং এরপর ‘আইজিজি’ বা ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ জন বেড দিয়ে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড কর্নার করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন সিভিল সার্জন। একইসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে কোনো ডেঙ্গু রোগীকে নগরে প্রেরণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশার বংশবিস্তারে সাহায্য করছে নগরায়নও। কিছু স্থানে এই রোগ আগে ছিলো না কিন্তু এখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই প্রবণতা এখন বাংলাদেশ ও ভারতে দেখা যাচ্ছে। সাস্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যালিফোর্নিয়া, দক্ষিণ ইউরোপ, আফ্রিকায় ডেঙ্গু আক্রান্তে সংখ্যা বেড়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কিন্তু জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। কীটতত্ত্ববিদরা মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার কথা বলেন। এজন্য প্রথমত, চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। কেননা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মশা বেশি জন্মায়। দ্বিতীয়ত, জৈবিক পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে কোথায় কোথায় মশা বেশি, কোন ধরনের মশার উপদ্রব বেশি এবং এ মশার জন্য কোন ওষুধ কতটুকু ছিটাতে হবে, তা নির্ণয় করে ওই জায়গায় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। যেন এসব জায়গায় নতুন করে মশা জন্মাতে না পারে। এছাড়া মশার অতিরিক্ত প্রজনন বন্ধের জন্য জলাশয়ে মাছ, হাঁস ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, রাসায়নিক ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবশেষ সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ চারটিকে একত্রে কীটতত্ত্ববিদদের মতে ‘সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা’ বলা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ঢাকা শহরে বসবাসরতদের ঝুঁকি বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ডেঙ্গুতে রাজধানীর সব বাসিন্দা আক্রান্ত হতে পারেন। তবে রাজধানীর পাশাপাশি দেশের অন্যসব এলাকাতেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে মনোযোগী হতে হবে।