ডেঙ্গু প্রতিরোধে অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়

| রবিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গুতে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু দেখলো বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহতা দেখা গিয়েছিল। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সমপ্রতি ডেঙ্গুতে এক বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুর রেকর্ড হলো। এর আগে সরকারি হিসাবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল ২০১৯ সালে; ১৭৯ জন। এ বছর মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮২ ছাড়িয়েছে। নভেম্বর মাসের প্রথম আট দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের বেশি। এ বছরের এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ঢাকা শহরের প্রাক-বর্ষা মৌসুমের মশা জরিপের তথ্য প্রকাশ করার পর দেখা যায়, ২০২০ ও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মশা বেশি পাওয়া গেলেও যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, ১৮ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মধ্য আগস্টের পর থেকে বাড়তে থাকা ডেঙ্গুর প্রকোপ যেন কমছেই না চট্টগ্রামে। বরঞ্চ এ রোগে আক্রান্তদের মাঝে মৃত্যুর হার যেন দিনদিন বাড়ছে। তবে এ রোগে সবচেয়ে বেশি ধরাশায়ী হচ্ছে শিশুরাই। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ২৯ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এর ১১ জনই শিশু। হিসেবে এটি মোট মৃত্যুর প্রায় ৪০ শতাংশ। আর ৯ জন নারী ও ৯ জন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে, মোট আক্রান্তদের মাঝেও শিশুর সংখ্যা কম নয়। চলতি বছর ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার (৩ হাজার ৯৪০ জন) ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৯৫৬ জন। এটি মোট আক্রান্তের ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রতি চারজনের একজন শিশু। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩১৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে চমেক হাসপাতালে। এর মাঝে শিশু রোগীর সংখ্যা ২০০। আর হাসপাতালে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। এর মাঝে ৫ জনই শিশু। আগের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ২৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৬ জন শিশু বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। জ্বরে ভুগলেও ডেঙ্গু শনাক্তে দেরি এবং রোগীকে হাসপাতালে আনতে বিলম্বের কারণেই আক্রান্তদের মাঝে মৃত্যুর হার বাড়ছে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা দেখি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারাবছর নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম চালানো হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেবল আগাম সতর্কতা জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে তাদের দায়িত্ব সারে তারা। সিটি করপোরেশনগুলো আগাম সতর্কতা পাওয়ার পরও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেয় না। এমনকি যখন ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করে তখনও কিছু অনিয়মিত অভিযান ছাড়া তেমন উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ বোধ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে ডেঙ্গু আজ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ আকারে। ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রেকর্ড মাত্রায়। জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদের একটা বক্তব্য পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তিনি বলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হয়নি, বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কোনো পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। এই মশা থাকলেই রোগী থাকবে। এখন যে প্রকোপ দেখা যাচ্ছে, তা ছিল অবধারিত’। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে কোনো অবহেলা বিপজ্জনক। বিশেষ করে, সিটি করপোরেশনের অবহেলা ও উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে দরকার জাতীয় কর্মকৌশল। যার মূল ভিত্তি হবে কীটতাত্ত্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি। যার মধ্যে থাকবে কীটতত্ত্ববিদ, কীটতাত্ত্বিক ল্যাবরেটরি, মশক নিয়ন্ত্রণের নানা ধরনের যন্ত্রপাতি ও কীটনাশক। সব মিলে বড় আকারের কর্মকৌশল যদি প্রণয়ন করা না যায়, তাহলে করোনায় আমরা যতটা সাফার করেছি, ডেঙ্গুতে তার থেকে বেশি সাফার করবো। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভর্তির সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে, মৃত্যুও বেশি হতে পারে। তাঁরা বলেন, এ ব্যাপারে কার্যকরী ও জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। কীটতত্ত্ববিদ থাকবেন সার্বক্ষণিক- তাঁরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষণার কাজ করবেন, ডাক্তার চিকিৎসা দেবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জনগণকে সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে