চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এবং সাধারণ জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় নগরে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব বলে মনে করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এক্ষেত্রে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে আলেম–ওলামাদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিনগণ জুমার খুতবায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে মুসল্লিদের সচেতন করলে তা ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভাল ফল বয়ে আনবে। মেয়র ডেঙ্গু প্রতিরোধে ইতোমধ্যে চসিকের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
গতকাল বুধবার সকালে লালদীঘি চসিক পাবলিক লাইব্রেরি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলেম ওলামাদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভা শেষে মেয়র আলেম–ওলামাদের সাথে নিয়ে লালদীঘি এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।
সভায় ড. শাহাদাত বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে এনএসওয়ান এন্টিজেন পরীক্ষা সেবা চালু করা হয়েছে এবং ডেঙ্গু রোগীদের জন্য মেমন হসপিটালে বিশেষায়িত ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কর্পোরেশনের মশা নিধনের জন্য উন্নত ওষুধ এবং স্প্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। মশক নিধনের নতুন মস্কুবান সলিউশন প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা পরিবেশবান্ধব এবং মশা নিধনে কার্যকর।
সচেতনতার উপর জোর দিয়ে মেয়র বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মূল অস্ত্র হল সচেতনতা। আলেম সমাজের সদস্যরা মসজিদে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করলে সাধারণ জনগণ তা গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। বিশেষ করে প্রতি জুমা’র খুতবায় খতিব সাহেবরা যদি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন তা জনগণ অনুসরণ করবে। মাদরাসা শিক্ষকরা যদি ক্লাস নেয়ার সময় ছাত্রদের ডেঙ্গু বিষয়ে বলেন তাহলে ছাত্ররা সচেতন হবে। সমাজের কল্যাণে ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলেম সমাজকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর কারণে সাধারণ মানুষ ভুগছে এবং এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত বাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, বালতি, টায়ার এবং এসির পানির ট্রেতে পানি জমতে না দেওয়া। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশিদের ধর্মভীরু উল্লেখ করে মেয়র ডা. শাহাদাত আলেম সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা ধর্মভীরু জাতি। আমরা আলেম–ওলামাদের অনেক সম্মান করি। আলেম–ওলামারা কোনো কথা বললে তা মানুষ অনেক মনোযোগের সঙ্গে শুনে। আপনারা যদি পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলোর সাথে ইসলামের সম্পর্কের দিকটি মুসল্লিদের ব্যাখ্যা করে বলেন তা মুসল্লিদের মনে স্থান করে নিবে। আপনারা মসজিদে মুসল্লিদের কাছে এই বার্তাগুলো পৌঁছে দেবেন এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবেন। আপনারা এই বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন, কারণ সাধারণ জনগণ আপনাদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং অনুসরণ করে। আমরা সবার সহযোগিতায় একটি ডেঙ্গু মুক্ত চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে চাই।
সভায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে টিকা প্রদানেও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে আলেমদের সহায়তা চান মেয়র। তিনি বলেন, কর্পোরেশন থেকে বিনামূল্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে নারী শিশুদের জন্য এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে এ টিকা নিতে ৩ হাজার টাকা লাগে, অথচ আমরা বিনামূল্যে দিচ্ছি। কুকুরের কামড়ে আক্রান্তদেরও ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন। এসব বিষয়ে আপনারা মানুষকে সচেতন করলে চট্টগ্রামকে হেলদি সিটি করতে পারব আমরা।
সভায় বক্তব্য রাখেন চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি। চসিকের মাদ্রাসা পরিদর্শক মাওলানা মোহাম্মদ হারুনুর রশিদের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাওলানা আমানুল্লাহ। সভা শেষে দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা আবদুস সোবহান ভূঁইয়া।
মাওলানা আমানুল্লাহ বলেন, ইসলামে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। মেয়র মহোদয় চট্টগ্রামকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং নাগরিকদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে যেসব বিষয় জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে বলেছেন তা সমাজের জন্য কল্যাণকর। উনার চিন্তাকে আমরা সমর্থন করি এবং সমাজের কল্যাণে ডেঙ্গু বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে আমরা ভূমিকা রাখব।
সভার পর উপস্থিত আলেম–ওলামারা ফোরকানিয়া মাদরাসা শিক্ষকদের সম্মানি বৃদ্ধির অনুরোধ জানালে মেয়র তাতে সম্মত হন এবং ফোরকানিয়া মাদরাসা শিক্ষকদের মাসিক সম্মানি বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।