ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীর ১৯ সেপ্টেম্বরের খবর অনুযায়ী বলা যায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মৃত্যু এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই দেড়শর কাছাকাছি লোক আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগীদের সেবা দিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চাপ বাড়ছে। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও মিলছে না কেবিন কিংবা সাধারণ বেড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মধ্যেও ওষুধ ও স্যালাইন নিয়ে চলছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি। ওষুধের দাম দুইগুণতিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি বছরের রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে সেই সংখ্যা ৭ হাজার ৯৬৭ জন। কেবল চলতি সেপ্টেম্বরেই আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৮০ জন। সেপ্টেম্বরে মারা গেছেন ১৫ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৬৮ রোগী।

অনুকূল আবহাওয়া, জনঘনত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, আগামী একদেড় মাস পরিস্থিতি খারাপ থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কলকাতাবাসী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও আমরা তা পারিনি। বিষয়টি দুঃখজনক। দেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ স্বল্পতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। দুঃখজনক হলো, বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহারে কর্তৃপক্ষের জোরালো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়; বরং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে দায়সারা মনোভাবই পরিলক্ষিত হয়। দুর্বল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কারণে বছরব্যাপী মানুষকে কতভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা বারবার আলোচনায় আসে।

সরকারি হাসপাতালে চাহিদা অনুযায়ী শয্যা, চিকিৎসা ও পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে না পেরে অনেক ডেঙ্গু রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন। সেখানেও ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শুধু তা নয়, সেখানেও শয্যা নেই। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপায় হলো কার্যকরভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা। আর এ মুহূর্তে করণীয় হলো, ডেঙ্গু আক্রান্ত সাধারণ রোগীরা যাতে সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সেবা পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের নেওয়া পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়, এক্ষেত্রে বহু ত্রুটিও রয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কিন্তু জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। কীটতত্ত্ববিদরা মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার কথা বলেন। এজন্য প্রথমত, চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। কেননা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মশা বেশি জন্মায়। দ্বিতীয়ত, জৈবিক পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে কোথায় কোথায় মশা বেশি, কোন ধরনের মশার উপদ্রব বেশি এবং এ মশার জন্য কোন ওষুধ কতটুকু ছিটাতে হবে, তা নির্ণয় করে ওই জায়গায় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। যেন এসব জায়গায় নতুন করে মশা জন্মাতে না পারে। এছাড়া মশার অতিরিক্ত প্রজনন বন্ধের জন্য জলাশয়ে মাছ, হাঁস ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, রাসায়নিক ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবশেষ সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ চারটিকে একত্রে কীটতত্ত্ববিদদের মতে ‘সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা’ বলা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ঢাকা শহরে বসবাসরতদের ঝুঁকি বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ডেঙ্গুতে রাজধানীর সব বাসিন্দা আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে মনোযোগী হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে নাগরিকদের সচেতনতাও প্রত্যাশা করেন তাঁরা। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে চলবে না, কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধওয়াল্টার স্কট : কবি ও ঔপন্যাসিক